Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
প্রাণ গেল আরও ৬ জনের
Dengue

‘সুস্থ’ হয়ে ছাড়া পেয়েও মৃত্যু ৬ বছরের গাজির, ক্ষোভ পরিবারের

গত চার দিন ধরে চিকিৎসার পরে ‘সুস্থ’ বলে হাসপাতাল থেকে ছুটি মেলে। কিন্তু তারপরেই এই বিপত্তি।

বুক-ভাঙা: দেগঙ্গায় মৃতের পরিবার। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

বুক-ভাঙা: দেগঙ্গায় মৃতের পরিবার। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৩
Share: Save:

ধুম জ্বর গায়ে চার দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে ছুটি পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি ফিরেছিল গোলাম মোস্তাফা গাজি (৬)। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট। ফের সিরহাট জেলা হাসপাতালে আনা হলে রাতের দিকে মারা যায় ছোট্ট ছেলেটি।

তার রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল বলে অবশ্য মানছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চিকিৎসায় গাফিলতির কথা স্বীকার করতে চায়নি। হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার জানান, এখনও পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৩০ হাজারের বেশি জ্বরে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা হয়েছে। ৯০০ জনের রক্ত পরীক্ষা হয়েছে। প্রায় ৩০০ জনের রক্তে ডেঙ্গির লক্ষণ মিলেছে। তবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত একজনেরই মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

বসিরহাটের নিমদাঁড়িয়া-কোদালিয়া পঞ্চায়েতের ঘুসুরি গ্রামে বাড়ি গোলামের।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন সাতেক আগে বসিরহাটের নিমদাঁড়িয়া-কোদালিয়া পঞ্চায়েতের ঘুসুরি গ্রামের গোলামের জ্বর আসে। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মেলে।

গত চার দিন ধরে চিকিৎসার পরে ‘সুস্থ’ বলে হাসপাতাল থেকে ছুটি মেলে। কিন্তু তারপরেই এই বিপত্তি।

ক্ষোভে ফেটে পড়েন মৃতের আত্মীয়-পরিজনেরা। ঠিকমতো সুস্থ হওয়ার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। আব্দুল বারি গাজি, নুর ইসলাম গাজির কথায়, ‘‘এই গ্রামের অনেকেই হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। অনেককে সুস্থ বলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলেও ফের জ্বরে পড়ছেন তাঁরা। আবার আনতে হচ্ছে হাসপাতালে।

বুধবার বাদুড়িয়ার পূর্ব বেনা গ্রামের বাসিন্দা ওহিদা বিবিও (৬২) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে মারা যান।

জ্বরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বারাসত ও দেগঙ্গাতেও। বুধবার ভোরে বারাসতের চন্দনপুরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান (৩৫) মারা় যান। মঙ্গলবার রাতে দেগঙ্গার বেলপুরের বাসিন্দা মোস্তাকিন মণ্ডল (২৩) এবং মামুরাবাদের বাসিন্দা তাজমিরা বিবিরও (৩৮) মৃত্যু হয়েছে জ্বরে ভুগে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চন্দনপুরের বাসিন্দা মতিয়ার মারা গিয়েছেন মাত্র একদিনের জ্বরেই। মঙ্গলবার তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বুধবার ভোরে সেখানেই মারা যান মতিয়ার।

বেড়াচাঁপা ১ পঞ্চায়েতের বেলপুর গ্রামের মোস্তাকিনের রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল সোমবার। বেসরকারি ল্যাবের সেই রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। মোস্তাকিনের ভাই ইয়াসিন বুধবার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার দাদা অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আমরা বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে সন্ধ্যায় আরজিকর। বহির্বিভাগে রেখে দাদার চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই রাতে মারা যান।’’

চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের মামুরাবাদ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা তাজমিরার শুক্রবার জ্বর আসে। মঙ্গলবার হাড়োয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে সন্ধ্যায় বেলেঘাটা আইডিতে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক। পথেই মারা যান ওই মহিলা।

অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর স্কিম এলাকার বাসিন্দা কাকলি রায়কে (৩৫) সোমবার দুপুরে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বুধবার মারা যান তিনি। সুপার সোমনাথ মণ্ডল জানান, তাঁর রক্তে এনএস-১ পজিটিভ ছিল। হঠাৎ মুখে রক্ত উঠে মারা যান।

কাকলিদেবীর মৃত্যুর পরে আত্মীয়-পরিজনেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁর স্বামী বাদলবাবু বলেন, ‘‘সোমবার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। এক শয্যায় তিনজনকে রাখা হয়েছিল। দিনে একশো টাকা দিয়ে আয়া রেখেছিলাম। কিন্তু এ দিন স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পরে আয়াদের বারবার বলা হলেও তাঁরা কোনও গুরুত্ব দেননি।’’ সুপার জানিয়েছেন, কাকলিদেবীর প্লেটলেট কাউন্ট ছিল ২ লক্ষ ৩০ হাজার। শারীরিক অবস্থাও ততটা খারাপ ছিল না। কিন্তু হঠাৎই অবনতি হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Malaria Water pollution Water stagnation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE