সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে দলীয় কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছিলেন। এসেছিলেন জেলা বিজেপির সভাপতি কামদেব দত্ত, জেলা বিজেপির সহ সভাপতি (সাংগঠনিক) শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়-সহ স্থানীয় বিজেপি নেতারা। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি গাড়ি করে স্লোগান দিতে দিতে ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করলেন কিছু কর্মী। বাড়িতে আসা নেতাদের সঙ্গে প্রার্থী কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। স্নান খাওয়া সেরে সাড়ে ১১টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লেন প্রচারে। তার আগেই অবশ্য সুব্রতর বাবা, সদ্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে আসা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর ও মা ছবিরানিদেবী বড় ছেলের প্রচারে নিজেদের মতো করে বেরিয়ে গিয়েছেন। সুব্রতর কথায়, “বাবা-মা মূলত মতুয়া ভক্ত ও নিজেদের পরিচিতদের মধ্যে প্রচার করছেন।”
যখনই কেউ হাত মিলিয়ে বলেছেন, “ভোটটা আপনাকেই দেব” হাসির ঝিলিক খেলেছে তরুণ প্রার্থীর মুখে। উল্টো সুরও শোনা গেল। তা অবশ্য সুব্রতর কান পর্যন্ত পৌঁছয়নি। বৈদ্যবাড়ি মোড়ে একটি দোকানে দাঁড়িয়েছিলেন কিছু লোকজন। তাঁদের আবার প্রার্থীর আড়ালে বলতে শোনা গেল, “বিজেপির টিকিটের লোভে তৃণমূল ছেড়ে বাবা-ছেলের চলে আসাটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। মুখ্যমন্ত্রী ওঁদের প্রার্থী করেছিলেন, মন্ত্রী করেছেন। ওঁরা যদি তাঁকেই ছাড়তে পারে, তা হলে নিজেদের স্বার্থে যে কোনও দিন বিজেপিকেও ছেড়ে দিতে পারেন।” প্রার্থীর গাড়ি পাশ দিয়ে চলে গেলেও সে দিকে ঘুরেও তাকালেন না কেউ।
চলতে চলতে হঠাত্ স্থানীয় চৌরঙ্গী বাজারে এসে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন সুব্রত। সটান ঢুকে পড়লেন সড়কের পাশে থাকা সব্জির দোকানে। সব্জি ব্যবসায়ী নারায়ণ রায়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট চাইলেন। জানতে চাইলেন, বাজারে কী কী সমস্যা আছে। নারায়ণবাবু জানিয়ে দিলেন, নিকাশি সমস্যা আছে। বাজারটি পাকা হলে ভাল হয়। পাশের দোকানি শিবু পালের কাছেও হাত জোড় করে আর্শীবাদ চাইলেন প্রার্থী। ফের উঠে পড়লেন গাড়িতে। রওনা দিলেন রামচন্দ্রপুরের দিকে।
কী বুঝছেন?
নারায়ণ ও শিবুবাবু বললেন, “আমাদের এখানে বিজেপির প্রভাব না থাকলেও এ বার তো হাওয়া মনে হচ্ছে পাল্টে যাবে। তবে সে জন্য মতুয়া ভোট নিজেদের অনুকূলে আনতে হবে। সুব্রত যদি তা পারেন, তবে জিতে যাবেন।” পারবেন কি? শিবুবাবু বলেন, “সবটাই নির্ভর করছে বড়মার উপরে।”
সুব্রতবাবু জানালেন, এখন রোজ সকাল ৬টার সময় ঘুম থেকে উঠে পড়ছেন। পৌনে ৭টার মধ্যে বাড়িতে চলে আসছেন কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের সঙ্গে ভোট নিয়ে আলোচনা করছেন। তার মধ্যেই খবরের কাগজের পাতায় চোখ বুলিয়ে নিতে হচ্ছে। সাড়ে ৮টার মধ্যে স্নান-খাওয়া সেরে তৈরি হয়ে ৯টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ছেন প্রচারে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা বেজে যাচ্ছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও সময় বের করে ট্রেড মিলে শরীর চর্চা সেরে নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা ইন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের প্রাক্তন ছাত্রটি।
তরুণ প্রার্থীর প্রচারে আর একটি মাধ্যম রয়েছে। তা হল ফেসবুক। প্রচারের কাজে ব্যস্ততার মধ্যেও নিয়ম করে ফেসবুকে প্রচার করছেন বলে জানালেন সুব্রত। বললেন, “ফেসবুকে বন্ধুর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। রোজ প্রায় পাঁচশো জন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছেন। অনেকে নানা মতামতও দিচ্ছেন।” নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নানান বিষয় সুব্রত নিয়মিত পোস্টও করছেন। রবিবার রাতেই পোস্ট করেছেন, কলাসীমা বাজারে তাঁর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটি। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তা লাইক করেছেন ১২৬ জন। মতামত দিয়েছেন ২৫ জন। সুব্রত জানালেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-সহ ইউরোপের নানা দেশে পরিচিতেরা সুব্রতর হয়ে প্রচার করছেন নেট-এ। কেউ ফোন করছেন। ই-মেল পাঠাচ্ছেন। সকলেই মোদীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাইছেন বলে মনে করেন সুব্রত।
বড়মার আর্শীবাদ কি তিনি পাবেন? আত্মবিশ্বাসী সুব্রত বললেন, “উনি সকলেরই বড়মা। ইতিমধ্যেই আমাকে আর্শীবাদও করেছেন।” সেই আর্শীবাদে ভরসে রেখেই ভোটের বৈতরণী পার করতে এখন ব্যস্ত বড়মার বড় নাতি সুব্রত।