Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আক্রান্তদের খোঁজে শুরু হল সমীক্ষা

গাইঘাটাতেই আর্সেনিকে মৃত ৩৪

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত এক দম্পতির মারা যাওয়া এবং সেই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় নড়েচড়ে বসল স্বাস্থ্য দফতর।

আর্সেনিক-আক্রান্ত: গাইঘাটায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

আর্সেনিক-আক্রান্ত: গাইঘাটায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

   সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত এক দম্পতির মারা যাওয়া এবং সেই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় নড়েচড়ে বসল স্বাস্থ্য দফতর। বুধবার দুপুরে গাইঘাটার বিএমওএইচ ভিক্টর সাহার নেতৃত্বে চিকিৎসকের একটি দল গাইঘাটার বিষ্ণুপুর এলাকায় যান। মৃত দম্পতি বলরাম দাস (৬৫) ও বিমলা দাসের (৫৫) বাড়িতেও যান তাঁরা। এলাকায় আর্সেনিক দূষণে আক্রান্তদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও সংগ্রহ করেন তাঁরা।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের হিসেবে বিষ্ণুপুর এলাকায় আর্সেনিক দূষণে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ জন। আক্রান্তরা কতদিন ধরে ভুগছেন, কী খাদ্য বা ওষুধ তাঁরা খাচ্ছেন সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত চিকিৎসার অভাব ও প্রোটিন নির্ভর খাবারের অভাবেই ওই এলাকায় আক্রান্তরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং মারা যাচ্ছেন।
বছর পঁচিশ আগে একটি সমীক্ষার পরে প্রথম জানা যায়, এখানকার মানুষের শরীরে আর্সেনিক-বিষ প্রবেশ করছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মূলত ওই এলাকায় মানুষ যে জল ব্যবহার করতেন তাতে আর্সেনিকের মাত্রা ছিল সহনসীমার চেয়ে অনেকটাই বেশি। তবে এখন নতুন করে আর কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন না।’’ ‘আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি’র সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় এমন কোনও পরিবার খুঁজে পাওয়া কঠিন সেখানে কেউ অসুস্থ নন। কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস এ দিন এলাকায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর এলাকায় ব্লক স্বাস্থ্য দফতর বা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দল এই প্রথম খোঁজ-খবর নিতে এলেন। আমরা তাঁদের কাছে এলাকায় আক্রান্তদের চিকিৎসা ও প্রোটিন যুক্ত খাবারের ব্যবস্থা করার দাবি করেছি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর এলাকায় আক্রান্তরা বেশির ভাগই দিনমজুরি-খেতমজুরির কাজ করেন। তাঁদের পক্ষে ওষুধ ও পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর্সেনিক আক্রান্তদের জন্য পুষ্টিকর খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা তাঁরা পাচ্ছেন না বলেই অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে। ভিক্টর বলেন, ‘‘স্থানীয় শিমুলপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সপ্তাহে একদিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে আর্সেনিকে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আক্রান্তরা শিমুলপুরের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান না। গ্রামবাসী দিনমজুরির কাজ করেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলে একদিনের রুজি তাঁদের বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্তরা যাতে চিকিৎসা করাতে যান সে জন্য তাঁদের বোঝানো হচ্ছে।
বলরাম ও বিমলার মৃত্যুর ঘটনার পর এলাকায় আর্সেনিক দূষণে আক্রান্তেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকার যদি আমাদের চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা না করেন তা হলে আমাদের মৃত্যু ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই।’’
মঙ্গলবার দুপুরে আর্সেনিক-মুক্ত পানীয় জল ও চিকিৎসার দাবিতে কমিটির পক্ষ থেকে গাইঘাটা বিডিও অফিসে আক্রান্তরা বিক্ষোভ দেখান। অশোক বলেন, ‘‘গাইঘাটা ব্লকে এখন পর্যন্ত ৩৪ জন আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষ মারা গিয়েছেন। অনেকেই মৃত্যুর দিন গুনছেন। আমরা আক্রান্তদের তালিকা প্রস্তুত করে ব্লক প্রশাসনের কাছে জমা দিচ্ছি। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা গ্রামে যাওয়ায় খুশি আক্রান্তরা। এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘মাসে হাজার তিনকে টাকা ওষুধের জন্য খরচ। যা আমাদের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Arsenic Pollution Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE