Advertisement
E-Paper

‘রেফার’ না হয়েও প্রাণ বাঁচল দুই ডেঙ্গি রোগীর

তবু তারই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প নজির রাখছে জেলার হাসপাতাল। উদাহরণ মিলেছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ক্ষেত্রে।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১১
পরিষেবা: রোগীকে দেখভাল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

পরিষেবা: রোগীকে দেখভাল। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

জেলা বা মহকুমা হাসপাতালের ‘রেফার’ রোগ নিয়ে অভিযোগ ভুরি ভুরি। এ দিকে, ডেঙ্গি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কলকাতার দূরবর্তী এলাকার হাসপাতালের চিকিৎসকদের। কলকাতার হাসপাতাল, নার্সি‌হোমেও ঠাঁই মিলছে না অনেক সময়ে। হয়রান হচ্ছেন রোগী ও তাঁর পরিবার। বাড়ছে মৃত্যুর আশঙ্কা।

তবু তারই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প নজির রাখছে জেলার হাসপাতাল। উদাহরণ মিলেছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের ক্ষেত্রে।

নদিয়ার দত্তফুলিয়া থেকে সোমা অধিকারী এসেছিলেন বনগাঁ শহরের শিমুলতলা, বাপের বাড়িতে। ১ নভেম্বর জ্বরে পড়েন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাতুড়ে চিকিৎসককে দেখিয়েও জ্বর না কমায় ৪ নভেম্বর রাতে বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জ্বরের সঙ্গে ছিল পেটে ব্যথা, বমি। পর দিন সকাল থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দুপুর অচৈতন্য হয়ে পড়েন। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। প্লেটলেট সংখ্যাও কমে দাঁড়ায় ৩২ হাজারে। লিভার কাজ করছিল না। হিমোগ্লোবিন ও রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে কোনও রোগীকে কলকাতা বা বারাসতের হাসপাতালে রেফার করে দেওয়াই দস্তুর।

কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিলেন হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার। তিনি সোমাদেবীকে কলকাতায় না পাঠিয়ে হাসপাতালের এইচডিইউ-তে (হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট) ভর্তি করেন নিজের দায়িত্বে। মনে হয়েছিল, ওই অবস্থায় কলকাতায় পাঠানো মানে পথেই মৃত্যুর আশঙ্কা আছে।

কিন্তু বনগাঁয় রেখে চিকিৎসা করালেও বিপদের ঝুঁকি কম ছিল না। সোমাদেবী গত বছরেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে তাঁর সংক্রমণ ছিল আরও বেশি।

টানা পাঁচ দিন ভেন্টিলেশনে রেখে গোপালবাবুর সঙ্গে শান্তনু সরকার, কৃশাণু সরকার, জীবনকৃষ্ণ মণ্ডল, সৌরভ পাল, রঞ্জন হাজরা মতো চিকিৎসকেরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা গিয়েছেন। এখন সোমাদেবী সম্পূর্ণ সুস্থ। আজ, বৃহস্পতিবার ছুটি হওয়ার কথা তাঁর।

গোপালবাবু তাঁর চিকিৎসক দলের সঙ্গেই কৃতিত্ব ভাগ করে নিচ্ছেন। নিজের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করেছিলেন সোমাদেবীর চিকিৎসার জন্য।

গোপালবাবুর কথায়, ‘‘আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ওঁর ইঞ্জেকশন, ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করেছি। কোনও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হলে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যেত।’’

সোমাদেবীর স্বামী গোলকবাবুর সামান্য আয়ের কাজ করেন। সোমাদেবী বললেন, ‘‘ডাক্তারবাবুদের জন্য নতুন জীবন পেলাম। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আমাকে বাঁচাতে যা করলেন, তা ভুলব না।’’

ইতিমধ্যেই বনগাঁ হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে যাওয়ার পথে দু’জন জ্বরে আক্রান্ত রোগী মারা গিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছিল কারণে-অকারণে ‘রেফার’ করার প্রবণতা নিয়ে।

শুধু সোমাদেবী নন, সরলা মণ্ডল নামে গোপালনগরের বাসিন্দা এক মহিলাকেও একই ভাবে সুস্থ করেছেন চিকিৎসেকরা। তিনি ৭ নভেম্বর জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পর দিন সন্ধ্যায় ডেঙ্গি শক সিনড্রোমে চলে যান। পালস ও রক্তচাপ কমে যায়। তাঁকেও নিজেদের দায়িত্বে হাসপাতালের ভেন্টিলেশনে রেখে সুস্থ করেছেন চিকিৎসকেরা। বাড়ি ফিরে গিয়েছেন রোগিনী।

হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘গোপালবাবু নিজে দায়িত্ব নিয়ে দুই জন রোগীকে হাসপাতালে রেখে সুস্থ করেছেন। তাঁদের রেফার করা উচিত ছিল। কিন্তু রেফার করলে পথে মারা যাওয়ারও আশঙ্কা ছিল।’’

Dengue patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy