Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বনগাঁয় আসছেন অধীর, ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কংগ্রেসের

সামনেই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। বনগাঁর পুরভোটও সামনে। তার আগে নিজেদের সংগঠনকে ফের শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হল বনগাঁ শহর কংগ্রেস কমিটি। দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর বনগাঁ শহরের খেলাঘর ময়দানে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী কর্মিসভা করতে আসছেন।

রাস্তার পাশে দেওয়াল লিখে প্রচার কংগ্রেসের। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার পাশে দেওয়াল লিখে প্রচার কংগ্রেসের। নিজস্ব চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৫
Share: Save:

সামনেই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। বনগাঁর পুরভোটও সামনে। তার আগে নিজেদের সংগঠনকে ফের শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হল বনগাঁ শহর কংগ্রেস কমিটি। দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর বনগাঁ শহরের খেলাঘর ময়দানে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী কর্মিসভা করতে আসছেন।

প্রদেশ সভাপতি হিসাবে এই প্রথম বনগাঁয় আসছেন অধীর। কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন, কর্মিসভাকে যাতে জনসভায় পরিণত করা যায়। সভা ঘিরে কর্মীদের মধ্যেও যে তত্‌পরতা দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেসের মধ্যে তা বহু দিন দেখেননি বনগাঁবাসী। বহু দিন পরে শহরের দেওয়ালেও কংগ্রেসের লেখা দেখা যাচ্ছে। মাইকে প্রচার চলছে। ছোট ছোট পথসভা হচ্ছে। অটোতেও ব্যানার বেঁধে চলছে প্রচার। পথ চলতি সাধারণ মানুষও যে দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে ফিরে তাকাচ্ছেন। অধীরের সভার মঞ্চ করা হয়েছে বনগাঁ পুরসভার প্রয়াত কংগ্রেস চেয়ারম্যান পরিতোষ নাথের স্মরণে।

বস্তুত, শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ, দলের নেতা সাধন ঘোষ, বিকাশ গোর, দেবু চৌধুরী, অসীম দত্তের মতো হাতে গোনা কয়েক জন এখনও বনগাঁয় কংগ্রেসের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রেখেছেন। তা বাদে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকের উপস্থিতি দিন দিন তলানিতে ঠেকেছে, সে কথা ঘরোয়া ভাবে মানেন দলেরই একাংশ। কৃষ্ণপদবাবু বলেন, “প্রদেশ সভাপতির সভা ঘিরে দলের অল্পবয়সী কর্মীদের মধ্যে উত্‌সাহ তৈরি হয়েছে। বসে যাওয়া বয়স্ক নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও ফিরে আসছেন। যা অবশ্যই দলের পক্ষে আশার কথা।”

রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার আগে বনগাঁ শহর ছিল কংগ্রেসের খাস তালুক। এমনকী, তৃণমূল তৈরির পরবর্তী কয়েক বছরেও এখানে কংগ্রেস তাদের শক্তি ধরে রাখতে পেরেছিল। ২০১০ সালের বনগাঁ পুরসভার নির্বাচনেও কংগ্রেস ২২টি আসনের মধ্যে ৫টি আসন পেয়েছিল। তৃণমূল সেখানে পেয়েছিল ৬টি আসন। ৫ জন কংগ্রেস ও এক জন নির্দল কাউন্সিলের সমর্থন নিয়ে তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। গত লোকসভা ভোটের ফলাফলে তার প্রভাবও পড়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী ইলা মণ্ডল বনগাঁ উত্তর বিধানসভা এলাকা থেকে ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৪ হাজারের মতো। বিধানসভা ভোটের পর থেকে কংগ্রেস তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিজেদের অনুকূলে ধরে রাখতে পারেনি। বড় অংশটাই চলে গিয়েছে তৃণমূলে। বহু দিন পরে কংগ্রেসের বড় মাপের কোনও নেতা সভা করতেও আসেননি বনগাঁয়। অতীতে এখানে রাজীব গাঁধী, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মতো নেতারা সভা করে গিয়েছেন।

ভূপেন শেঠের মতো দাপুটে কংগ্রেস নেতা এক সময়ে বনগাঁ থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে জিতে রাজ্য রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করেছেন। ২০০৬ সালে তিনি তৃণমূলের টিকিটেও বিধানসভা ভোটে জিতেছিলেন। ওই বছর মারাও যান। ভূপেনবাবুর দলত্যাগও বনগাঁয় গোটা দলের কাছেই ছিল বড় ধাক্কা।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বনগাঁ শহরে কংগ্রেসের শক্তি ক্ষয়ের একটি বড় কারণ, বিভিন্ন সময়ে বিধানসভা বা দু’টি বিধানসভার উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী না দিয়ে তৃণমূল সমর্থন করা। ফলে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নেমে অনেকে পরবর্তী সময়ে তৃণমূলেই ঢুকে পড়েছে। কৃষ্ণবাবু বলেন, “কংগ্রস এ বার পুর ভোটে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেবে। লোকসভার উপনির্বাচনেও আমরা আগের থেকে ভাল ফল করব। অনেক কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক যাঁরা তৃণমূলে গিয়েছিলেন, তাঁদের আশাভঙ্গ হয়েছে। তাঁরা ফের কংগ্রেসে ফিরতে শুরু করেছেন।”

সব দেখেশুনে তৃণমূল নেতৃত্বের অনেককেই বলতে শোনা গেল, ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে কংগ্রেস। গোটা রাজ্যেই ওদের কোনও জনভিত্তি নেই। এখানে বড় নেতাকে এনেও বিশেষ কোনও সুবিধা করতে পারবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bongaon simanta moitra congress southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE