সেই বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
জমির সমস্যা কাটিয়ে কামারহাটি এলাকায় তৈরি হল বুস্টার পাম্পিং স্টেশন। ফলে ফি-বছর বর্ষায় জলবন্দি হওয়া থেকে মুক্তি মিলবে বলে দাবি কামারহাটির পুর-কর্তৃপক্ষের।
সম্প্রতি বুস্টার পাম্পিং স্টেশনটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানান, জমি সমস্যার জন্য এই প্রকল্পের কাজ আটকে ছিল। অবশেষে স্থানীয় বিধায়ক মদন মিত্রের সহযোগিতায় জমি মিলতেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে।
প্রতি বর্ষায় কামারহাটি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকার মানুষই জলবন্দি হয়ে পড়েন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাময়িক বন্দোবস্ত করা হলেও স্থায়ী সমাধান কোনও দিনই হয়নি। এমনকী বৃষ্টি কমে গেলেও রাজ্য সড়ক বিটি রোড-সহ কামারহাটির বিস্তীর্ণ এলাকার জল নামতে কয়েক দিন লেগে যায়। ফলে পুর-কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন বাসিন্দারা। প্রশাসনও শুধুই আশ্বাস দিত। অবশেষে নিকাশি উন্নয়ন সম্পূর্ণ হওয়ায় এ বার আশার আলো দেখছেন বাসিন্দারাও।
কামারহাটি পুরসভা সূত্রের খবর, ১০.৯৬ বর্গ কিলোমিটার পুর এলাকায় বিটি রোডের দিকের অংশে নিকাশি ব্যবস্থা স্থানীয় নালা ও দাঁতিয়া খালের উপর নির্ভরশীল। আবার পুরসভার উল্টোদিকের বিটি রোড বরাবর অংশের নিকাশি রাস্তার ধারের বড় নালার উপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি বেলঘরিয়া স্টেশন পার করে যে সমস্ত এলাকা রয়েছে সেখানকার নিকাশির ভরসা উদয়পুর খাল। কামারহাটি এলাকা থেকেই শুরু হয়েছে আপার বাগজোলা খাল। সেখানে মিশেছে দাঁতিয়া খাল, বিটি রোডের নিকাশি নালা এবং উদয়পুর খালের
কিছুটা অংশ।
পুর কর্তারা জানান, প্রতি বর্ষায় বাগজোলা খালের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য নিকাশি ব্যবস্থা থেকে জল উপচে রাস্তা, এলাকা ভেসে যেত। জল বেরনোর সুযোগ না থাকায় জমা জল নামতে সময় বেশি লাগত। জলবন্দি হয়ে পড়ত নন্দননগর, যতীন দাস নগর, ডিপি নগর, কামারহাটি মোড়, মৌসুমী মোড়, ফিডার রোড, আড়িয়াদহ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হত সাধারণ নাগরিকদের। আড়িয়াদহের বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, “বৃষ্টি হলেই ভয় হয়। রাস্তায় এক কোমর জল জমে যায়। অন্য জায়গায় জল নামলেও কামারহাটির জল নামতে অনেক দিন লেগে যেত।” কামারহাটির নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে পানিহাটিরও যোগ রয়েছে। ফলে বর্ষাতে ওই পুর-এলাকার জমা জলও কামারহাটিতে চলে আসত।
দীর্ঘ দিনের এই নিকাশি সমস্যা দূর করতে বাম আমলেই ‘সুসংহত নিকাশি ব্যবস্থা’ প্রকল্পের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। জেএনএইউআরএম প্রকল্পের অর্ন্তগত ব্যবস্থায় এলাকায় বক্স ড্রেন-সহ অন্যান্য কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে গিয়েই জমি সমস্যায় আটকে যায় প্রকল্পটি। কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের গোপাল সাহা বলেন, “জমি সমস্যার জন্য কাজটি পুরো ভেস্তে যেতে বসেছিল। তখন বিধায়ক তথা মন্ত্রী মদন মিত্র সিএসটিসি-র বেলঘরিয়া ডিপোর জমি আমাদের দান করেন পাম্পিং স্টেশন তৈরির জন্য। তাতেই জমির সমস্যা মিটে যায়।”
কামারহাটি পুরসভার অমৃতনগরে বেলঘরিয়া সিএসটিসি বাস ডিপোর পাশেই ৬৭ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা খরচে তৈরি হয়েছে এই প্রকল্প। এর মধ্যে কেন্দ্র দিয়েছে ২৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। রাজ্য ও কেএমডিএ দিয়েছে ৪০ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা। বাকি ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা দিয়েছে কামারহাটি পুরসভা। কেএমডিএ সূত্রের খবর, পাম্পিং স্টেশনে পাঁচটি পাম্প রয়েছে। বৃষ্টির জল পাম্পের মাধ্যমে প্রকল্পের জলাধারে ধরে রাখা হবে। পরে বাগজোলা খালের জলস্তর বুঝে সেই জল ছাড়া হবে। এই প্রকল্পের কারণে পানিহাটিও উপকৃত হবে বলেই দাবি কেএমডিএ কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy