বিএসএনএলের পরিষেবায় তুষ্ট নন কোনও গ্রাহকই। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা পেশায় সেতার বাদক ঈশানচন্দ্র মিশ্র বলেন, সরকারি পরিষেবা বলে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ বার আর নয়, বিএসএনএল ছেড়ে দেব।” কলেজ ছাত্রী অনিন্দিতা সরকারের বক্তব্য, “আমরা তো আর চাকরি করি না। তাই খরচের কথা মাথায় রাখতে হয়। এখন বিএসএনএলের পরিষেবার হাল এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই ছেড়ে দেব।”
শুধু গ্রাহকেরাই নন, বিএসএনএলের আউলেটগুলির মালিকদেরও ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা’। তাঁদের অভিযোগ, দোকানে বসলেই রোজ গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। ইন্টারনেট দেখার ক্ষেত্রেও প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। গ্রাহকদের বক্তব্য, বিজ্ঞাপনে কর্তৃপক্ষ যে সব সুবিধার কথা বলছেন, কার্যক্ষেত্রে তার কোনওটাই গ্রাহকেরা পাচ্ছেন না। কলকাতা থেকে কল্যাণী, সব জায়গাতেই আউটলেটের ব্যবসায়ীরা একই কথা বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দোকান খুলতে না খুলতেই পরিষেবা না পেয়ে গ্রাহকেরা চলে আসছেন দোকানে। কিন্তু কিছুই করার নেই। এ বার ব্যবসাটাই বন্ধ করে দিতে হবে।
কিন্তু যে সময়ে ৪-জি পরিষেবা এসে পড়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে কেন এমন অবস্থা বিএসএনএলের? যে হারে বসত এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে বিএসএনএলের মূল সমস্যা এখন ফোনের টাওয়ার ও অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল কেটে দেওয়া। বিএসএনএলের কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যে ৩০টিরও বেশি টাওয়ার এখন বন্ধ হয়ে রয়েছে। সবই পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে। এই মুহূর্তে বিএসএনএলের হাতে রাজ্যে মোট ১০৮৬টি ২-জি টাওয়ার রয়েছে। রয়েছে আরও ৫৭৫টি ৩-জি টাওয়ার। ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে আরও ১৪৬টি ৩-জি টাওয়ার তৈরির হওয়ার কথা। তার পরে পরিষেবার কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা বিএসএনএল কর্তাদের।
কিন্তু এই মুহূর্তে তাহলে কী সমস্যা রয়েই যাবে? স্থানীয় ভাবে মোবাইলের সমস্যা তৈরির জন্য বিএসএনএল কর্তারা ‘কেব্ল ফল্ট’-কেই দায়ি করছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তা সারনোর জন্য বা অন্য কোনও কারণে কেব্ল লাইন কেটে গেলে সমস্যা হচ্ছে পরিষেবার। বিএসএনএলের এক কর্তা (মোবাইল) বলেন, “মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক নয়, বিএসএনএল এখন অপটিক্যাল ফাইবার কেব্লের মাধ্যমে তরঙ্গ আদানপ্রদান করে। তাই ওই কেবল কেটে গেলে সার্ভিস তো বন্ধ হবেই।”
কিন্তু কেব্ল রক্ষার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ? বিএসএনএলের কর্তারা জানান, ভিজিল্যান্স বাড়ানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলাও করা হচ্ছে। তদন্তে করতে বলা হয়েছে পুলিশকেও।” কিন্তু পরিষেবা ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় গ্রাহকের সংখ্যাও যে কমে যাচ্ছে সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন বিএসএনএল কর্তারা। তাঁরা বলছেন, “আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।”