তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এটা পুরোটাই প্রশাসনিক ব্যাপার। দল হিসাবে তৃণমূলের ভূমিকা এখানে নেই। এর মধ্যে আমাদের দলকে জড়িয়ে দিয়ে অধীরবাবুই নোংরা রাজনীতি করতে চাইছেন!”
নতুন দু’জন কনস্টেবল অধীরের নিরাপত্তার কাজে যোগ দিতে গেলে জেলা কংগ্রেসের তরফে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশের দাবি। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “নতুন দুই কনস্টেবল আমার সঙ্গে দেখা করতে এলে আমি তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ, পুরনো দু’জনকে ছাড়ার পাশাপাশি ওই নতুন দু’জনকে গ্রহণ করবেন যিনি, তিনি এখন বহরমপুরে নেই। তাঁর অনুপস্থিতিতে আমার পক্ষে নতুন দু’জনকে ‘রিসিভ’ করা অসম্ভব!” সেই সঙ্গে অশোকবাবুর অভিযোগ, আস্থাভাজন ওই দুই কনস্টেবলকে পুনর্বহাল করার ব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন অধীর। কিন্তু, পুলিশ সুপার সেই চিঠির উত্তর দেননি। অধীরের মন্তব্য, “এটা চূড়ান্ত অসভ্যতা।”
বস্তুত, মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে অধীর চৌধুরীর সম্পর্ক চিরকালই অত্যন্ত ‘মধুর’! দু’জনের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, জেলাশাসকের বাংলো ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ওই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অধীরের বিরুদ্ধে মামলা করে। দু’বছর আগে তৃণমূলকর্মী কামাল শেখ খুন হন। অভিযুক্তদের প্রাথমিক তালিকায় অধীরের নাম না থাকলেও গত বছর মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালতে পুলিশ যে চার্জশিট জমা দেয়, তাতে অধীরের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর দু’মাসের মধ্যেই কান্দির মহালন্দী হোমে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করার পাশাপাশি সরকারি কর্মীদের হুমকি ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে অধীরের বিরুদ্ধে ফের মামলা করে পুলিশ।
এই সব কিছুই হয়েছিল হুমায়ুন কবীর এসপি থাকাকালীন। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনের মুখে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে হুমায়ুন কবীরকে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে চলে যেতে হয়। তার বদলে নতুন পুলিশ সুপার হন সৈয়দ ওয়াকার রাজা। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত ২০ মে ফের মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব বুঝে নেন হুমায়ুন। আর তার তিন দিনের মধ্যেই অধীর চৌধুরীর নিরাপত্তারক্ষী বদলকে কেন্দ্র করে শুরু হল নতুন দ্বৈরথ।
অধীরের দাবি, “যে পুলিশ সুপারকে কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট বলে সরিয়ে দিল, তাঁকেই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদে পুনর্বহাল করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছেন।” হুমায়ুন কবীরের অবশ্য বক্তব্য, “আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এটা রুটিন বদলি। ওই দু’জন আট বছর ধরে অধীর চৌধুরীর নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছিলেন। তাঁদের বদলি করা নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করা হচ্ছে। এমন তো নয় যে, সাংসদের নিরাপত্তারক্ষী তুলেই নেওয়া হয়েছে!”