Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গেরুয়া-অর্জুনের নতুন ভূমিকায় তাজ্জব শিল্পাঞ্চল

অর্জুন ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, এ বার লড়াই যে সহজ হবে না, তা বিজেপিতে যোগ দিয়ে বুঝতে পেরেছেন অর্জুন।

 ভোলবদল: অর্জুন এখন (বাঁ দিকে) এবং তখন। —ফাইল চিত্র

ভোলবদল: অর্জুন এখন (বাঁ দিকে) এবং তখন। —ফাইল চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

পরিবর্তন আক্ষরিক অর্থেই!

দলবদল করে নিজেকে গেরুয়া প্রমাণে এমনই চেষ্টা তাঁর, আগে যে সাদা জামা, সাদা ট্রাউজার্স ছিল পরনে, সে সবও বদলে গিয়েছে। এখন পোশাকের রঙ গেরুয়া তো বটেই, মাঝে মধ্যে যে স্কুটারে প্রচারে বেরোচ্ছেন, তারও রঙ গেরুয়া! স্বাভাবিক ভাবেই এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, অর্জুন সিংহ কি নিজেকে ‘আগ মার্কা’ গেরুওয়া প্রমাণে নেমেছেন?

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির টিকিটে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়া অর্জুন অবশ্য বলছেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুরই তো বদল হয়। এটা সে রকমই ধরে নিন।’’

দীর্ঘদিনের পুরনো দল বদলে অর্জুনের প্রচার-আন্দোলনের ধরনও বদলেছে। গত কয়েক বছরে তৃণমূল বিধায়ক অর্জুনকে সচরাচর রাস্তায় দেখাই যায়নি। বর্তমানে বিজেপির প্রার্থী অর্জুনের বেশিরভাগ সময় কাটছে রাস্তাতেই। কখনও ট্রেন আটকাচ্ছেন, কখনও বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় শুয়ে পড়ছেন। এক সময়ে ‘বাহুবলী’ নেতা হিসাবে পরিচিত অর্জুনকে ইদানীং প্রায়ই দেখা যাচ্ছে থানার সামনে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে।

এমন সব দৃশ্যকল্প যে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, তা হল, তৃণমূলের হাত মাথা থেকে সরে যাওয়ার পরে কী অর্জুনের দাপটও কমছে? চাপে আছেন কি এক সময়ে নিজেকে ‘ব্যারাকপুরের মসিহা’ পরিচয় দেওয়া নেতা?

অর্জুন অবশ্য তা মানতে নারাজ। স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বললেন, ‘‘ব্যারাকপুরে তৃণমূল তখন ক’জন করত? সিপিএমের ভয়ে বিরোধীরা কেউ বাইরে বেরনোর সাহস করত না। আমি তো তখন রাস্তায় নেমেই রাজনীতি করেছি। শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে তো রাস্তাতেই নামতে হয়।’’

অর্জুন ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, এ বার লড়াই যে সহজ হবে না, তা বিজেপিতে যোগ দিয়ে বুঝতে পেরেছেন অর্জুন। তাঁর বাড়ির সামনের দীর্ঘদিনের সিপিএমের পার্টি অফিসটি রাতারাতি তৃণমূলের পার্টি অফিসে বদলে গিয়েছিল। সিপিএম এবং বিজেপির যে সব নেতা এত দিন তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন, রঙ বদলে তাঁরাও ঘাসফুল শিবিরে ঢুকে পড়েছেন। আর তারপরেই দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে গোলমাল।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গত বছরের ঘটনা, নোয়াপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনের দিনে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি একজোট হয়ে অর্জুনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল। বিজেপি প্রার্থী কার্যত ভোট বয়কট করে ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসকের ঘরে প্রতিবাদ জানান। কংগ্রেস প্রার্থী দলবল নিয়ে মহকুমাশাসকের অফিসে ধর্নায় বসেন। সিপিএম প্রার্থীও সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছিলেন।

বছরের ব্যবধানে এ বার সেই ভূমিকায় অর্জুন। তৃণমূলের লোকেরা তাঁদের পার্টি কর্মীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছেন।

তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী অবশ্য বলছেন, ‘‘ব্যর্থরা সব সময়েই বাহানা খোঁজে। মনগড়া সন্ত্রাসের কথা তেমনই বাহানা। ব্যারাকপুরের মানুষ ওঁকে (অর্জুন) চেনেন, আমাকেও চেনেন। নির্ণায়ক তো তাঁরাই।’’

দল বদলের সময়ে অর্জুন যেমনটা দাবি করেছিলেন, তেমন জনসমর্থন কি তা হলে নেই অর্জুনের? ২২ জন কাউন্সিলর তাঁর সঙ্গে আছেন, এমন দাবি করলেও ভাটপাড়া পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটিতে দেখা গিয়েছে, মাত্র ১১ জন তাঁর সমর্থনে হাত তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে সরতে হয়েছে পুরপ্রধান পদ থেকে।

আস্থা ভোটে হেরে অর্জুন বলেছিলেন, ‘‘খেলা এখনও বাকি।’’ ২৩ মে-র ফলাফলই বলে দেবে, শেষ খেলায় হাসি ধরে রাখতে পারেন কিনা শিল্পাঞ্চলের ডাকাবুকো অর্জুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE