Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

থলিতে মাথা ঢুকিয়ে ছাত্রকে খুন, বন্ধু-সহ ধৃত ৬

এক সময়ের সহপাঠীর কাছে নিজের মোবাইল বিক্রি করেছিল এক স্কুলছাত্র। পাওনা ছিল প্রায় ছ’শো টাকা। বারবার চেয়েও টাকা না পেয়ে বন্ধুর সাইকেল কেড়ে নেয় ছাত্রটি। তার জেরে ওই ছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল সেই বন্ধু-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে।

ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে শোকার্ত মা। নিজস্ব চিত্র।

ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে শোকার্ত মা। নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
মিনাখাঁ শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৪
Share: Save:

এক সময়ের সহপাঠীর কাছে নিজের মোবাইল বিক্রি করেছিল এক স্কুলছাত্র। পাওনা ছিল প্রায় ছ’শো টাকা। বারবার চেয়েও টাকা না পেয়ে বন্ধুর সাইকেল কেড়ে নেয় ছাত্রটি। তার জেরে ওই ছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল সেই বন্ধু-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি শনিবার রাতের, উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার ঝিকরা গ্রামের পূর্বপাড়ার। স্থানীয় বামনপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র বনমালি মণ্ডলকে (১৮) খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রত্যেককেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে দু’জন ওই স্কুলেরই নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্র। এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ধৃতদের রবিবার বসিরহাট এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন যুবককে চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি তিন জনকে একটি আশ্রমে পাঠানো হয়েছে। ৫ অগস্ট তাদের সল্টলেকের জুভেনাইল আদালতে তোলা হবে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই খুনের ঘটনায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত যুবক এক সময় বনমালিরই সহপাঠী ছিল। সম্প্রতি স্কুল ছেড়ে বাসের খালাসির কাজ শুরু করে সে। বনমালি স্কুল ছাড়েনি। চার ভাইবোনের মধ্যে পড়াশোনায় সে ভাল ছিল। মাঝে মধ্যে বাবা ঝন্টু মণ্ডলকে চাষের কাজেও সাহায্য করত। শনিবার সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষক সুভাষ দাসের বাড়িতে পড়তে যায় সে। অভিযোগ, রাত ন’টা নাগাদ বাড়ি ফিরে খেতে বসতেই স্কুলের এক ছাত্রকে নিয়ে তাকে ডাকতে আসে বনমালীর পুরনো ওই সহপাঠী। বনমালী বেরিয়ে যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত সে না ফেরায় তার খোঁজ শুরু করেন বাড়ির লোক ও প্রতিবেশীরা। মেছোভেড়ির কাছে বনমালির ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাজারের থলির ভিতরে তার মাথা ঢোকানো ছিল। রাতেই অভিযুক্তদের এক জনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার পরেই একে একে বাকিরা ধরা পড়ে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গ্রামেরই এক কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বনমালির। তার আগে অবশ্য মেয়েটির সম্পর্ক ছিল এই খুনের মূল অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে। গ্রামবাসীদের একাংশ, মেয়েটির জন্য একবার স্কুলের মধ্যে কীটনাশক খেয়েছিল ওই কিশোর। এই সম্পর্ক নিয়ে বনমালি ও তার বন্ধুর মধ্যে গণ্ডগোলও বেধেছে। মোবাইল বিক্রির টাকা নিয়েও তাদের বিবাদ আরও বাড়ে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে বনমালীর বন্ধু জানায়, এ সবের জেরে সে প্রতিশোধ নেওয়ার ছক কষে। এই কাজের জন্য বাকি পাঁচ জনকে কয়েক হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পুলিশ জেনেছে, শনিবার রাতে বনমালির বাড়িতে গিয়ে তাকে মোবাইল বিক্রির বাকি টাকা দেবে টোপ দিয়ে থেকে বের করে এনে মেছোভেড়ির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মদের আসর বসিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল অন্যেরা। কথা বলার সময়ে হঠাৎ এক জন বনমালির মাথায় থলি পরিয়ে দেয়। তার পরে দা দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি কোপায়। রবিবার বনমালীর মা রেবাদেবী বলেন, “মোবাইলের টাকা নিতে হলে এখনই আসতে হবে বলে ছেলেটাকে ডেকে নিয়ে গেল ওরা। তার পরে ওকে এমন ভাবে খুন করল!” গ্রামবাসীর দাবি, এর আগেও ওই যুবকের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অভিযোগ উঠেছে।

মনোবিদ নীলাঞ্জনা স্যান্যালের মতে, এই ধরনের কিশোররা চরিত্রগত ভাবেই আগ্রাসী। হয় নিজের ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে তাদের নৈতিকতা বোধ নষ্ট হয়ে গিয়েছে অথবা হয়তো তাৎক্ষণিক ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে তারা। “সার্বিক সামাজিক অবক্ষয়ের জেরেই এমন ঘটনা ঘটছে।”—বলছেন নীলাঞ্জনাদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal murder nirmal basu nirmal minakhan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE