বৈঠক: পুলিশের সামনে সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন ওঁরা। নিজস্ব চিত্র
ওঁদের হাত ধরেই গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় রমরমিয়ে চলত চোলাইয়ের কারবার। নিজেরা চোলাই তৈরি করে পাইকারি বিক্রিও করতেন। ওঁদের হাত ধরেই গোটা ব্লকে ছড়িয়ে পড়েছিল চোলাই বিক্রি। বাড়ছিল নেশাড়ুর সংখ্যা। কিন্তু পুলিশের ধরপাকড়, গ্রামবাসীদের লাগাতার চাপে ব্যবসা মার খাচ্ছিল। নিজেরাও বুঝতে শুরু করেছিলেন, বেআইনি এই ব্যবসায় বহু সংসার ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
শেষমেশ, চোলাইয়ের কারবার ছেড়ে সুস্থ জীবনযাবনের লিখিত অঙ্গীকার করলেন ওঁরা পুলিশের কাছে।
বাংলাদেশ সীমান্ত-লাগোয়া বাগদা থানার আষাঢ়ু পঞ্চায়েতের গাঙ্গুলিয়া এলাকার দাসপাড়া ও বর্ডারপাড়া গ্রামের দিলীপ দাস, মৃত্যুঞ্জয় দাস, মনোরঞ্জন দাস, নীলকমল দাস, রাজীব দাস এবং অর্জুন দাসরাই ছিলেন চোলাই কারবারের হোতা। তাঁদের এই সিদ্ধান্তে গোটা এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা কমবে বলে আশা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের। গ্রামবাসীদেরও অনেকে আশ্বস্ত।
রবিবার বাগদা থানার ওসি আশিস দলুই দাসপাড়া এলাকায় চোলাই বিক্রি ও নেশা বন্ধ করতে একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য গণেশ ঘোষ এবং রিনা দাস। গ্রামের বহু মানুষ ভিড় করেছিলেন। ওই শিবিরেই উপস্থিত হয়ে ওই ছয় চোলাই কারবারি আশিসবাবুর কাছে লিখিত ভাবে অঙ্গীকার করেন, চোলাইয়ের কারবার আর করবেন না। অঙ্গীকার ভঙ্গ করলে আইনগত যা শাস্তি আছে, তা মাথা পেতে নেবেন।
মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘গ্রামের সকলেই বলছিলেন, গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমরাও ভেবে দেখলাম, কাজটা ভাল করছি না। তাই গ্রামে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে আমরা কারবার ছেড়ে দিলাম।’’ তাঁরা প্রথমে যোগাযোগ করেছিলেন গণেশবাবুর সঙ্গে। তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। গণেশবাবুর কথায়, ‘‘ওঁদের ব্যবসার জন্য গ্রামের বহু বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকত। নেশা করে বাড়ি ফিরে পুরুষেরা মহিলাদের মারধর করতেন। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট হতো।’’ গণেশবাবু জানান, যাঁরা বেআইনি কারবার ছাড়লেন, তাঁদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কারবারিদের বোধোদয়ে খুশি গ্রামের সাধারণ মানুষ। স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্রী বলে, ‘‘বাড়িতে চোলাই খেয়ে এসে বাবা রোজই অশান্তি করে। লেখাপড়া করা যায় না। এ বার পরিবেশটা বদলালে যদি বাবা নেশা ছাড়ে, তা হলে বাড়ির পরিবেশটাই বদলে যাবে।’’
পুলিশ খোঁজ-খবর রাখবে, কেউ গোপনে ফের আগের কারবার চালাচ্ছে কিনা, সে দিকে। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় বলেন, ‘‘চোলাইয়ের কারবার বন্ধ করতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও আবগারি দফতর ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরেরও আয়োজন করা হচ্ছে। আমরা চাই ওই কারবারিদের মতো সকলেই কারবার ছেড়ে দিয়ে সুস্থ্য সমাজ তৈরির লক্ষে এগিয়ে আসুন। চোলাই কারবারের বিরুদ্ধে কোনও আপস করা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy