Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডিঙা বাইছে গোবরডাঙা

কোথাও ঘরের মধ্যে জল ঢুকে পড়েছে। কোথাও রাস্তায় কোমর সমান জল। কোথাও আবার মানুষ টিনের ডিঙায় করে যাতায়াত করছেন। কেউ কেউ ঘর ছেড়ে মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন আশ্রয়ের খোঁজে। যমুনা নদীর জল ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকে এই বিপত্তি এখন গোবরডাঙার বিস্তীর্ণ এলাকায়। দেখা গেল, বাসিন্দাদের বাড়ির সামনে ছোট ছোট টিনের তৈরি ডিঙা।

পাকা ঘাট বা গন্ধর্বপুর। সর্বত্র একই ছবি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

পাকা ঘাট বা গন্ধর্বপুর। সর্বত্র একই ছবি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

কোথাও ঘরের মধ্যে জল ঢুকে পড়েছে। কোথাও রাস্তায় কোমর সমান জল। কোথাও আবার মানুষ টিনের ডিঙায় করে যাতায়াত করছেন। কেউ কেউ ঘর ছেড়ে মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন আশ্রয়ের খোঁজে। যমুনা নদীর জল ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকে এই বিপত্তি এখন গোবরডাঙার বিস্তীর্ণ এলাকায়।

দেখা গেল, বাসিন্দাদের বাড়ির সামনে ছোট ছোট টিনের তৈরি ডিঙা। তাতে করেই মানুষজন যাতায়াত করছেন। বানভাসি হওয়ার অভিজ্ঞতা সকলেরই কমবেশি আছে। তাই নিজেদের সুবিধার কথা ভেবে ডিঙি তৈরি করে রাখেন তাঁরা।

রবিবারের একদিনের ভারী বৃষ্টিতেই এই হাল। ফের একবার সামনে এনে দিল ১৮৭০ সালে তৈরি হওয়া গোরবডাঙা পুরসভা এলাকার বেহাল নিকাশির ছবিটা। ফের একবার জলবন্দি মানুষ দাবি তুললেন, যমুনা নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি (৩, ৪, ৮, ১৪, ১৫, ২, ১১, ৫, ৭, ১১ এবং ১৭) ওয়ার্ডেই কোথাও বেশিরভাগ এলাকায় কোথাও বা আংশিক এলাকায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। নালাগুলি জলে উপচে পড়ছে।

গোবরডাঙা শহরের নিকাশির প্রধান মাধ্যম যমুনা নদী এবং কঙ্কনা বাওর। কিন্তু শহর এলাকায় যমুনা নদী সংস্কারের অভাবে প্রায় মজে গিয়েছে। কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে জলের স্রোত। নদীর জল ধারণের ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্ষার সময়ে নদীর জল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যমুনা নদী সংস্কার না হলে নিকাশির সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না। পাশাপাশি তাঁরা শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য দায়ী করেছেন অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি হওয়া নিকাশি নালাগুলিকেই। তাঁদের অভিযোগ, নালাগুলির গভীরতা ঠিক নেই। তা ছাড়া, বিভিন্ন সময়ে শুধু লোক দেখাতেই নালা তৈরি করা হয়েছে, যা আদৌ সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক হয়নি। সেই সব নালা দিয়ে বৃষ্টির জমা জল বেরোতে পারে না। যমুনা নদী বা বাওরের সঙ্গেও সেগুলির যোগ নেই।

বৃষ্টিতে সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি হঠাৎ কলোনি, পাকাঘাট কলোনি, মিলন কলোনি, গন্ধর্বপুরের মতো বেশ কিছু এলাকার। সোমবার পাকাঘাট কলোনিতে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে। কোথাও আবার জলের গভীরতা কোমর সমান। গোটা যমুনা নদীটাই যেন উঠে এসেছে লোকালয়ে। গৌতম মাঝি নামে এক ব্যক্তি বাড়ি থেকে বেরোবেন বলে জামা-প্যান্ট ছেড়ে গামছা পড়ে নিলেন। বললেন, ‘‘ঘরে জল ঢুকব ঢুকব করছে। আর একটু বৃষ্টি হলেই বাড়ি ছাড়তে হবে। রাস্তায় কোমর সমান জল। তাই বেরনোর আগে গামছা পড়ে নিলাম।’’

সূচিরানি বারুই নামে এক প্রৌঢ়া লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। ঘরে জল ঢোকায় তিনি মালপত্র নিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে ছিলেন। বললেন, ‘‘২০০০ সালের আগে পর্যন্ত আমাদের জলে ডুবতে হতো না। অপরিকল্পিত ভাবে একবার যমুনা কাটা হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছরই আমাদের ঘরছাড়া হতে হচ্ছে।’’ যমুনা নদীর সংস্কারের দাবি তুললেন তিনিও। এলাকার অনেকেই জানান, কয়েক বছর আগে যমুনা থেকে পলি তুলে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু নদীর পলি পাড়ে রাখার ফলে ফের জলেই মিশে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বাসিন্দারা অভিজ্ঞতা, জমা জল সরতে সরতে প্রায় দেড় মাস লেগে যাবে।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের গন্ধর্বপুর এলাকার বিস্তীর্ণ জায়গায় জল জমে গিয়েছে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ পড়ুয়াদের। বাড়ির উঠোনে জলে থইথই। স্থানীয় কাউন্সিলর তুষার ঘোষ রাস্তায় নেমে কী ভাবে জল সরানো যায়, তার দেখভাল করছিলেন। জানালেন, ভারী বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকেন সকলে। এই বুঝি এলাকা ভেসে গেল। পাম্প চালিয়ে কিছুটা জল বের করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। কিন্তু এটাও মেনে নিলেন, পুরো জল বের করা সম্ভব নয়। একটি হাইড্রেন করে তার মাধ্যমে জল যমুনা ও বাওরে ফেলতে না পারলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয় বলে স্বীকার করছেন তিনিও।

পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রায় এক হাজার পরিবার এখন জলবন্দি। বৃষ্টি না থামলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। কাউন্সিলর তৃণমূলের শঙ্কর দত্ত জানালেন, যমুনা নদী সংস্কারের জন্য সেচ দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জানানো হয়েছে কচুরিপানা সরানোর বিষয়টিও। কাজের আশ্বাস মিলেছে বলেও তাঁর দাবি। আরও আশার কথা শুনিয়েছেন শঙ্করবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে শীঘ্রই পরিকল্পিত ভাবে হাইড্রেন করা হবে। যা তিন দিক থেকে শহরের জমা জল যমুনা ও কঙ্কনা বাওরে নিয়ে গিয়ে ফেলবে। ওই প্রকল্পের জন্য ২ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার্স দফতর থেকে।’’

এত কিছুর পরেও কিন্তু মানুষের একটাই দাবি। যমুনা নদীর সংস্কার হোক। তাঁদের যুক্তি, যমুনার জল ধারণের ক্ষমতা না বাড়লে উল্টে সেই জলই লোকালয়ে ঢুকবে। আপাতত অবশ্য শুধু জমা জল সরার অপেক্ষায় আছেন শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gobardanga Flooded Heavy Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE