Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তিন দিন পরে দেশে ফিরেছিল বনগাঁ

বঙ্গদেশে নীল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে ১৮৬২ সালের শেষের দিকে নদিয়া জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট হর্সেল ও বারাসত জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট অ্যাসলে ইডেন বনগাঁয় (তত্‌কালীন বনগ্রাম) আসেন। তাঁরা দুর্দশাগ্রস্ত নীল চাষিদের কাছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বনগাঁকে মহকুমা ঘোষণা করেন।

বনগাঁ হাইস্কুলের পুরনো ভবন। এখানেই বনগাঁ কলেজের ক্লাস শুরু হয়েছিল।

বনগাঁ হাইস্কুলের পুরনো ভবন। এখানেই বনগাঁ কলেজের ক্লাস শুরু হয়েছিল।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৩১
Share: Save:

বঙ্গদেশে নীল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে ১৮৬২ সালের শেষের দিকে নদিয়া জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট হর্সেল ও বারাসত জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট অ্যাসলে ইডেন বনগাঁয় (তত্‌কালীন বনগ্রাম) আসেন। তাঁরা দুর্দশাগ্রস্ত নীল চাষিদের কাছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বনগাঁকে মহকুমা ঘোষণা করেন। ১৮৬৩ সালে নদিয়া জেলার একটি মহকুমা হিসাবে গড়ে ওঠে বনগাঁ। প্রথম মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে আসেন সি কুইনি। পরবর্তী ম্যাজিষ্ট্রেট হয়েছিলেন জেএন হার্ডলস। তৃতীয় মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের কার্যকালে বিদ্যাসাগর বনগাঁয় এসেছিলেন। সালটা ছিল ১৮৬৯। শ্রীশচন্দ্র ছিলেন গোবরডাঙা পুরসভার প্রথম চেয়ারম্যান। তিনিই প্রথম বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় বিধবা বিবাহ করেছিলেন।

প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৮৮২ সালে বনগাঁ মহকুমাকে নদিয়া জেলার বদলে যশোহর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারতের স্বাধীনতার দিন বনগাঁ শহর কিন্তু ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে। প্রবীণ মানুষেরা জানালেন, বনগাঁ পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যাওয়ায় সে সময়ে মুসলিম লিগের পক্ষ থেকে শহরে উত্‌সব করা হয়েছিল। যদিও তার তিন দিন পরে, ১৮ অগস্ট বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ ও গাইঘাটাকে এ দেশের তত্‌কালীন অবিভক্ত ২৪ পরগনা জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

গত কয়েক বছর ধরেই ১৮ অগস্ট দিনটিকে স্মরণ করে বনগাঁ মহকুমা আদালতের আইনজীবীরা আদালত চত্বরে জাতীয় পতাকা তুলে আসছেন। বনগাঁ আদালতটিও বহু ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। বনগাঁ ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস বলেন, “আদালতের বয়স দেড়শো ছাড়িয়েছে। মূলত নীল চাষিদের বিচারের জন্য আদালতটি তৈরি হয়েছিল। তখন ছিল খড়ের ছাউনি। গরুর গাড়িতে চড়ে আসতেন বিচারপ্রার্থীরা। রাতে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। গরু রাখার ও খাওয়ানোরও ব্যবস্থা ছিল আদালত চত্বরে।

দেশভাগের সময়ে ও পার বাংলা থেকে বহু মানুষ বনগাঁ শহরে চলে এসেছিলেন। বহু প্রবীণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে ও স্থানীয় ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেল, ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশের বাগেরহাটে দাঙ্গার সময়েও দলে দলে মানুষ এখানে আসেন। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ও পার বাংলা থেকে শরণার্থী হিসাবে সব থেকে বেশি মানুষ এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। স্থানীয় বার্মা কলোনি, বিচুলিহাটা, মতিগঞ্জে তাঁদের জন্য শিবির করা হয়েছিল। প্রবীণ শিক্ষাবিদ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যুদ্ধের পরে অবশ্য শরণার্থী হিসাবে শহরে আশ্রয় নেওয়া সব মানুষ আর ফিরে যাননি। যাঁরা টাকা-পয়সা কিছু আনতে পেরেছিলেন, তাঁরা এখানেই সম্পত্তি কিনে পাকাপাকি বসবাস শুরু করেন।” তিনি জানালেন, অতীতে বনগাঁ দিয়ে কলকাতা-খুলনা রেল চলাচল করত। ট্রেনের নাম ছিল বড়িশাল এক্সপ্রেস। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।

শহরের স্মৃতি...


২০০০ সালের বন্যায় টাউন হলের সামনে জলচিত্র।

’৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন বনগাঁ শহরে ভারতীয় সেনারা ক্যাম্প করেছিল। বনগাঁ স্টেডিয়ামে কামান এনে রাখা হয়েছিল। সাঁজোয়া গাড়ি যাতায়াত করত শহরের পথ দিয়ে। আর আকাশ পথে গোঁ গোঁ করে উড়ত যুদ্ধবিমান। তা নিয়ে আতঙ্কে ভুগতেন গাঁয়ের মানুষ। উড়োজাহাজ গেলেই সকলে নিচু হয়ে বসে পড়তেন। সন্ধ্যার পরে কোনও বাড়িতে আলো জ্বালানোর নিয়ম ছিল না।

বনগাঁ শহরের প্রথম হাইস্কুল ছিল বনগাঁ হাইস্কুল। সেটি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। শহরের একমাত্র কলেজ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয়টিও প্রথমে শুরু হয়েছিল বনগাঁ হাইস্কুলেই। শহরে এখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ১৬টি। এলাকার মানুষের চাহিদা, একটি বিএড কলেজ ও একটি আর্ট কলেজের। শহরের ঐতিহ্য পাবলিক লাইব্রেরি তৈরি হয়েছিল ১৯১৭ সালে। আজও তা চলছে।

ঐতিহাসিক এই শহর বরাবরই শিল্পচর্চায় উত্‌সাহী। নীলদর্পণ নাটকের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্র থেকে শুরু করে কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্যচর্চায় বনগাঁর নামকে দেশবাসীর কাছে পরিচিত করেছেন। সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন হাল আমলের শিল্পী-সাহিত্যিকেরাও।

কথা হচ্ছিল শহরের বাসিন্দা সাহিত্যিক জ্যোতি ঘোষের সঙ্গে। তিনি বললেন, “এই শহরের বিচিত্র বৈপরিত্ত দেখতে আমরা অভ্যস্থ। এক দিকে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ, অন্য দিকে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা। এই শহরের মানুষ আজও গর্ববোধ করেন দীনবন্ধু, বিভূতিভূষণ কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে।” তিনি জানান, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এই শহরে জন্মগ্রহণ করেননি বা এখানে বসবাসও করতেন না। কিন্তু শহর-সংলগ্ন ছয়ঘড়িয়া এলাকায় রাখালদাসের ছোট ঠাকুরদাদা গৌরহরি বন্দ্যোপাধায়ের বাড়ি ছিল। দুর্গাপুজোর সময়ে রাখালদাস শহরের উপর দিয়েই আসতেন। তা সত্ত্বেও শহরবাসী রাখালদাসকে নিজেদের লোক বলেই মনে করেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম কাঁচরাপাড়ার কাছে মামার বাড়িতে। তাঁর পৈতৃক ভিটে ছিল অধুনা গোপালনগরের বারাকপুর গ্রামে। বিভূতিভূষণ বনগাঁ হাইস্কুলে লেখাপড়া করেছেন। প্রথমে পায়ে হেঁটে স্কুলে এলেও পরে স্থানীয় খেলাঘর মাঠের কাছে ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করতেন। শহরে মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে তিনি সাহিত্যপাঠের আসরে আসতেন। যা খ্যাত ছিল লিচুতলা ক্লাব নামে। ইছামতী নদীর নামে তিনি উপন্যাসও লিখেছেন। পথের পাঁচালি উপন্যাসের কিছুটা অংশ তিনি ইছামতীর পাড়ে বসেই লিখেছিলেন বলে জানা যায়। দীনবন্ধু মিত্রের জন্ম বনগাঁ মহকুমার চৌবেড়িয়া গ্রামে। তাঁর লেখা ‘নীলদর্পণ’ তো গোটা দেশে শোরগোল ফেলেছিল। তা ছাড়াও বিয়ে পাগলা বুড়ো, লীলাবতী-সহ বহু নাটক লিখেছেন দীনবন্ধু। সাহিত্যিক মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর নামেই যিনি বাংলা সাহিত্যে চিরকালীন জায়গা করে নিয়েছেন, তাঁরও জন্মভিটে বনগাঁয়।

কবি কেশবলাল দাস, শিবপ্রসাদ ঘটক, নির্মল আচার্য, হরিপদ মুখোপাধ্যায়, মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায়, অনিল সাধু, নির্মল মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ মৈত্রের মতো অনেকেই সাহিত্য চর্চার শহরের ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন. তারও পরবর্তী সময়ে পাঁচ কবি, যাঁদের এক সময়ে একযোগে ‘পঞ্চস্বর’ ডাকা হত, তাঁরা হলেন রাখাল বিশ্বাস, ক্ষিতীশ বিশ্বাস, দেবপ্রসাদ ঘোষ, বীরেন বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যামল রায়চৌধুরী। দেবপ্রসাদ ঘোষ বহু কবিতার পাশাপাশি অসংখ্য গণসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। তারও পরবর্তী সময়ে স্বপন চক্রবর্তী, মলয় গোস্বামী, অশোক আচার্য, সমর মুখোপাধ্যায়, কান্তিময় ভট্টাচার্য, জলধি হালদার, ভবানী ঘটক, বিভাস রায়চৌধুরী, বাবলু রায়, মোহন ঘোষ, রণবীর দত্তর মতো লেখকেরা বনগাঁর সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্য সমৃদ্ধ করেছেন।

