Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ নিষ্ক্রিয়, খনি বন্ধে অনড় ইসিএল

প্রশাসনকে বেঁধে দেওয়া চার দিনের সময়সীমার মধ্যে এক দিন পার। তার মধ্যেও খনি-কর্তাকে মারধরে অভিযুক্ত শাসকদলের শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই রানিগঞ্জের জেকে নগর খনি বন্ধের সিদ্ধান্তে আরও কড়া অবস্থান নিল ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)। বুধবার সকালে ওই কোলিয়ারিতে আরও একটি নোটিস ঝুলিয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, খনি বন্ধ হতে তিন দিন বাকি। যাঁরা এখনও কোথায় বদলি নিতে চান তা জানাননি, তাঁরা যেন দ্রুত আবেদন করেন।

চুনুলাল মিশ্র।  নিজস্ব চিত্র।

চুনুলাল মিশ্র। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

প্রশাসনকে বেঁধে দেওয়া চার দিনের সময়সীমার মধ্যে এক দিন পার। তার মধ্যেও খনি-কর্তাকে মারধরে অভিযুক্ত শাসকদলের শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই রানিগঞ্জের জেকে নগর খনি বন্ধের সিদ্ধান্তে আরও কড়া অবস্থান নিল ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)।

বুধবার সকালে ওই কোলিয়ারিতে আরও একটি নোটিস ঝুলিয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, খনি বন্ধ হতে তিন দিন বাকি। যাঁরা এখনও কোথায় বদলি নিতে চান তা জানাননি, তাঁরা যেন দ্রুত আবেদন করেন। মারধর ও হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত আইএনটিটিইউসি নেতা চুনুলাল মিশ্রর বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ।

এ দিন জেকে নগরে খনি আধিকারিক ও সব শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংযুক্ত পরামর্শদাতা কমিটি একটি বৈঠক করে। সেখানে আধিকারিকেরা খনি বন্ধের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। জেকে নগর কোলিয়ারি যার অন্তর্গত, সেই সাতগ্রাম এরিয়ার সংযুক্ত পরামর্শদাতা কমিটি আজ, বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবে। এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে খনি বন্ধ করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না।”

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, চুনুলালের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত তিনটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে প্রথমে খনির ম্যানেজার বি কে সিংহকে মারধর, তার পরে ফোনে এক আধিকারিককে হুমকি, শেষে বি কে সিংহকে এসএমএস করে অন্য এক অফিসারকে দেখে নেওয়ার হুমকি। প্রথম ঘটনায় থানায় ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন নিয়েছেন চুনুলাল। সেটির ক্ষেত্রে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। কিন্তু পরের দু’টি অভিযোগে এখনও পর্যন্ত পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ খনির আধিকারিকদের। তাঁরা জানান, ওই নেতাকে তাঁর সংগঠনের উচ্চ নেতৃত্ব শো-কজ করেছেন। খনি কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাসপেন্ড করেছেন। শুধু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কোল ইন্ডিয়ার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ইসিএল শাখার সভাপতি গোরাচাঁদ বাউড়ির দাবি, “পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকলে কোনও অফিসার ওখানে কাজ করবেন না।”

পুলিশ অবশ্য কোনও গাফিলতি মানেনি। দু’টি হুমকির অভিযোগে এখনও মামলা হয়নি কেন, সে

প্রশ্নে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলব না।” এ দিনই আবার কিছু সঙ্গীকে নিয়ে চুনুলাল জেকে নগরে একটি ছোট মিছিল করেন। খনির ম্যানেজারের বিরুদ্ধে তিনিও পুলিশে একটি পাল্টা অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, “আমি জামিন নিয়েছি, কিন্তু ওই ম্যানেজার নেননি। তাঁকে দুঃখপ্রকাশ করে এসএমএস করেছি বটে, কিন্তু কাউকে হুমকি দিইনি। কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। খনিকর্মীরা অবশ্য আমার সঙ্গে আছেন।”

ইসিএলের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দামোদর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য সাফ কথা, “বি কে সিংহের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ হয়েছে। যদি তাঁকে জামিন নিতে হয় তবে শুধু জেকে নগর নয়, সাতগ্রাম এরিয়ার কোনও খনিতেই অফিসারেরা কাজ করবেন না।” এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয়বাবুর বক্তব্য, “এই ধরনের ঘটনায় যাতে অভিযুক্ত শাস্তি পায়, সে ব্যাপারে শ্রমিক সংগঠনগুলিকেও দায়িত্ব নিতে হবে।”

তবে তৃণমূল প্রভাবিত কয়লাখনি শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক হরেরাম সিংহের দাবি, “আইনের চোখে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যায় না। তবে অভিযুক্ত নেতাকে আমরা শো-কজ করেছি। আমরা চাই খনি যেন খোলা থাকে। যদি আধিকারিকেরা জোর করে তা বন্ধ করেন, আমাদের কিছু বলার নেই।” ইসিএলের এই অবস্থানকে অবশ্য সমর্থন করেছেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর অভিযোগ, “রাজ্যে শিল্প সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ইসিএল অফিসারেরা যে কোনও চাপের কাছে মাথা নত করেননি, তাতে আমি খুশি।”

খনিতে আধিকারিকদের হেনস্থা নতুন নয়। কয়েক বছর আগে জেকে নগর খনিতেই এক এজেন্টকে নিগ্রহের অভিযোগ হয়। সে যাত্রায় অভিযুক্তেরা ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি মিটে গিয়েছিল। জামুড়িয়ার পরাশিয়ায় কয়লা চেয়ে না পাওয়ায় বছর দু’য়েক আগে এক খনিকর্তাকে গ্রামে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে কিছু খনিকর্মী ও এলাকাবাসী। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করলেও খনি কয়েক মাস বন্ধ রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক বছরে নানা সময়ে ঝাঁঝরা, বাঁকোলা, নিমচা কোলিয়ারিতেও আক্রান্ত হয়েছেন আধিকারিকেরা।

ইসিএলের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, আগের ঘটনাগুলিতে পুলিশ-প্রশাসন কিছু না কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। তবু আধিকারিক-নিগ্রহ ঠেকানো যাচ্ছে না। ইসিএল সূত্রে জানা যায়, এই জেকে নগর খনিতে উন্নত মানের প্রচুর কয়লা মজুত রয়েছে। খনিগর্ভও শ্রমিক-কর্মীদের জন্য নিরাপদ। কাজ করেন ১২৪৮ জন। সম্প্রতি বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে এসেছে এই রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা। তাই এখন আর কারও চাপের মুখে মাথা নোয়াতে নারাজ তাঁরা, জানাচ্ছেন অফিসারেরা।

সহ-প্রতিবেদন: সুশান্ত বণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE