Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নদীর ও পারে হতাশা, এ পারে বিসর্জনের উৎসব

এক পারে যখন বিসর্জনে ভারাক্রান্ত মানুষের ভিড়, জৌলুসহীন ও পার তখন খাঁ খাঁ করছে। বিসর্জনের আনন্দে দু’পাড়ের মিলনে যে এখানে বছর কয়েক আগেও আনন্দের বন্যা বইত, এ বারের দৃশ্যে তা বোঝা ভার। ইছামতী নদীতে টাকির পারে হাতে গোনা হলেও অন্তত কয়েকটি প্রতিমা ভাসানের জন্য নৌকোয় তোলা হল। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে সাতক্ষীরার দিকে একটিও প্রতিমা, এমনকী, যাত্রিবাহী নৌকোও শনিবার নদীতে নামল না। নানা বিধি নিষেধের কারণে জমিদার বাড়ির প্রতিমাও এ দিন আগে ভাগে বিসর্জন হয়েছে।

ইছামতীতে চলছে ভাসান। নিজস্ব চিত্র।

ইছামতীতে চলছে ভাসান। নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

এক পারে যখন বিসর্জনে ভারাক্রান্ত মানুষের ভিড়, জৌলুসহীন ও পার তখন খাঁ খাঁ করছে। বিসর্জনের আনন্দে দু’পাড়ের মিলনে যে এখানে বছর কয়েক আগেও আনন্দের বন্যা বইত, এ বারের দৃশ্যে তা বোঝা ভার।

ইছামতী নদীতে টাকির পারে হাতে গোনা হলেও অন্তত কয়েকটি প্রতিমা ভাসানের জন্য নৌকোয় তোলা হল। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে সাতক্ষীরার দিকে একটিও প্রতিমা, এমনকী, যাত্রিবাহী নৌকোও শনিবার নদীতে নামল না। নানা বিধি নিষেধের কারণে জমিদার বাড়ির প্রতিমাও এ দিন আগে ভাগে বিসর্জন হয়েছে। ফলে জোড়া নৌকো থেকে প্রতিমা নিরঞ্জনও দেখা হল না দর্শনার্থীদের।

নিজের নিজের দেশের জাতীয় পতাকা নিয়ে, রকমারি পোশাকে সেজে, জাতি-ধর্ম ভুলে এই ভাসানের দিনে দুই প্রতিবেশী দেশের মানুষ এত দিন ইছামতীর বুকে সম্প্রীতির আবহে মিলিত হতেন। একে অপরের দিকে ফুল-মিষ্টি ছুড়ে পরিচয় বিনিময় চলত। দুই সীমান্তেই নদীতে প্রতিমার ভাসান দেখতে দু’দেশের মানুষ জড়ো হতেন। একই সঙ্গে প্রতিমা নিরঞ্জন চলত। এটাই ছিল এখানকার রেওয়াজ। এই দিনের প্রধান আকর্ষণ। যা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষের ঢল নামত।

কিন্তু টাকিতে গত কয়েক বছর আগে দেখা যায়, ভাসানের দিনে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ অবৈধ ভাবে এ পারে ঢুকে পড়ছেন। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে নৌকোডুবি হয়ে এক তরুণ বিজ্ঞানীর মৃত্যু পরে নড়ে বসে প্রশাসন। দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভাসানের দিনে কড়াকড়ির আয়োজন হয়।

বিএসএফের নজরদারি। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

এ দিন টাকিতে ইছামতীর মাঝ বরাবর বিএসএফের জাহাজ ও প্রশাসনের স্পিড বোট দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। নদীর পাড়েও ছিল চোখে পড়ার মতো বিএসএফ পাহারা এবং পুলিশি টহল। দর্শনার্থীদের কয়েকটি লঞ্চ এবং নৌকো ভারতের পারে ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের দিক প্রায় জনশূন্য। সংখ্যায় কম হলেও টাকির ইছামতীতে প্রতিমা নিয়ে বেশ কয়েকটি নৌকো এ দিন চোখে পড়ে। টাকিতে ভাসান দেখতে এসেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামল সেন। উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন এবং বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্তারা।

বনেদি এবং বিত্তশালী প্রাচীন জমিদার পরিবারের বেশ কয়েকটি পুজো হয় টাকিতে। পাড়ে দাঁড়িয়ে কয়েক জন দর্শনার্থী বলেন, “প্রশাসন যদি একটু বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে নদীর বুকে দুই বাংলার মানুষের মধ্যে মিলনের ব্যবস্থা করে দিত, তা হলে খুব ভাল লাগত।” তবে এই কড়াকড়ির জেরে টাকির বিসর্জনের জৌলুস যে কমেছে বলে মানছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও। টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, এ বার অনেক বেশি নৌকো নেমেছিল নদীতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pujo southbengal nirmal basu basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE