পরিবহণ দফতর অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত নয়। এক পরিবহণ কর্তার কথায়, “অতীতেও বাস মালিকরা টানা ধর্মঘটের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, তা দেখা সরকারের কাজ। সেই মতো আগেও পদক্ষেপ করেছে সরকার। পরেও করবে।” ঘরোয়া আলোচনায় পরিবহণ কর্তাদের একাংশের দাবি, সরকার না চাইলে মালিকপক্ষ টানা ধর্মঘট করতে পারবে না।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সরকার জোর করে ধর্মঘট তুলে দিতে পারে। কিন্তু বাস মালিকদের তো জোর করে রাস্তায় বাস নামাতে বাধ্য করতে পারেন না।” তাঁর প্রশ্ন, “লোকসানের বহর মাথায় নিয়ে ক’দিন বাস চালানো সম্ভব? পরিবহণ শিল্পের স্বার্থেই সরকারের উচিত বাসভাড়া বাড়ানো।” কিন্তু বার বার টানা ধর্মঘটের ঘোষণা করেও কেন তাঁরা দু’দিনের বেশি তা চালাতে পারেন নাসেই প্রশ্নের কোনও জবাব দিতে পারেননি মালিকরা।
তবে পরিবহণ শিল্প যে সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রীও। এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানের শেষে তিনি বলেন, “এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে দিল্লি যে ভাবে ডিজেলের দাম বাড়াচ্ছে, তাতে বাস মালিকদের সমস্যা হচ্ছে। তা-ও মালিকদের অনুরোধ করব, ওঁরা যেন এটা বোঝেন যে দাম বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে আমাদের কিছু করার নেই।”
ভাড়া বাড়ানো নিয়ে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং তিনি যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন তাও জানিয়ে দেন মদনবাবু। বাসমালিকদের প্রতি তাঁর অনুরোধ,“একটু সমস্যা হলেও যেন পরিষেবাটা চালু থাকে। অন্য কোনও ভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় কি না, সেটা আমরা দেখব।”
পরিবহণ দফতরের দাবি, রাজ্যের পরিবহণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্য সীমিত ক্ষমতার মধ্যেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর সরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলি চালাতে ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। বাস ভাড়া বাড়ালে সরকারি সংস্থারও আয় বাড়বে, কমবে ভর্তুকির পরিমাণ। তাও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে সরকার ভাড়া বাড়াতে চাইছে না। দফতরের কর্তারা জানান, বেসরকারি বাসের মালিকদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কী সেই বিকল্প, পরিবহণ মন্ত্রী তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি।
রাজ্য সরকারের একটি অংশের মতে, লোকসভায় ভাল ফল হলেও কেন্দ্রে সরকার গঠনের প্রশ্নে তৃণমূলের কোনও ভূমিকা থাকছে না। ফলে রাজনৈতিক ভাবে বিরাট কিছু সুবিধা হয়নি শাসক দলের। তা ছাড়া সামনের বছরের মধ্যে কলকাতা-সহ বেশ কয়েকটি পুরসভার নির্বাচন। সে কথা মাথায় রেখে এখন আর কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।