বনগাঁ শহর থেকে নিয়মিত বহু লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হয় কয়েকটি সাপ্তাহিক সংবাদপত্রও। আর দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে এই শহর থেকে যত পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়, তা সম্ভবত রাজ্যের আরও কোনও প্রান্তে দেখা যায় না। পুজো উদ্যোক্তারাও ভাল মানের স্মরণিকা প্রকাশ করেন, যা সাহিত্য পত্রিকার আকার নেয়।

‘অচেনা যাত্রী’ নামে একটি ওয়েব ম্যাগাজিনও বেরোচ্ছে সম্প্রতি। তবে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই। অতীতে নিয়মিত নাটক ও যাত্রা উত্‌সব হত শহরে। এখন সেই রমরমা নেই। বনগাঁ নাট্যচর্চা কেন্দ্র এখন বছরে একটি করে নাট্য উত্‌সব করে। হারিয়ে গিয়েছে কথক-এর মতো বহু নাট্যদল। রক্তকরবী ও বনগাঁ বিদর্ভ নামে কয়েকটি সংস্থা মাঝে মধ্যে নাটক মঞ্চস্থ করে। অতীতে ট’বাজারের ব্যবসায়ীরা নিয়মিত যাত্রা চর্চা করতেন। এখন তা অনিয়মিত।

বনগাঁর জ্ঞান বিকাশিনী সঙ্ঘের মাঠ, এমএস ক্লাবের মাঠ, ২ নম্বর রেলগেঠ এলাকায় দোলের মাঠে বিখ্যাত যাত্রা দলকে নিয়ে পালা হত। অতীতে পূর্বপাড়াতেও নিয়মিত যাত্রা চর্চা হত। ওই এলাকারই বাসিন্দা কানাই নাথ যাত্রা পালাকার হিসাবে গোটা রাজ্যে নাম করেছিলেন। সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন তিনি। মোট ৭২টি যাত্রা পালা লিখেছিলেন কানাইবাবু। ‘আমি মা হতে চাই’ পালার জন্য রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন। চণ্ডীতলার মন্দির যাত্রার জন্য রাজ্যের শ্রেষ্ঠ পালাকারের সম্মান পেয়েছিলেন। এক সময়ে বহু উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসত বনগাঁয়।

বনগাঁয় আগে নিয়মিত বসত সাহিত্য পাঠের আসর। সাধুজন পাঠাগার ও দৈনন্দিন প্রেসে সাহিত্যের আড্ডায় ভিড় করতেন কত না মানুষ। সে সব আজ অতীত। বিশ্বনাথ মৈত্রর নাটক ‘শিবের দেহত্যাগ’ এক সময়ে গোটা রাজ্যে সাড়া ফেলেছিল। দীপশিখা ঘোষ ভৌমিকের বাড়িতে এখনও অবশ্য সাহিত্যপাঠ বা কবিতা পাঠের আসর বসে। ‘আনকথা’ আয়োজন করে গল্পপাঠের আসরের। নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি প্রতি বছর যাত্রা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চলেছে। কবিতা আশ্রম পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিককে স্মরণ করতে অনুষ্ঠান করা হয়। এবং অন্যকথা পত্রিকা গোষ্ঠী বছরে একটি সাহিত্য সম্মান প্রদান অনুষ্ঠান করে। অতীতে শিস পত্রিকার উদ্যোগে বড় বড় সাহিত্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত।

সাহিত্যিক ভবানী ঘটক বলেন, “বনগাঁ শহরের সাহিত্যিকদের সৃষ্টি সংরক্ষণের জন্য সরকারি বা বেসরকারি কোনও তরফেই কোনও উদ্যোগ করা হয়নি। পুরসভা বা তথ্য সংস্কৃতি দফতরও সে বিষয়ে উদাসীন। অতীতে দেখেছি, বড়রা নিয়মিত কী লেখালেখি করছি, তার খোঁজ নিতেন। উত্‌সাহ দিতেন। এখন সে সব দেখা যায় না। অন্য কে কী লিখছে, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। নিজে কে কী করছে, সেটাই বড় বিষয়।”

(শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? আপনার নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-বনগাঁ’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর’, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০১।
ফেসবুকেও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। www.facebook.com/anadabazar.abp

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal amar sohor bongaon simanta moitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE