ভাড়া ৩৫ টাকা টাকা না ৪৫ টাকা, তা নিয়েই বচসা শুরু হল অটো চালকের সঙ্গে এক তরুণ যাত্রীর। বচসা ক্রমে গড়াল হাতাহাতিতে। অন্য যাত্রীরা অটো থেকে নেমে সামাল দিলেন। এগিয়ে এলেন অন্য অটো চালকেরাও। অনেক দর কষাকষির পরে দিতে হল ৪০ টাকা। গজগজ করতে করতে ওই যাত্রী বললেন, ‘‘সন্ধের পরে ভাড়ার কোনও ঠিক নেই এই রুটে। কথা বললে শুধু ঝামেলাই বাড়ে।’’
কোথাও অতিরিক্ত যাত্রী বহন নিয়ে সমস্যা। কোথাও ভাড়া নিয়ে বচসা, মারপিট। রাস্তায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরে যানজট বাড়ানো— অটো-ট্রেকার নিয়ে এ সব সমস্যা যেন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন রুটে। জেলায় যান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি তেমন নেই বললেই চলে। নিত্য যাত্রীদের অভিযোগ, এ নিয়ে নানা সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হলেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না।
ক্যানিং মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় যাত্রী পরিবহণ মূলত অটো-ট্রেকারের উপরেই নির্ভরশীল। মহকুমার অধিকাংশ রুটে বাস চলাচল ঠিকমতো না করায় এই পরিস্থিতি। এরই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অটো-ট্রেকার চালকেরা জোরজুলুম চালান বলে নিত্যযাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ।
যাত্রী পরিবহণেরও কোনও দিশা নেই। ঠেসে ঠেসে অনেককে তোলা হয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বহু দুর্ঘটনাও ঘটেছে নানা সময়ে। প্রাণ গিয়েছে অনেকের।
সম্প্রতি কয়েকটি অটো দুর্ঘটনায় যাত্রীদের মৃত্যুর জেরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঠিক হয়, অটোতে ৫ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। কয়েক দিন সব ঠিকঠাক থাকলেও পরিস্থিতি ফের যে কে সেই। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অটোতে ৯-১০ জন করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। অরূপ পাল, রহিম গাজদের মতো নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, ‘‘এক সঙ্গে সাত-আট জন যাত্রী না হলে অটোচালকেরা গাড়ি স্টার্টই করতে চান না। হাতে কোনও কাজ থাকলে তাড়া দিলে উল্টে দুর্ব্যবহার করা হয়।’’
মহকুমার বিভিন্ন রুটে অটো চলাচল করলেও অধিকাংশ অটোরই রুট পারমিট নেই। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করলে এবং দুর্ঘটনা ঘটলে রুট পারমিট না থাকার কারণে অধিকাংশ সময়ে যাত্রীরা ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত পান না বলে অভিযোগ।
যাত্রীদের অভিযোগ, অটোতে ভাড়া নির্দিষ্ট থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে কোনও নিয়ময়েরই তোয়াক্কা করেন না অটো চালকেরা। যাত্রীদের থেকে ইচ্ছে মতো বাড়তি টাকা দাবি করা হয়। কখনও সেটা দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়। অটো চালকদের পিছনে রাজনৈতিক মদত আছে, তাই এই গা-জোয়ারি— এমনটাই মত অধিকাংশ যাত্রীর।
ক্যানিংয়ের অটো ইউনিয়নের সভাপতি বুলু মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা যাত্রী স্বাচ্ছন্দের বিষয়ে আমরা সব সময়েই সচেতন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমরা এমন অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নিই।’’
জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক চপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ক্যানিঙে এত দিন অটোর রুট পারমিট ছিল না। আমরা অনেক অটোকে পারমিটের আওতায় নিয়ে এসেছি। তবে এখনও কিছু বেআইনি অটো চলাচল করছে। আমাদের সব সময়ে নজরদারি চালানোর মতো পরিকাঠামো না থাকার ফলে ওই সব অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’’ তাঁর দাবি, চেষ্টা চলছে ওই সব অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্যের কথায়, ‘‘কিছু অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য। অটো ইউনিয়ানগুলিকেও এ বিষয়ে সাবধান করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy