Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ, গোলমাল কাকদ্বীপ হাসপাতালে

বিনা চিকিৎসায় ঘণ্টা চারেক হাসপাতালে পড়ে থেকে আঠারো বছরের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল।

তখনও উত্তেজনা। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

তখনও উত্তেজনা। ছবি: শান্তশ্রী মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

বিনা চিকিৎসায় ঘণ্টা চারেক হাসপাতালে পড়ে থেকে আঠারো বছরের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল।

কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় সোমবার। মৃতের পরিবার পরিজন এক চিকিৎসককে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে রোগীর পরিবারের মহিলাদের ধস্তাধস্তি বাধে। তিন সিভিক ভলান্টিয়ার সামান্য চোট পান। পরিবারের তরফে গাফিলতির অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল সুপার, পুলিশ, জেলাশাসক এবং স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পেটে ব্যথা ও বমির উপসর্গ নিয়ে রবিবার রাত ২টো নাগাদ মধুসূদনপুর অঞ্চলের ময়রারচকের বাসিন্দা সুখেন দাসকে (১৮) আনা হয় হাসপাতালে। সঙ্গে ছিলেন খুড়তুতো দাদা অমলেশ। তাঁর দাবি, রাতে জরুরি বিভাগে দেখানোর পরে ভর্তি লিখে দেওয়া হয়। শয্যাও পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয় সুখেনকে। কিন্তু শয্যা মেলেনি। বেশ কয়েকবার ডাকার পরে ঘুম থেকে উঠে নার্স বারান্দায় রোগীকে রাখতে বলেন।

মৃত সুখেন।

সুখেন এলাকার একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। ভাল ফুটবল খেলতেন। কিছু দিন আগে পড়া ছেড়ে চেন্নাইয়ে কাজ শুরু করেন। দু’মাস হল বাড়ি এসেছিলেন। তাঁর বাবা বরুণবাবুও ভিন রাজ্যের শ্রমিক। সুখেনের মা ছেলের শোকে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন বলে জানালেন আত্মীয়েরা।

অমলেশের অভিযোগ, ‘‘বারান্দার এক কোণে, ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করে ভাইকে শোয়াই। শ্বাসকষ্ট, খিচুনি হচ্ছিল ওর। বার বার বলছিল, দাদা আমাকে বাঁচা। কিন্তু রাত ২টো থেকে বার বার ডেকেও কোনও ডাক্তার আসেনি। উল্টে নার্স বিরক্তি প্রকাশ করেন। অনেক পরে স্যালাইন এবং একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। সাড়ে ৫টায় ডাক্তার এসে বলেন, ভাইয়ের দেহে আর প্রাণ নেই।’’ অমলেশের অভিযোগ, ‘‘গাফিলতির জেরেই আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। দোষীদের শাস্তি চাই।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা দাবি, সোমবার ভোর সওয়া ৪টে নাগাদ ভর্তি করান রোগীকে। নিয়মমাফিকই চিকিৎসা হয়েছে। দু’বার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে, অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। ভোর ৬টায় ওই রোগী মারা যান।

হাসপাতালের সুপার অসুস্থতার জন্য ছুটিতে। ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বিকে রায় বলেন, ‘‘চিকিৎসা ঠিক মতোই হয়েছে। কেউ মারা গেলে অভিযোগ থাকতেই পারে। তদন্ত হবে।’’ দেহ এ দিন কলকাতায় পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।

তদন্ত তার নিজের নিয়মে এগোবে। তার আগেই অবশ্য এ দিন সকাল থেকে দফায় দফায় গোলমাল ছড়ায় হাসপাতালে। ঘটনার কথা শুনে স্থানীয় মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা দলের কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে হাসপাতালে পাঠান। তাঁরা পরে বলেন, ‘‘হাসপাতালের কিছু সিনিয়ার ডাক্তার নিয়মিত ভাবে সারা দিন ধরে বাইরের নার্সিংহোমগুলিতে সময় দেন। আর রাতে তাঁরা হাসপাতালে ডিউটি নিয়ে রোগী না দেখে ঘুমোন। ডেপুটি সুপার বাড়ি চলে যান। এ সব নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করতে হবে।’’ হাসপাতালে ডাক্তারদের ডিউটির সময় নিয়েও সরব তাঁরা। এ দিন কৌতলার বাসিন্দা বীণা পলতা জানান, শনিবার ভোর ৪টেয় মেয়ে ভর্তি হয়। প্রসব হয়েছে। তারপর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত কোনও ডাক্তারই রাউন্ডে আসেননি।

হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মন্টুরামবাবু বলেন, ‘‘পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি রাখা চলবে না। সুখেনের মৃত্যুর ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’’

হাসপাতালের চাকরিকে উপেক্ষা করে চিকিৎসকেরা বাইরে প্র্যাকটিসেই বেশি মন দিচ্ছেন বলে যে অভিযোগ উঠছে, সে প্রসঙ্গে মন্টুরামবাবু বলেন, ‘‘কিছু ডাক্তারের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ আসছে। সেগুলিও খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kakdwip Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE