Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
পথচারীর মাথার উপরে ঝুলে থাকে বিপদ

বিপজ্জনক ডালের খোঁজ শুরু বনগাঁয়

মানুষ জখম হচ্ছেন, গাড়ি-দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ছে। গাছে ঝুলে থাকা শুকনো ও বিপজ্জনক ডাল কাটার দাবিতে এলাকার মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, পথ অবরোধও করছেন

বিপদ: ঝুলে রয়েছে ডাল। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বিপদ: ঝুলে রয়েছে ডাল। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

যশোর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে থাকা প্রাচীন গাছের শুকনো ডাল ভেঙে পড়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ জখম হচ্ছেন, গাড়ি-দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ছে। গাছে ঝুলে থাকা শুকনো ও বিপজ্জনক ডাল কাটার দাবিতে এলাকার মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, পথ অবরোধও করছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি।

এ বার বিপজ্জনক গাছের ডাল কাটতে পদক্ষেপ করল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানিয়েছেন, রবিবার থেকে যশোর রোডের দু’পাশের গাছগুলিতে কত শুকনো বা বিপজ্জনক ডাল ঝুলে রয়েছে, তা জানতে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। ওই কাজ যৌথ ভাবে করছে বন দফতর ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

বনগাঁর কালুপুর থেকে গাইঘাটার কুলপুকুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথে প্রাথমিক ভাবে সমীক্ষার কাজ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই পথেই গাছের ডাল ভেঙে পড়ছে সব থেকে বেশি।

সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কিছু দিন আগে গাইঘাটা ব্লক প্রশাসনের তরফে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। ১৬৬টি গাছকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই গাছগুলিতে রয়েছে বিপজ্জনক ডাল। ওই গাছগুলি ফের পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, গাছগুলিতে একাধিক বিপজ্জনক ডাল রয়েছে।

গাছ শনাক্ত হলেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এখন নিজেরা ওই গাছের বিপজ্জনক ডাল কেটে ফেলতে পারবে না। ডাল কাটতে হলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে বলে দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোডের উপরে পাঁচটি রেলসেতু তৈরি হওয়ার কথা। যশোর রোডের যানজট সমস্যা মিটিয়ে সড়ক পথে বনগাঁ থেকে কলকাতা যাতায়াত দ্রুত করতে রেল ও রাজ্য যৌথ ভাবে ওই পরিকল্পনা করেছে। ওই সেতু তৈরির কাজ শুরুও হয়েছিল। সে জন্য রাস্তার পাশে থাকা কিছু প্রাচীন কাটার প্রয়োজন হয়। বনগাঁয় গাছ কাটার কাজ শুরুও হয়েছিল।

বৃক্ষপ্রেমীরা তার প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন। গাছ বাঁচিয়ে সড়ক সম্প্রসারণের দাবি ওঠে। একটি সংঠনের তরফে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। তারপরেই হাইকোর্টের নির্দেশে যশোর রোডের গাছ কাটা বন্ধ হয়।

এই পরিস্থিতিতে বিপজ্জনক গাছের ডালও কাটা যাচ্ছে না। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বনগাঁ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার জয়ন্ত চক্রবর্তী অবশ্য জানিয়েছেন, চিহ্নিত করা ১৬৬ গাছের বিপজ্জনক ডাল যাতে কাটা যায়, সে জন্য শীঘ্রই হাইকোর্টের কাছে আবেদন করা হবে। যশোর রোড ধরে পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে বারাসতের দিকে গেলে চোখে পড়বে ছোট-বড় বহু শুকনো বা বিপজ্জনক ডাল গাছে ঝুলে আছে। এর মধ্যেই আছে কাঠ চোরদের দৌরাত্ম্য। সুযোগ বুঝে তারা ডাল কেটে নিয়ে পালায়। অনেক সময়ে ডাল অর্ধেক কেটে রাখে গাছে। ঝড়ে সেই ডালও ভেঙে পড়ে।

সোমবার গাইঘাটায় ডাল ভেঙে তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল। দিন কয়েক আগে চাঁদপাড়া বাজারেও ডাল ভেঙে কয়েকজন জখম হয়েছিলেন। অতীতে ডাল ভেঙে পড়ে মানুষের মৃত্যুও হয়েছে।

২০১২ সালের মে মাসে স্থানীয় মণ্ডলপাড়া এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে চলন্ত অটোর উপরে পড়ায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। মৃতদের মধ্যে ছিলেন বনগাঁর সাংস্কৃতিক কর্মী বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর স্বামী তন্ময়বাবুও চাইছেন দ্রুত বিপজ্জনক শুকনো ডাল কেটে ফেলা হোক। পরিবেশকর্মী অজয় মজুমদার বলেন, ‘‘মানুষের স্বার্থ সবার আগে। শুকনো এবং বিপজ্জনক ডাল প্রশাসনের দ্রুত কেটে ফেলা উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment National Highway Danger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE