Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের জন্মদিন পালনে রক্তদান শিবির বাবার

সরু চালের ভাত, ঘন মুগের ডাল, ঝিরিঝিরি আলুভাজার সঙ্গে মাছের কালিয়া বা রেওয়াজি খাসির মাংসএই আয়োজনের সঙ্গে তিনি একটা আটপৌরে প্যাকেটও রেখেছিলেন। যে প্যাকেটে কলা, ডিম সেদ্ধ, দানাদারের সাদামাটা পদ থাকা সত্ত্বেও অশোকনগরের পূর্বগেট এলাকার সরকারি কর্মচারিটি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, “ওই প্যাকেটটা যেন সক্কলকে দিতে পারি।” কেন? কারণটা আরও সরলতিন বছরের ছেলে আর্যের জন্মদিনে সত্যব্রত ভট্টাচার্য চেয়েছিলেন নিমন্ত্রিতরা সকলেই যেন রক্তদান করেন।

ছেলে আর্যকে পাশে নিয়ে রক্ত দিচ্ছেন সত্যব্রত ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।

ছেলে আর্যকে পাশে নিয়ে রক্ত দিচ্ছেন সত্যব্রত ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

সরু চালের ভাত, ঘন মুগের ডাল, ঝিরিঝিরি আলুভাজার সঙ্গে মাছের কালিয়া বা রেওয়াজি খাসির মাংসএই আয়োজনের সঙ্গে তিনি একটা আটপৌরে প্যাকেটও রেখেছিলেন।

যে প্যাকেটে কলা, ডিম সেদ্ধ, দানাদারের সাদামাটা পদ থাকা সত্ত্বেও অশোকনগরের পূর্বগেট এলাকার সরকারি কর্মচারিটি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন, “ওই প্যাকেটটা যেন সক্কলকে দিতে পারি।”

কেন? কারণটা আরও সরলতিন বছরের ছেলে আর্যের জন্মদিনে সত্যব্রত ভট্টাচার্য চেয়েছিলেন নিমন্ত্রিতরা সকলেই যেন রক্তদান করেন। তিনি বলছেন, “রক্ত দিলেই প্রাথমিক ভাবে কলা-ডিম সেদ্ধর প্যাকেটটা দিচ্ছিলাম। তার পরে আসল খাওয়া দাওয়া। ভীষণ ভাবে চেয়েছিলাম সবাই যেন রক্ত দেন।”

বছর চারেক আগে দু’বোতল রক্ত জোগাড় করতে না পারায় মারা যান সত্যব্রতবাবুর মা। সেই যন্ত্রণাটা এখনও ভুলতে পারেননি তিনি। বলছেন, “বহু চেষ্টা করেও ওই রক্তটুকু জোগাড় করে উঠতে পারিনি।” সেই আফসোস থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল, নিজের বাড়িতেই কোনও অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবির করবেন তিনি।

ছেলের জন্মদিনে সেই ইচ্ছেটাই এ দিন ডানা মেলল তাঁর। নিমন্ত্রিতদের ২৬ জন রক্তদান করেছেন। সত্যবাবু ও তাঁর স্ত্রী, অশোকনগর পুরসভা পরিচালিত হাসপাতালের নার্স মিতাদেবীও রক্ত দিয়েছেন।

নানা কারণে যাঁরা রক্ত দিতে পারেননি দরাজ গলায় সত্যবাবুর এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন তাঁরাও।

বছর দু’য়েক আগে, নিমন্ত্রিতদের এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের ডিওয়াইএফ নেত্রী হানুফা বানুর বাড়িতে। ছেলের জন্মদিনে তিনিও বাড়ির উঠোনেই আয়োজন করেন রক্তদান শিবিরের। আত্মীয়ার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান চক্ষুদানের অঙ্গীকার শিবির করেছিলেন শ্রীরামপুরের অভিনেত্রী লোপামুদ্রা সিংহও।

সত্যবাবুর এই সব ঘটনার কথা জানা নেই। তিনি বলছেন, “অনেক দিন ধরেই এই শিবির করার কথা ভাবছি। বিশ্বাস করেছিলাম, মায়ের জন্য রক্ত জোগাড় করতে না-পারার প্রায়শ্চিত্ত একমাত্র এ ভাবেই হতে পারে। মায়ের কথা ভেবেই ওই আয়োজন।” বাড়ির সামনে এর ফালি জমিতেই তাই ম্যারাপ বেঁধে শিবিরের আয়োজন করেছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন বারাসত ক্যানসার রিচার্স সেন্টারের সঙ্গে। তাঁরাও উৎসাহ দিয়েছিলেন।

নিমন্ত্রিতদের কাউকেই অবশ্য শিবিরের কথাটা আগাম জানাননি সত্যবাবু। বাড়িতে আসার পরেই রহস্যটা ভেঙেছেন তাঁদের কাছে। তাতেই এগিয়ে আসেন ২৬ জন। বেজায় খুশি সত্যবাবু। বারাসত ক্যানসার রিচার্স সেন্টারের এক চিকিৎসক বলছেন, “বাস্তবিক খুশি হওয়ার মতোই কাজ করেছেন যে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE