Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চটকলে আগুন, পুরনো পরিকাঠামো নিয়েই লড়ছে দমকল

আগুনে পুড়ে গেল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ভাটপাড়ায় রিলায়েন্স চটকলের একটি গুদাম। মঙ্গলবার রাত থেকে দমকল কর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টার পরেও সর্বগ্রাসী আগুন আরও একবার মনে করিয়ে দিল শিল্পাঞ্চলে দমকলের দৈন্য দশার ছবিটাই। দমকল ও চটকল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘোষপাড়া রোডের পাশে গঙ্গার ধারে ওই চটকলের একটি গুদামে আগুন লাগে। রফতানির জন্য তৈরি হওয়া বস্তা রাখা ছিল সেখানে।

কারখানায় আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত দমকল কর্মীরা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কারখানায় আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত দমকল কর্মীরা। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৯
Share: Save:

আগুনে পুড়ে গেল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ভাটপাড়ায় রিলায়েন্স চটকলের একটি গুদাম। মঙ্গলবার রাত থেকে দমকল কর্মীদের আপ্রাণ চেষ্টার পরেও সর্বগ্রাসী আগুন আরও একবার মনে করিয়ে দিল শিল্পাঞ্চলে দমকলের দৈন্য দশার ছবিটাই।

দমকল ও চটকল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘোষপাড়া রোডের পাশে গঙ্গার ধারে ওই চটকলের একটি গুদামে আগুন লাগে। রফতানির জন্য তৈরি হওয়া বস্তা রাখা ছিল সেখানে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক ভাবে কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরাই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে দমকলও পৌঁছতে দেরি করেনি। কিন্তু আগুনের তীব্রতার কাছে দমকলের মান্ধাতা আমলের ‘ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম’ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। দফায় দফায় মোট ১৭টি ইঞ্জিন পাঠিয়েও বুধবার দুপুর পর্যন্ত আগুন নেভাতে পারেননি কর্মীরা। পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে বিশাল গুদাম। ভেঙে পড়েছে লোহার কাঠামো, শেড। তবে অন্য গুদামগুলি খানিকটা দূরে থাকায় সেখানে আগুন ছড়াতে পারেনি।

আগুন লাগার কারণ নিয়ে নিশ্চিত নন চটকল কর্তৃপক্ষ বা দমকল আধিকারিকেরা। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই বিপত্তি ঘটেছে। দমকল আধিকারিকেরা জানান, রাতের অন্ধকারে আগুন ভয়াবহ আকার নেওয়ায় প্রাথমিক ভাবে জল সঙ্কট দেখা দেয়। প্রথম দফায় এক এক করে ৭টি ইঞ্জিন কাজ করতে থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের সংখ্যাও বাড়াতে হয়। শেষে চটকলের মধ্যে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত নালা থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ চলে।

এই চটকলের প্রেসিডেন্ট প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “এমনিতেই চটের বাজার মন্দা যাচ্ছে। তার মধ্যে গুণমানে সেরা চটের বস্তার বেল মজুত ছিল ওই গুদামে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দমকল তাদের ব্যবস্থা নিয়ে চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব আগুন নেভানোর ব্যবস্থাকেই কাজে লাগিয়েছেন তাঁরা।”

এ দিকে, পুজোর আগে এই ক্ষতির বোঝা চাপায় বেতন ও বোনাস-সহ অন্য খরচ নিয়ে যেমন চিন্তিত চটকল কর্তৃপক্ষ, তেমনি উদ্বিগ্ন কর্মীরা। শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে অবশ্য উৎপাদন বাড়িয়ে লোকসান মেটানোর পদক্ষেপ করলে সে ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশান্তবাবু নিজে আশাবাদী। তাঁর কথায়, “এটা একটা দুর্ঘটনা। আমরা শ্রমিকদের কথা সব সময়ে মাথায় রাখি। তাই কী ভাবে সব কিছু ঠিকঠাক রেখে সুষ্ঠ ভাবে চটকল চালানো যায়, সেই চেষ্টা করছি।”

ফি বছর গঙ্গার ধারে শিল্পাঞ্চলের চটকলগুলিতে আগুন লাগে। কখনও গুদাম পুড়ে ছাই হয়। কখনও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়। প্রতিবারই দমকল ঘটনাস্থলে যায়। কঠিন লড়াইয়ের পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু তাতে আখেরে লাভ কিছু হয় না। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে দমকল মন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, শিল্পাঞ্চলে আগুন সমস্যা মোকাবিলায় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী ও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, গাড়ি আনা হবে। সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। দমকল কর্মীরা জানালেন, ইঞ্জিনগুলির পাম্পিং ব্যবস্থায় হোসপাইপের যা জোর, তার থেকে অনেক বেশি জোর থাকা প্রয়োজন। শিল্পাঞ্চলের ঘিঞ্জি এলাকায় যে কোনও ধরনের আগুনের মোকাবিলায়, বিশেষত যেখানে দাহ্য পদার্থ বেশি থাকে এমন কারখানা বা চটকলগুলিতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ইঞ্জিনগুলি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়া দরকার। পাম্প ও জলাধারের ব্যবস্থা ভাল থাকা উচিত। কিন্তু সে সব না থাকায় ছোট আগুন নেভাতে গিয়েও প্রায় দাবানলের মুখোমুখি হতে হয় দমকলকর্মীদের। এর পাশাপাশি রয়েছে অভিজ্ঞ কর্মীর সঙ্কট। গত কয়েক বছরে অভিজ্ঞ দমকলকর্মীদের অনেকে অবসর নেওয়ায় চুক্তিভিত্তিতে নতুন করে এই চাকরিতে আসা কর্মীদের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণের দক্ষতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলে দমকলকর্মীদেরই একাংশের অভিমত।

দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু যন্ত্রপাতি কিনেছি। কর্মীদের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আরও কিছু সরঞ্জাম কেনার চেষ্টা চলছে। মফস্সল-সহ শিল্পাঞ্চলের দমকলকেন্দ্রগুলিতে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE