অবরোধে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত ছাত্রীর মা। শুক্রবার। ছবি :নির্মল বসু
সময় মতো রক্ত জোগাড় করা হলেও এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বারো বছরের মেয়েটিকে তা দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার স্রেফ রক্ত না পেয়ে মারা যায় সুহানা ইয়াসমিন মণ্ডল। শুক্রবার সেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠল সুহানার বাড়ি লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া এলাকা। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে (খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) গ্রামে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এই দাবিতে আট ঘণ্টা পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক, নার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিকেল ৪টে নাগাদ অবরোধ ওঠে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এ দিন থেকেই তদন্ত শুরু করেছে বলে জানান এসএসকেএমের সুপার দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সকাল থেকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী ববি হাকিম ফোন করে সুপারের কাছে ঘটনাটি বিশদে জানতে চেয়েছেন। কিন্তু সে সব খবরে ক্ষতে মলম পড়েনি তেঁতুলিয়ার।
স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়ার কাছে ভোগলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন মণ্ডল শ্রম দফতরের কর্মী। তাঁর বড় মেয়ে সুহানা তেঁতুলিয়া গার্লস হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ত। গত মঙ্গলবার সহপাঠিনী সেলিমা খাতুনের সঙ্গে ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে ফিরছিল সুহানা। বাড়ির কাছেই দ্রুত গতিতে আসা লোহার রড-বোঝাই যন্ত্রচালিত ভ্যান তাদের ধাক্কা মারে। মাথা, কোমর, বুকে চোট পায় সেলিমা। সুহানার হাতে রড ঢুকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা দু’জনকে উদ্ধার করে বসিরহাট হাসপাতাল ভর্তি করান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য সুহানাকে পাঠানো হয় আরজিকর হাসপাতালে।
সুহানার জেঠা রেজাউল মণ্ডল এ দিন জানান, আরজিকর থেকে তাঁর ভাইঝিকে সরানো হয় এসএসকেএমে। সেখানে মঙ্গলবার রাতে সুহানার হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। বুধবার সকালে ডাক্তারেরা পরিবারকে চার ইউনিট রক্ত জোগাড় করতে বলেন। ওই দিন দুপুরে রক্ত জোগাড় করে আনার পরেও সেই রক্ত সুহানাকে দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রক্তের অভাবে ধুঁকতে থাকে মেয়েটি। বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মারা গিয়েছে সে। ওই রাতেই দেহ আনা হয় গ্রামে। বৃহস্পতিবার শেষকৃত্যের পরে এ দিন সকাল থেকে শুরু হয় অবরোধ। ছুটি দেওয়া হয় সুহানার স্কুলে।
সংগ্রামপুর-হাকিমপুর রাস্তায় এ দিনের অবরোধে সামিল হন সুহানার বাবা-মা। রাস্তায় বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা। সুহানার মা সাবিনা বিবি বলেন, “রক্ত ছিল। কিন্তু তা না পেয়ে তিলে তিলে মরল আমার মেয়েটা! এ ভাবে যেন আর কোনও মায়ের কোল খালি না হয়।” বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত জনতার সামনে হাতজোড় করেও অবরোধ তুলতে পারেননি। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আসতে হবে গ্রামে। স্বরূপনগরের বিডিও, সিআই, ওসি, বসিরহাটের এসডিপিও-র অনুরোধেও কাজ হয়নি। শেষে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্সের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় পুলিশ। আট ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে। পুষ্পেন্দুবাবু পরে বলেন, “আমাকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তা পাঠিয়ে দেবো।”
বসিরহাট জেলা হাসপাতালে এখনও ভর্তি সুহানার সহপাঠিনী সেলিমা। তার চিকিৎসার দায়িত্ব রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর নেবে বলে জানিয়েছেন পুষ্পেন্দুবাবু। সেলিমার শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন ডাক্তারেরা। এ দিন হাসপাতালে কোনওমতে সে বলে, “সুহানা ভাল আছে তো? ওকে বলবেন না কিন্তু, আমার শরীর ভাল নেই। শুনলে কষ্ট পাবে।”
কিশোরী অবশ্য জানে না তার বান্ধবী এখন সব কষ্টের অতীত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy