বেপরোয়া অটো আর ম্যাজিক গাড়ির দাপটে জেরবার ডায়মন্ড হারবার শহরের সাধারণ মানুষ।
ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের ঢোকার মুখ থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে নতুনপোল। যাত্রী ওঠানো নামানোর জন্য সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে গাড়িগুলি। অথচ ওই রাস্তার সামনে দিয়েই ফকিরচাঁদ কলেজে যাওয়ার রাস্তা। অফিস টাইমে সেখানে যাওয়ার জন্য নাকাল হতে হচ্ছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রথমে স্টেশনের সামনে, তার পরে বাসস্ট্যান্ডের সামনে ও সব শেষে অটোর যানজট পেরিয়ে কাকদ্বীপ থেকে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতাল বা কলকাতার দিকে মরণাপন্ন রোগী নিয়ে যাওয়াও কঠিন। নতুনপোলের মুখে সরু রাস্তায় আটকে পড়ছে অ্যাম্বুল্যান্সও।
এমনিতেই ডায়মন্ড হারবার শহরে কোনও বড় বাসস্ট্যান্ড নেই। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে বড় বাস দাঁড়ানোয় যানজট লেগে থাকে এমনিতেই। তার উপর কয়েক বছরে শহরের বুকে বাড়তি সমস্যা তৈরি করছে ডিলাক্স অটো। অফিস টাইমে চারটি রুটের অটো যাত্রী তোলার জন্য নতুনপোলের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকায় আটকে থাকে জাতীয় সড়কও। অথচ ওই রাস্তা দিয়ে প্রচুর গাড়ি কলকাতা এবং কাকদ্বীপের দিকে যাতায়াত করে। এছাড়া মাছের মরসুম বলে এমনিতেই ওই এলাকায় এখন গাড়ি চলাচল বেশি। তার উপর অটোর দাপটে রোজই যানজট হওয়ায় তিতিবিরক্ত সাধারণ মানুষ।
সরিষা থেকে ডায়মন্ড হারবার হয়ে কুলপি যাতায়াত করেন প্রদীপ গায়েন। তাঁর কথায়, ‘‘একেক সময় নতুনপোল পেরিয়ে হাসপাতালের দিকে চলে যায় গাড়ির লাইন। সবই এই অটো আর ম্যাজিকগাড়ির জন্যই হয়। বেশিরভাগ সময় ট্রাফিক পুলিশ থাকে না।” অথচ তিন রাস্তার এই মোড়ে একটি ট্রাফিক স্ট্যান্ড রয়েছে। বিকেল পর্যন্ত পুরসভা এবং পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল থাকার কথা সেখানে। লালপোল অটোস্ট্যান্ড এবং হাসপাতাল মোড় অটোস্ট্যান্ড থেকে নূরপুর, সরারহাট, রায়চক, তালাণ্ডা, আমতলার মতো এলাকায় প্রায় ১০টি রুটে ৪০০টি অটো ও প্রায় ২৫টি ম্যাজিক গাড়ি চলে। লালপোল স্ট্যাণ্ড থেকে নতুনপোল ট্রাফিক স্ট্যাণ্ডের কাছে এসে সেগুলি একে একে জড়ো হয়। লাইন দিয়ে শুরু হয় যাত্রীদের অপেক্ষা। আসন ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত এই অটোচালকদের দাপট সহ্য করতে হয় সাধারণ মানুষ থেকে এলাকার দোকানদারদের।
লালপোলের সিটু অনুমোদিত ইউনিয়নের নেতা কালিদাস প্রামাণিক বলেন, ‘‘লালপোল থেকে আমাদের ইউনিয়নের অধীনে চলাচলকারী অটো একটি রুটে তিন মিনিট এবং আর একটিতে পাঁচ মিনিট অন্তর ছাড়ে। নতুনপোলের মুখে গিয়ে যাত্রী তোলার জন্য খুব কম সময় দাঁড়ানো হয়। বাসও রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। তবে ব্রিজের ওপারের গাড়ি দু’বার করে এসে যাত্রী তোলার জন্যই মূল সমস্যা তৈরি হয়।’’ কলেজ রোড থেকে ছেড়ে এম-১০ বাস এবং যাত্রী ধরার অপেক্ষায় কিছু ট্যাক্সিও (কনট্রাক্ট ক্যারেজ) যানজটের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এই মোড়ে।
হাসপাতালের মুখ থেকেও ব্রিজ পেরিয়ে একই কায়দায় আসে অটো, ম্যাজিক। ওপার থেকে এপারে নতুনপোল মোড়ে আসা বারণ রয়েছে এই অটো, ম্যাজিকগুলির। এগুলির মধ্যে কিছু অটো চলে এসইউসির নিয়ন্ত্রণে। এসইউসি অনুমোদিত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এটা আগে ঠিক হয়েছিল, হাসপাতালের সামনের অটোগুলি ব্রিজ পেরোবে না। কিন্তু বাম আমলে সিটুর নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন তৃণমূলের ইউনিয়নের অটোগুলি ব্রিজ পার হয়ে যাত্রী তুলছে। আমাদেরগুলি ওই পথে না গেলে মার খেয়ে যাবে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে চালকেরা।’’
তৃণমূল নেতা তথা এলাকার বিধায়ক দীপক হালদার অবশ্য দাবি করেছেন, লালপোল স্ট্যান্ডে আইএনটিটিইউসির যে অটোরিকশাগুলি চলে, সেগুলি দলের অনুমোদিত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘আইএনটিটিইউসির নাম করে চললেও ওই অটো ইউনিয়ন স্বাধীনভাবে চলে। চেষ্টা করছি, যাতে সমস্ত অটো স্ট্যান্ড হাসপাতালের সামনে সরিয়ে ফেলা যায়।’’
ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় অভিযান চালাই। ব্যবস্থা নিই। সমস্যা থাকলে অগস্টে নতুন করে আলোচনায় বসতে হবে পুলিশ প্রশাসন এবং পুরসভা কর্তৃপক্ষকে নিয়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy