স্বরূপনগর সীমান্তে আটক করা গরু। (ডান দিকে) নিহত জওয়ান। ছবি: নির্মল বসু
গরুপাচার রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ গেল সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক জওয়ানের। পাল্টা গুলিতে ৪-৫ জন পাচারকারীও আহত হয়েছে বলে দাবি বিএসএফের। যদিও আহতদের নিয়ে বাংলাদেশের দিকে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর সীমান্তের খলসি গ্রামের ঘটনা।
বিএসএফ জানিয়েছে, হত রাশিকুল ইসলাম (২২) আলফা কোম্পানির ১৪৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের ডোমকলে। বিএসএফের কার্যনির্বাহী কমান্ড্যান্ট মহেশ্বর প্রসাদ জানান, খলসি চৌকির জওয়ানেরা নাইট-ভিশন ক্যামেরায় দেখতে পান, প্রচুর গরু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সীমান্তের দিকে। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘন কুয়াশায় চারদিক প্রায় দেখাই যাচ্ছিল না। জওয়ানেরা টর্চ জ্বালতেই গুলিবৃষ্টি শুরু হয়। একটি গুলি লাগে রফিকুলের ডান চোখের উপরে। জওয়ানেরাও পাল্টা গুলি চালান।
১০/৯-এস সীমান্ত-খুঁটির কাছে এই সংঘর্ষের পরে জখম রফিকুলকে নিয়ে যাওয়া হয় বসিরহাট হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে। সেখানেই মারা যান ওই জওয়ান। বিএসএফ সূত্রে খবর, পাচারকারীরা সংখ্যায় ছিল ৩০-৪০ জন। দু’পক্ষের মধ্যে ১২-১৪ রাউন্ড গুলি চলেছে। ৬২টি গরু আটক করেছে বিএসএফ। মহেশ্বর বলেন, “ঘটনা বিএসএফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে লিখিত জানানো হচ্ছে।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মাটিতে রক্তের ছোপ। সামনে কাঁটাতার-বিহীন লোহার খুঁটি। একটু এগিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কুষখালি গ্রামে পাহারা দিচ্ছেন বিজিবি-র জওয়ানেরা।
স্বরূপনগর সীমান্তে পাচারকারীদের হাতে বিএসএফের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। গত কয়েক বছরে এই নিয়ে তিন জন জওয়ানের প্রাণ গেল পাচারকারীদের হামলায়। আগে বিএসএফের কয়েকটি ছোট চৌকি পুড়িয়েছে পাচারকারীরা। হাকিমপুরে বিএসএফের একটি বড় চৌকি তছনছ করে তাতে আগুন লাগানোর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দাদের উপরেও পাচারকারীরা নানা সময়ে অত্যাচার করেছে। পাচারে বাধা পেয়ে কৈজুড়িতে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা। একই গ্রামে এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল তারা। কয়েকজন মহিলাকে অপহরণও করা হয়। গরুর পায়ের তলায় ফেলে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল পাচারকারীদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া, মারধর, ভাঙচুর, ডাকাতি, লুঠপাটের ঘটনা তো লেগেই থাকে।
স্থানীয়রা জানান, ভোরে গুলির শব্দ পেয়েছিলেন। তবে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। তাঁদের কথায়, “যারা বিএসএফ জওয়ানকে গুলি করে মারতে পারে, তাদের সঙ্গে আমরা পারব কী করে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy