Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পকেটে নোটবুক নিয়ে ঠাকুর দেখতে যেতাম

ছোটবেলাটা কেটেছে গাঁ-গঞ্জে। পুজোর সময়ে কেউ সেই পুরনো পাড়ায় ফিরতে পারেন, কেউ পারেন না। সেলিব্রিটিদের ছেলেবেলার পুজোর আবেগ ছুঁয়ে দেখল আনন্দবাজার।ফুটবলার মিহির বসুর ক্লাব ইয়ংস্টার থেকে বেশ খানিকটা ভিতরে ছিল আমাদের ক্লাব। সে কারণে বেশির ভাগ মানুষই বসিরহাটের মহুয়া পর্যন্ত পৌঁছোতেন না।

পুজোর ভাবনায় মগ্ন...। নিজস্ব চিত্র।

পুজোর ভাবনায় মগ্ন...। নিজস্ব চিত্র।

দেবীদাস ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৩৭
Share: Save:

ফুটবলার মিহির বসুর ক্লাব ইয়ংস্টার থেকে বেশ খানিকটা ভিতরে ছিল আমাদের ক্লাব। সে কারণে বেশির ভাগ মানুষই বসিরহাটের মহুয়া পর্যন্ত পৌঁছোতেন না। ফলে আমাদের কাছে প্রতিযোগিতাটা ছিল তীব্র। নতুন কিছু করার ইচ্ছেটা ক্রমে প্রবল হচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে যখন পাড়ার সকলে চিন্তিত, সে সময়ে আমি আর আমার পরিচিত সুকুমার ভট্টাচার্য পাড়ার ছেলেদের নিয়ে মুসুরির ডাল আর মুদিখানার দ্রব্য দিয়ে তৈরি করলাম প্রতিমা।

একটু অন্য রকম করার চেষ্টা। কিন্তু চতুর্থীর দিন দেখি ডালের মধ্যে ছাতা ধরে যাচ্ছে। প্রতিমা কালো হয়ে যাচ্ছে। তা দেখে আমার কী কান্না। পরে তা ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গণেশটাই ফের বানাতে হয়েছিল। সে বার আমাদের মণ্ডপেও ভিড় হয়েছিল। তখন বুঝেছিলাম, সৃষ্টির কী আনন্দ।

এরপরে সন্দেশ, চুমকি, দেশলাইয়ের কাঠি, মোম, সোলা এমনকী, ভিড় টানতে মাছের আঁশ দিয়েও প্রতিমা গড়া হয়েছিল। অন্যান্যবার পুজোর সময়ে অন্য পাড়ার ভিড় দেখে খুব মন খারাপ হতো। তাই নিজের পাড়ার পুজোর ধরনটাই বদলে ফেললাম।

পুজো মানে আমার কাছে অনেকটা আনন্দ একসঙ্গে পাওয়া। পাড়ার মণ্ডপে বসে হইহুল্লোড় করা। আর নতুন পোশাক পরা। তা ছাড়া, পুজোর সময় থাকত নাটক, যাত্রা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চেয়ারে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে গান শোনার কথা খুব মনে পড়ে। আর ছিল ধুনুচি নাচের তালে তালে নাচ। একটু বড় হওয়ার পরে বন্ধুরা মিলে চলে যেতাম টাকির জমিদার বাড়িতে মোষ বলি দেখতে।

কিন্তু আমাদের মণ্ডপে যখন ভিড় হতে শুরু করল, তখন যে কী আনন্দ, বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের ছেলেবেলায় মোবাইল-টোবাইল ছিল না। কিন্তু পকেটে আমরা নোটবুক রাখতাম। তাতে কোন কোন ঠাকুর দেখলাম, তা লেখা থাকত। মণ্ডপের ছবি আঁকার নমুনাও থাকত।

বিজয়ার দিনে দেবীকে নৌকোয় তোলার পরে চোখ ভিজে যেত। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হতো না। কারণ, তারপরেই শুরু হয়ে যেত বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান। নাচ গান নাটকের রিহার্সালে মেতে উঠত সারা পাড়া।

এখন টিভি সিরিয়াল পরিচালনার কাজে সারা বছর ব্যস্ত থাকি। অভিনয়ের কাজও থাকে। তবু চেষ্টা করি, পুজোটা যেন ছোটবেলার পাড়াতেই কাটাতে পারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Debidas Bhattacharya Puja Memory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE