শিল্প নেই। শুধু তোলাবাজির দাপট। শিক্ষায় নৈরাজ্য। আইন-শৃঙ্খলা শিকেয়। নানা সমস্যায় ডামাডোল রাজ্য জুড়ে!
শাসক দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যা দেখলে মনে হবে, এ কোন পশ্চিমবঙ্গ! তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের কলমে শিক্ষা, শিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের যে ছবি ফুটে উঠেছে, বাস্তবের সঙ্গে তার আসমান-জমিন ফারাক। এক দিকে লাগামহীন সব দাবি কল্পনাকেই বাস্তব বলে দেখাতে চেয়েছে। বাকিটা বিনোদন! কোথাও কোথাও উদ্ভট রসের বিনোদনও বটে!
তাঁর সাড়ে তিন বছরের রাজত্বে পশ্চিমবঙ্গকে মেলা আর উৎসবে যেমন মাতিয়ে রাখতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর দলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যাতেও তেমনই আনন্দ-কলরব তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি এবং তাঁর মন্ত্রীরা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নিজের লেখায় ফের দাবি করেছেন, ‘ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে ইমারত গড়ার কাজটা শুরু করতে হয়েছে’ তাঁকে। কিন্তু এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা তাঁর সেই কাজের মর্যাদা দিচ্ছে না। কুৎসার ঝড় বিদেশেও পৌঁছেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। তাই মুখ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন, তাঁর সিঙ্গাপুর সফরে শিল্পপতি, অফিসার ও বাংলার ‘প্রকৃত সাংবাদিকদের’ একত্রে নিয়ে গিয়ে প্রবাসীদের কাছে ‘প্রকৃত সত্য ও সঠিক তথ্য’ তিনি তুলে ধরেছেন। কারণ তাঁর কথায়, ‘বাংলা মা-কে বিশ্বের দরবারে সম্মানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদের স্বপ্ন’। মুখ্যমন্ত্রী এবং দলনেত্রীর সুরেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, শিক্ষায় রাজ্য প্রথম সারিতে উঠে আসছে! রোজ রোজ কলেজে-কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব লঙ্কা-কাণ্ড ঘটে চলেছে, সে সবের ধারপাশ দিয়েও না গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষায় উন্নয়নের ঢাক বাজিয়েছেন! কারিগরি ও জনস্বাস্থ্যমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রেরণায় তাঁর দফতর প্রতি ঘরে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। শিল্প এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র লেখক তালিকায় নেই। কিন্তু পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম রাজ্যের শিল্পায়নের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যেখানে তাঁর দাবি, কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর নেত্রী এক নতুন শিল্পায়ন প্রক্রিয়া চালু করেছেন, যা এর আগে কেউ করেনি! পুরমন্ত্রীর যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রীর নয়া নীতির জেরে নির্মাণ শিল্পে বিকাশ ও সমৃদ্ধির বিকাশ হবে। এর ফলে বালি, সিমেন্ট পাথর, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং রঙের ব্যবসার উন্নতি হবে। তবে সাড়ে তিন বছরে নতুন বিনিয়োগ কত হয়েছে বা বড় শিল্প কিছু এসেছে কি না, তার উল্লেখ লেখায় নেই। হয়তো প্রত্যাশিত ভাবেই! যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দেখান, তাঁর দফতরও প্রচারের ঢাক না বাজিয়ে নিঃশব্দে কেমন উন্নয়নের কাজ করছে। আর জ্যোতি বসু-অশোক ঘোষদের বিখ্যাত উক্তি তুলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের আর্জি, ‘মা-মাটি-মানুষের সরকারকে নিজের চোখের মণির মতো রক্ষা করুন’!