নিচু ও মাঝারি স্তরে বাম কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ যে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকছে, সে কথা জানা ছিল আগেই। জেলা সম্মেলনে এ বার সিপিএম স্বীকার করে নিল, শহর ও মফস্সলে বিজেপি-র সমর্থন বৃদ্ধি তাদের কাছে উদ্বেগজনক। তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত সাধারণ মানুষের একটা অংশ বাঁচার তাগিদেই বিজেপি-তে যাচ্ছেন।
রবিবার থেকে মেদিনীপুরে শুরু-হওয়া সিপিএমের ২২তম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনে বিজেপি-র উত্থান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই দলের জনসমর্থন কমলেও গত লোকসভা নির্বাচনে জেলায় তারা ভোট বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ এই দল নিজেদের অনুকূলে আনার চেষ্টা করছে। শহর ও গঞ্জ এলাকায় এদের গণ-সমর্থন বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। তৃণমূলের সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু সাধারণ মানুষ বাঁচার তাগিদে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।’ দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে সিপিআইয়ের জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনেও একই কথা ছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে বিষয়টি উঠে এলেও আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে না-পারা নিয়ে বাম কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ অবশ্য সব জেলাতেই কম-বেশি প্রাসঙ্গিক।
কিন্তু বামেদের প্রতি আস্থা না রেখে আক্রান্তরা বিজেপি-তে যাচ্ছেন কেন? সিপিএমের প্রতিবেদনে তার নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলেও জেলা সম্মেলনের আলোচনায় তার জবাব মিলছে। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের সামনেই বেশ কিছু এলাকার জোনাল নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন, আক্রান্তদের পাশে জেলা নেতারা দাঁড়াচ্ছেন না। এর ফলেই বাঁচার জন্য কেউ কেউ বিজেপি-তে যাচ্ছেন। মতাদর্শগত কারণে নয়।
জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনেও সব ক্ষেত্রে পাশে না দাঁড়াতে পারার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটা ঠিক যে, বিভিন্ন মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে আমাদের শত শত কমরেড ও তার পরিবারের লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব ক্ষেত্রে জেলা পার্টির পক্ষ থেকে যথাযথ হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা করা গিয়েছে, এ কথা বলা যাবে না। সমস্যার ব্যাপকতা এবং জেলা কমিটির সীমাবদ্ধতার ফলে সব ক্ষেত্রে যথাযথ নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি’।
সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, জেলা সম্মেলনে যে পর্বের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে এই আলোচনা হচ্ছে, তা গত লোকসভা নির্বাচনের আগে-পরের। গত কয়েক মাসে অবশ্য ছবিটা কিছুটা পাল্টেছে। কোথাও দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হলে বাম নেতৃত্বের প্রতিনিধিদল সেখানে যাচ্ছে। সম্মেলনের প্রতিবেদনেও তাই বলা হয়েছে, ‘স্বাভাবিক ভাবে যে হেতু এই আক্রমণ ওরা (তৃণমূল) বন্ধ করবে না, তাই নতুন জেলা কমিটিকে এ বিষয়ে আরও উন্নত ও ধারাবাহিক ভূমিকা নিতে হবে’।
আক্রান্তদের পাশে জেলা নেতৃত্বের না দাঁড়ানো প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করেননি সিপিএমের বিদায়ী জেলা সম্পাদক দীপকবাবু। তিনি শুধু বলেন, “হামলা ও মামলার উপরে ভর করে চলা তৃণমূল এত কিছুর পরও প্রতিবাদী কন্ঠকে রুদ্ধ করতে পারেনি। জনগণের উপরে ভরসা রেখে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথেই প্রতিকূলতা অতিক্রম করার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য অনুগামীদের নিয়ে বিজেপি-তে গিয়েছেন। গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক সুকুমার ভুঁইয়াও। নিচু ও মাঝারি স্তরে বহু বাম কর্মী-সমর্থকই এখন বিজেপি-তে ভিড়েছেন। বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, তাঁরা বেছে বেছে ‘ভাল’ লোকেদেরই নিচ্ছেন। বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “অনেকেই আসতে চাইছেন। তবে যাঁরা অন্তরাদেবীদের মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির, আমরা তাঁদেরই নিচ্ছি। আসলে মানুষ বুঝে গিয়েছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে একমাত্র বিজেপি-ই লড়তে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy