Advertisement
E-Paper

কৃত্রিম প্রজননে চাষ নোনা ট্যাংরার

কৃত্রিম প্রজননে উৎপাদিত নোনা ট্যাংরার চারা দিয়ে সফলভাবে মাছ চাষ সম্ভব। প্রায় দু’ বছর ধরে সেই প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করে এই কথাই জানালেন কেন্দ্রীয় নোনা জলজীব পালন ও অনুসন্ধান সংস্থার (সিবা) মৎস্য বিজ্ঞানীরা।

নিজস্ব সংবাদদাদতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭ ০২:৫৩
নোনা-ট্যাংরা: নতুন পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ করতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। নিজস্ব চিত্র

নোনা-ট্যাংরা: নতুন পদ্ধতিতে এই মাছ চাষ করতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। নিজস্ব চিত্র

কৃত্রিম প্রজননে উৎপাদিত নোনা ট্যাংরার চারা দিয়ে সফলভাবে মাছ চাষ সম্ভব। প্রায় দু’ বছর ধরে সেই প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করে এই কথাই জানালেন কেন্দ্রীয় নোনা জলজীব পালন ও অনুসন্ধান সংস্থার (সিবা) মৎস্য বিজ্ঞানীরা। জলাশয়ে কৃত্রিম পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে ৫০-৭০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের নোনা ট্যাংরা পালনের নজির এই প্রথম বলে দাবি তাঁদের।

‘সিবা’র প্রধান বিজ্ঞানী তাপস ঘোষাল বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক নোনা ট্যাংরা চারার চাহিদা, দাম দিন দিন বাড়ছে। তার পরেও মনের মতো চারা পাচ্ছেন না মৎস্যচাষীরা। তাঁদের কথা মাথায় রেখেই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। আমরা সফল হয়েছি।’’ ‘সিবা’ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃত্রিম প্রজননে উৎপাদিত নোনা ট্যাংরার চারা প্রায় ৬ মাসে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত বড়ো হয়েছে। ‘সিবা’র ওই প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী প্রেম কুমার জানান, একেবারে ছোট পুকুরেই এই চাষ করা সম্ভব। চারা মাছে কিছু হরমোন প্রয়োগ করলে এবং জলে স্রোত তৈরি করলেই আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। তিনি জানান, এই প্রকল্পে ১ কেজি ট্যাংরা উৎপাদনে প্রায় ৯০-১০০ টাকার মতো খরচ পড়ছে।

পাথরপ্রতিমায় বেশ কয়েক বিঘে জমিতে নোনা ট্যাংরা মাছ চাষ করছেন সাইফুল্লা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘সিবার বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তিনি মাছ চাষ করছেন। ইতিমধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনা এবং ওডিশা থেকে তাঁর কাছে অর্ডার আসছে।’’ তাঁর দাবি, অনেকটা কম খরচেই এই চাষ করা সম্ভব। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন ভেড়িতে এখন চিংড়ির চেয়ে নোনা ট্যাংরার চাষ অনেক জনপ্রিয় হচ্ছে।

নোনা ট্যাংরার জন্য ‘সিবা’র বিজ্ঞানীরাই নির্দিষ্ট খাবার তৈরি করছেন। ‘সিবা’র দুই বিজ্ঞানী দেবাশিস দে এবং গৌরাঙ্গ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুকুরের প্রাকৃতিক খাবার খেয়েই বড় হয়ে ওঠে এই প্রজাতির ট্যাংরা। কিন্তু তার বাইরেও সংস্থার তৈরি খাবার প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাতে মাছগুলি আরও বড় হয়েছে।’’ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অল্প প্রোটিনযুক্ত খাবার এই মাছের জন্য উপযুক্ত। ৩০ টাকা খরচ করলেই নোনা ট্যাংরার জন্য এক কেজি প্রোটিনযুক্ত খাবার তৈরি করা সম্ভব। তাঁদের দাবি, এই চাষে চিংড়ি চাষের চেয়ে ঝুঁকি কম।

গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল মৎস্যচাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েকজন মৎস্যজীবীকে বিজ্ঞানীরা ডেকেছিলেন। প্রাকৃতিক প্রজননের নোনা ট্যাংরা চাষ করে তাঁরা কী কী সমস্যায় পড়েছেন তার খতিয়ান নেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে মৎস্যচাষীদের বোঝানো হয়, কৃত্রিম প্রজনন থেকে উৎপন্ন চারা দিয়ে চাষ করলে তাতে লাভ থাকবে। তাই আপাতত প্রান্তিক মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মউ সাক্ষর করেই এই চাষ করাতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। বড় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগেও ট্যাংরা চারা উৎপাদনের প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা।

নামখানার মদনগঞ্জের মৎস্যজীবী দেবকীনন্দন পাত্র দীর্ঘদিন মাছ চাষ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি চারা একটু দেরিতে বড় হয়। তাছাড়া সব সময় একই আকারের হয় না।’’ ‘সিবা’র প্রকল্পে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারায় সেই সমস্যা থাকছে না বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

SaltyTangra fish Artificial breeding
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy