হাওড়ার দিকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এখন যে অবস্থায়।
এ দিন নির্মাণকারী সংস্থার পক্ষে আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, রাজ্য সরকার সহযোগিতা না করায় সংস্থা কাজ শুরু করতে পারছে না। বারবার রাজ্য সরকারকে ও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তাঁদের কাছ থেকে কোনও প্রয়োজনীয় নির্দেশ আসেনি। এক দিকে, শিয়ালদহ পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু মহাকরণ থেকে হাওড়ার দিকে অত্যন্ত দামি যন্ত্রপাতি নিয়ে এসেও কাজ করতে পারেনি সংস্থা। এই কাজ করতে না পারার মূল কারণ রাজ্য সরকারের অসহযোগিতা।
২০০৮ সালের ২৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতর ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ২০০৯ সালের ৪ জুলাই দিল্লির মতো করে রাজ্য সরকার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করতে সম্মত হয়। ঠিক হয়, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত এই মেট্রো যাবে। এর মধ্যে উপর দিয়ে যাবে ৮.৯ কিলোমিটার ও মাটির নীচ দিয়ে যাবে ৫.৭৭ কিলোমিটার। পুরো প্রকল্পে খরচ হবে ৪৬৭৬ কোটি টাকা।
স্থির হয়, এই প্রকল্পে স্টেশন হবে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ, করুণাময়ী, বিকাশ ভবন, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যালস, ইএম বাইপাস, সল্টলেক স্টেডিয়াম, নারকেলডাঙা মেন রোড, ফুলবাগান, শিয়ালদহ, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মহাকরণ, ব্রেবোন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, হাওড়া স্টেশন ও হাওড়া ময়দানে। সেন্ট্রাল স্টেশনটি হবে জংশন স্টেশন। এই চুক্তিতে কাজ শুরু হয়। সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মোটামুটি সন্তোষজনক বলে আদালতে দাবি জানিয়েছে ওই সংস্থা। ঠিক ছিল, ২০১৪ সালে ২৪ মার্চ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে। পরবর্তী কালে তা বাড়িয়ে করা হয় ২০১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। কিন্তু বর্তমানে হাওড়ার দিকে কাজের যা হাল, তাতে ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ভার নিয়েছে রেল।
নির্মাণকারী সংস্থা হাইকোর্টে আরও জানিয়েছে, গঙ্গার নীচ দিয়ে লাইন বসানোর জন্য টানেল বোরিং মেশিন সার দিয়ে গঙ্গার ধারে পড়ে রয়েছে। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় সংস্থা কাজ করতে পারছে না। আবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে হাওড়া ময়দান এলাকায় কাজ করার জন্য রাজ্য সরকার কিছু জমি দেয়। কিন্তু এখনও ৪০ শতাংশ মুক্ত জায়গা পাওয়া যায়নি। সেই কারণেই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। হাওড়া স্টেশনটি তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ জমি মিলেছে। বাকি ১০ শতাংশ এখনও মেলেনি। মহাকরণ স্টেশনের জন্য এখনও জমি পাওয়া যায়নি। মূলত সরকারি সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রতা এবং সরকারের অসহযোগিতার জন্য ইতিমধ্যেই সংস্থার ১১৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে দাবি।
কোথায় কোথায় এই জট, যার জন্য কাজ এগোচ্ছে না? তা-ও জানিয়েছে সংস্থাটি। কাজ শুরু করার জন্য যন্ত্রপাতি আছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে যে কাজগুলি করে দেওয়া দরকার, তা এখনই করা প্রয়োজন। ওই সংস্থার বক্তব্য, সরকারি সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হবে। তাঁরা দেখিয়েছেন, এক-একটি সিদ্ধান্তের জন্য তাঁদের ৩০০ থেকে ৫০০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিভিন্ন স্টেশন তৈরির জন্য জমির ব্যবস্থা এখনও হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আইনজীবী কৌশিক চন্দ বলেন, দিল্লিতে নতুন সরকার এসেছে, আশা করা যায় এখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী থাকলেও তিনি আদালতে কিছু মন্তব্য করেননি। উপস্থিত থাকলেও কোনও মন্তব্য করেননি মেট্রোর আইনজীবীও।
এ দিন দীর্ঘ শুনানির পরে বিচারপতি বলেন, “আমাদের সবার প্রথমে মনে রাখতে হবে, এটা জনস্বার্থমূলক কাজ। আইনি লড়াই এ ক্ষেত্রে মানায় না। কলকাতার মানুষের দিকে তাকিয়ে, কলকাতার পথের পরিমাণের অবস্থা মাথায় রেখে সবাইকে সঠিক সময়ের মধ্যেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শেষ করায় সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে ইস্ট-ওয়েস্ট আমাদের গর্ব এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প। আর আলোচনার মধ্যে দিয়ে পথ খুঁজে পাওয়া যায় না, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।” সব পক্ষকেই আন্তরিক ভাবে দু’সপ্তাহের মধ্যে পথ বার করে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেন তিনি।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “আদালতের রায় এখনও হাতে আসেনি। তবে আদালতের নির্দেশ অবশ্যই মানব। আমরা সব সময়েই আলোচনায় রাজি। কিন্তু রেলই আলোচনায় সাড়া দেয়নি।” রেল বোর্ডের কর্তারা জানান, আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি না পাওয়া পর্যন্ত এই নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। রেল মন্ত্রকের দাবি, রাজ্য সরকার প্রকল্পের জন্য জমি দিলেই কাজে গতি এসে যাবে। বহু বার বৈঠক হয়েছে। লাভ হয়নি। জমি দিলেই রেল এই কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
—নিজস্ব চিত্র।