Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪

রান্নার গ্যাসে চলছে অটো

প্রথম পর্যায়ের কাজ হল গ্যাসের সিলিন্ডার জোগাড় করা। সরকারি নিয়মে বছরে ভর্তুকিতে ১২টির বেশি সিলিন্ডার পাওয়ার কথা নয় গৃহস্থালির জন্য। কিন্তু বহু দরিদ্র পরিবারে এতগুলি সিলিন্ডার লাগে না। বাড়তি সিলিন্ডারগুলি ১০০-১৫০ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনে নেয় চক্রের লোকজন। সেই গ্যাসই ভরা হয় গাড়িতে।

চোরাগোপ্তা: সিলিন্ডার থেকে বের করা হচ্ছে গ্যাস। নিজস্ব চিত্র

চোরাগোপ্তা: সিলিন্ডার থেকে বের করা হচ্ছে গ্যাস। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ১৫:০০
Share: Save:

রান্নার গ্যাস ভরা হচ্ছে গাড়িতে। ভরার প্রক্রিয়া বিপজ্জনক। কিন্তু দিনের পর দিন ধরে চলছে এই কাণ্ড। হাবরা, অশোকনগর, বনগাঁয় নজরে এসেছে বিষয়টি।

কী ভাবছে চলছে কারবার?

প্রথম পর্যায়ের কাজ হল গ্যাসের সিলিন্ডার জোগাড় করা। সরকারি নিয়মে বছরে ভর্তুকিতে ১২টির বেশি সিলিন্ডার পাওয়ার কথা নয় গৃহস্থালির জন্য। কিন্তু বহু দরিদ্র পরিবারে এতগুলি সিলিন্ডার লাগে না। বাড়তি সিলিন্ডারগুলি ১০০-১৫০ টাকা বাড়তি দিয়ে কিনে নেয় চক্রের লোকজন। সেই গ্যাসই ভরা হয় গাড়িতে।

কথা হচ্ছিল হাবরার এক দিনমজুর পরিবারের মহিলার সঙ্গে। জানা গেল, বছরে ৬টির বেশি সিলিন্ডার লাগে না দরিদ্র পরিবারটিতে। বাকি ৬টি ভর্তুকির গ্যাস ১০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনে নিয়ে যায় কিছু লোক।

বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করার অভিযোগে সম্প্রতি হাবরা থানার পুলিশ বেড়গুম এলাকা থেকে এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছে। ওই মহিলা গাড়ির মালিকদের গ্যাস বিক্রি করতেন। ছোট গাড়ির মালিকেরা ওই মহিলার বাড়িতে গিয়ে গ্যাস ভর্তি করে আনেন।

কিন্তু কেন রান্নার গ্যাস ভরার প্রয়োজন পড়ে গাড়িতে? তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বেআইনি ভাবে মজুত করা ওই সব গ্যাস সিলিন্ডার মূলত বিক্রি হয় অটো চালকদের কাছে।

জানা গেল, একটি অটোতে পাম্প থেকে এলপিজি গ্যাস ভরতে খরচ হয় ৪০-৪২ টাকা। তাতে গাড়ি চলে ১৫-১৮ কিলোমিটার। রান্নার গ্যাস ভরতে খরচ কেজি-প্রতি ৫০-৫৫ টাকা। কিন্তু তাতে গাড়ি চলে ২৬-৩০ কিলোমিটার। এ ছাড়া, হাবরা-অশোকনগরে এলপিজি ভরার পাম্প নেই। আসতে হয় বারাসত বা বনগাঁয়। বনগাঁতেও এ রকম পাম্প মাত্র একটি। ফলে যন্ত্রাংশের ক্ষতি হবে জেনেও গাড়িতে রান্নার গ্যাস ভরেন বহু অটো চালক। অন্য ছোট গাড়িও চালানো হচ্ছে রান্নার গ্যাস ভরে।

কয়েকজন গ্রাহক জানালেন, পাড়ায় পাড়ায় যে ভ্যানচালকেরা গ্যাসের সিলিন্ডার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেও সিলিন্ডার জোগাড় করে বেআইনি কারবারিরা।

কয়েক মাস আগে হাবরা শহরের দেশবন্ধু পার্ক এলাকায় এক গৃহস্থের বাড়ি থেকে একটি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার চুরি হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ একটি চক্রের সন্ধান পায়। ওই চক্রটি রান্নার গ্যাস বিক্রি করত অটো চালকদের কাছে। ওই ঘটনায় পুলিশ বাণীপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে আটটি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সিলিন্ডারের মধ্যে ৫টি গ্যাস-ভর্তি ছিল। চক্রের মাথাকে অবশ্য পুলিশ ধরতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে পুলিশ স্থানীয় কইপুকুর এলাকা থেকেও বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার করে।

কী ভাবে ভরা হয় গ্যাস?

পুলিশ জানতে পেরেছে, বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের করে অটোর ট্যাঙ্কে ভরা হয়। এই প্রক্রিয়া বিপজ্জনক। যে কোনও সময়ে বিস্ফোরণ হতে পারে।

হাবরার পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘রান্নার গ্যাসে গাড়ি চলানো বন্ধ করতে পরিবহণ দফতরকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘গাড়িতে রান্নার গ্যাস ভরার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। রান্নার গ্যাসে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ আইএনটিটিইউসি-র হাবরা শাখার নেতা কৃষ্ণপদ দাস বলেন, ‘‘এখানে এলপিজি গ্যাসের পাম্প নেই ঠিকই। কিন্তু বৈধ প্রক্রিয়ায় ডিজেল অটোর বদলে এলপিজি অটো নিলে সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Auto Cooking Gas Cylinder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE