ক্ষমতায় আসার আগে শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করার ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। দীর্ঘ বাম শাসনে শিক্ষার ‘অনিলায়ন’-এ ভুক্তভোগী বাংলা সেই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে চাইছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভাঙতে দেরি হয়নি। ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেই রাজনীতিরই আস্ফালন। তার উপরে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান-পদে শিক্ষামন্ত্রীকে বসাতে চাইছে তৃণমূল সরকার। এর মাধ্যমে সরকার আসলে শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে চলেছে বলেই মনে করছে শিক্ষা শিবির।
এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভিন্ন সুরে গাইছে মমতার সরকার। বাম জমানার মতোই স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতিতে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-অনুগামীদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এমনকী বহু ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা না-থাকলেও নিছক শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী-অনুগামী হওয়ার সুবাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রেও বাম আমলের মতো তৃণমূল শাসনেও দলীয় আনুগত্য বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম নীতি নির্ধারক সংস্থা উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের পদে মন্ত্রীকে বসিয়ে দিয়ে শিক্ষায় রাজনীতিকরণের প্রক্রিয়াকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেওয়া হল বলেই তাঁদের ধারণা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর রূপরেখা মেনে ১৯৯৪ সালে উচ্চশিক্ষা সংসদ তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। এই সংক্রান্ত আইনে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীকেই সংস্থার চেয়ারম্যানের পদে রাখা হয়। কিন্তু ২০০৬ সালে, সপ্তম ফ্রন্টের আমলে দায়িত্ব পেয়ে এই ধারায় পরিবর্তন আনেন তৎকালীন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী। আইন সংশোধন করে সংস্থার চেয়ারম্যানের পদ থেকে মন্ত্রীকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় শিক্ষাবিদকে। সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান শিক্ষাজগতের অনেকেই।