সে দিন তাঁরও কাজে যাওয়ার তাড়া ছিল। এ দিন এঁদের দু’জনেরও।
এর আগে রেল অবরোধ তুলতে বসিরহাটে লাইনে নেমে পড়েছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ফের দুই মহিলা নেমে অবরোধকারীদের বললেন, ‘কেন আমাদের কাজে যেতে দিচ্ছেন না? পথ ছাড়ুন!”
রেল ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ করে এসইউসি। বেলা ১১টা থেকে পাশের লাইন অবরোধ করেছিল কংগ্রেসও। তার জেরে বন্ধ হয়ে যায় শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার ট্রেন চলাচল ও যশোহর রোডের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জোড়া ফাঁসে আটকে পড়েন যাত্রীরা।
কিন্তু এই রাজ্যে বন্ধ-অবরোধের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার যে প্রবণতা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে, তার ব্যত্যয় হয়নি। বছর কয়েক আগে ছেলেকে নিয়ে এনআরএস হাসপাতালে যাওয়ার পথে বামনগাছিতে অবরোধে আটকে পড়ে নিজেই বাঁশ সরিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন এক বাবা। পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল অবরোধকারীরা। এ দিনও দুই মহিলা এবং তাঁদের সঙ্গে এগিয়ে আসা যাত্রীদের চাপের মুখে অবরোধ ধোপে টিকল না।
বনগাঁ-শিয়ালদহ লাইনে যাত্রীরা জানেন, যে কোনও কারণে অবরোধ করাটা সেখানে কার্যত রেওয়াজ হয়ে গিয়েছে। এ বার রেলভাড়া বাড়ার মতো জুতসই কারণ পেয়ে দলগুলি মাঠে নেমে পড়েছে। এ দিন হাবরায় ট্রেন আটকে যাওয়ার খানিক পরেই যাত্রীদের একটা বড় অংশের ধৈর্যচ্যুতি হয়। রেলপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, একটু বাদেই ট্রেন থেকে নেমে দুই মহিলা যাত্রী বিক্ষোভকারীদের অবরোধ তুলে নিতে বলেন। তাঁদের দেখাদেখি অন্য অনেক যাত্রীও লাইনে নেমে আসেন।
বেগতিক বুঝে কংগ্রেস কর্মীরা প্রথমেই অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু ১ নম্বর রেল গেটের কাছে জড়ো হওয়া এসইউসি সমর্থকেরা রাজি হননি। শুরু হয় কথা কাটাকাটি। নিত্যযাত্রীদের সঙ্গে গলা মেলান যশোহর রোডে আটকে থাকা গাড়ির চালক ও যাত্রীরা। রেলপুলিশ, রেলরক্ষী বাহিনী এবং হাবরা থানার পুলিশ চলে আসে। অবরোধ ওঠাতে পুলিশের কাছে লাঠিও চান কিছু নিত্যযাত্রী। পুলিশ অবশ্য তা দেয়নি। কিন্তু পরিস্থিতি কঠিন হচ্ছে বুঝে অবরোধকারীরা রণে ভঙ্গ দেন।
এসইউসি-র দাবি, অবরোধ তুলতে আসা যাত্রীদের একাংশ রাজনৈতিক মদতে পুষ্ট। তবে জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সমাদ্দার বলেন, “ট্রেনের যাত্রীরা নেমে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করায় আমরা সরে যাই।”
যে দুই মহিলা সবার আগে লাইন ধরে এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, ‘পথ ছাড়ুন’, তাঁরা নিজেদের নাম বলতে চাননি। শিয়ালদহের দিকে যখন ফের ট্রেন ছাড়ছে, তাঁরা শুধু বলে যান, “আমরা সরকারি চাকরি করি না। ঠিক সময়ে কাজে পৌঁছতে না পারলে গোটা দিনটাই নষ্ট হয়ে যেত।”
নামে কী আসে-যায়? ওঁরা তো আসলে মার খেয়ে মরিয়া হয়ে উঠতে থাকা জনতারই দু’এক জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy