নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরে কেউ। কেউ আবার জঙ্গলে গিয়ে মধু সংগ্রহ করে সংসার চালান। ওঁদের বিনোদন বলতে দুর্গাপুজো। তাই তো নতুন জামা-কাপড় না কিনে পুজো করেন ওঁরা।
কুলতলি ব্লকের দেউল বাড়ি পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকার দু’টি পাশাপাশি গ্রাম শ্যামনগর-দুর্গাপুর। আদিবাসী অধ্যুষিত ওই দুই গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ মৎস্যজীবী। ওই এলাকায় কাছাকাছি বড় পুজো বলতে একটি সর্বজনীন পুজো। কিন্তু তাও ৫-৭ কিলোমিটার দূরে। এলাকায় যাতায়াতের রাস্তার কোনও উন্নয়ন হয়নি। নদীবাঁধের সরু রাস্তা ধরে মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। তাই পুজো দেখার সৌভাগ্য বাড়ির ছোট কিংবা মহিলাদের হয় না বললেই চলে। এলাকার এই অবস্থা দেখে বছর পনেরো আগে এগিয়ে আসে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাঁরাই প্রথম পুজো শুরু করেন। সেই পুজোই চলে আসছে। তবে এখন এলাকার মানুষই পুজোর দায়িত্ব নেন।
প্রায় হাজার দেড়েক মানুষের বসবাস ওই দুই গ্রামে। কাজের সূত্রে বেশির ভাগই বাইরে থাকেন। কিন্তু পুজোর সময় সকলে বাড়ি ফেরেন। অন্য খরচ কমিয়ে পুজোর চাঁদা দেন। বেশির ভাগই পুজোর নতুন জামা-কাপড় কেনেন না। ওই টাকাই পুজো কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
গ্রামের একটি ফাঁকা মাঠে মণ্ডপ তৈরি করে পুজো হয়। এ বারে কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হয়েছে। ডাকের সাজের প্রতিমা হচ্ছে। মণ্ডপের পাশেই তৈরি হয় প্রতিমা। মঙ্গলা সর্দার, শকুন্তলা সর্দার নামে পাড়ার মহিলারা বলেন, ‘‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে সংসার চালাই। বড় পুজো দেখতে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই কষ্ট করে গ্রামে পুজোর আয়োজন করা হয়।’’ এতে তাঁদের সঙ্গে বাড়ির ছোটরাও আনন্দে মাতে।
এ বারে বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে কৃষিজমির। নষ্ট হয়েছে ফসলও। কিন্তু তাও পুজো বন্ধ হতে দেননি পুজো কমিটির সম্পাদক অনিল সর্দার, ধীনেন সর্দারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পুজোর আয়োজন করতে কষ্ট হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পুজো বন্ধ হতে দেওয়া যায় না। গ্রামের মানুষগুলির মুখে হাসি ফোটাতে পেরে ভাল লাগছে।’’
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পুজোর দিনগুলিতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বসবে ছৌ নাচের আসরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy