Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তন্ত্রমতে পুজো পান শতাধিক বছরের প্রাচীন শ্মশানকালী

কালীপুজোর বাঁধা গতে মন্ত্র পড়ে পুজো নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার থানা এলাকার দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মহাশ্মশান কালীর পুজো অপরিবর্তিত প্রাচীন তন্ত্রমতেই। শতাধিক বছরের পুরনো পদ্ধতি মেনে দেবীর পেছনে সাজানো হয় ১০৮টি নরকঙ্কালের খুলি। পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে পুরোহিত তন্ত্রের নিয়ম মেনে দেবীর পুজো করে। অন্য উপকরণের মধ্যে অবশ্যই থাকবে সুরার বোতল, রান্না করা মাংস, কাঁচা ছোলা। আগে অবশ্য চোলাই ছিল পুজোর উপকরণ।

মগ্ন পুজারি। নিজস্ব চিত্র।

মগ্ন পুজারি। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মন্দিরবাজার শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৩
Share: Save:

কালীপুজোর বাঁধা গতে মন্ত্র পড়ে পুজো নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার থানা এলাকার দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মহাশ্মশান কালীর পুজো অপরিবর্তিত প্রাচীন তন্ত্রমতেই।

শতাধিক বছরের পুরনো পদ্ধতি মেনে দেবীর পেছনে সাজানো হয় ১০৮টি নরকঙ্কালের খুলি। পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে পুরোহিত তন্ত্রের নিয়ম মেনে দেবীর পুজো করে। অন্য উপকরণের মধ্যে অবশ্যই থাকবে সুরার বোতল, রান্না করা মাংস, কাঁচা ছোলা। আগে অবশ্য চোলাই ছিল পুজোর উপকরণ। কিন্তু এখন বিলিতি মদেই চলে দেবীর আরাধনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এই জেলার অন্যতম প্রাচীন শ্মশান এটি। কথিত আছে, ভগীরথ নাকি দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের পাশ দিয়ে গঙ্গাকে সাগরে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই আদি গঙ্গার পাড়ে এক সময়ে ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা জনবসতিহীন এলাকা। সেখানে কিছুটা জায়গা নিয়ে বহু বছর আগে জঙ্গল কেটে শবদাহের কাজ শুরু হয়। সে সময়ে শ্মশান গড়ার পাশাপাশি তৈরি হয়েছিল টিনের দরমা ঘেরা টিনের চালের শ্মশানকালীর মন্দির। তারপর গঙ্গা উপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দরমা ঘেরা মন্দির সংস্কার করে বড় পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রাচীন পুজোর পদ্ধতিতে এখনও কোনও বদল হয়নি।

মন্দিরে ঢুকে দেখা গেল, একাত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধ এক মনে দেবীর চোখে তুলি টানছেন। পটুয়াপাড়ার কোনও পেশাদার শিল্পী তিনি নন। শ্মশানকালী মন্দিরের পুরোহিত ওই বৃদ্ধেরই দেবীকে স্পর্শ করার একমাত্র অধিকারী। শুধু তাই নয়, তন্ত্রকর্মের পঞ্চমুণ্ডের আসনটিতেও অন্য কেউ বসতে পারবে না। এই গুরুভার বংশ পরম্পরায় পুরোহিত শ্যামল চক্রবর্তীর হাতে।

মা কালীর নরমুণ্ডমালায় রয়েছে একটি মহিষের মুণ্ড। প্রায় ১০ ফুট লম্বা দেবীর এক পাশে বামাক্ষ্যাপা, অন্য পাশে তৈলন্দ্যস্বামীর বাঁধানো ছবি। প্রতিমার পেছনে দেওয়ালের খোপে খোপে রাখা ১০৮টি নরমুণ্ডও পুজোর আগে ঝাড়পোঁছ করে রাখতে হয় বলে জানালেন পুরোহিত। পুজোর দিনে প্রাচীন রীতি মেনে সব ক’টি নরমুণ্ডর আত্মার শান্তি কামনা ও সাধনার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে মদ, ছোলা, মাংস দিয়ে মন্ত্রপাঠ চলে। প্রথম দিন থেকেই এই ব্যবস্থা। তবে কী ভাবে অতগুলি খুলি জোগাড় হয়েছিল, জানাতে পারলেন না শ্যামলবাবু। শুধু বললেন, “এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা আমার বাবা ফণিভূষণ চক্রবর্তী। তখন আমার বারো বছর বয়স। বাবা হঠাত্‌ খুব অসুস্থ হয়ে যান। সেই থেকে আমি মন্দিরের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছি। এখানে মা করুণাময়ী কালী রূপে প্রতিষ্ঠিত।”

এই প্রাচীন পুজো চাঁদা তুলে হয় না। সারা বছর ধরে মন্দিরে দর্শনার্থীরা এসে দেবীদর্শন করার পরে সামনে রাখা পিতলের থালাতে সামর্থ্য মতো দিয়ে যান। সারা বছরের ওই দানের পয়সাতেই শ্মশানকালীর আরাধনা হয়। পুরোহিত জানালেন, পুজোর দিনে সারা রাত ভক্তদের ভিড় জমবে। তাঁদের রাতে খাওয়ার জন্য ভোগের ব্যবস্থা থাকে। কেউ কেউ সারা রাত কাটিয়ে সকালে বাড়ি ফেরেন।

দক্ষিণ বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অমিয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এই শ্মশানকালীর মন্দিরটি বহু বছরের প্রাচীন। এলাকায় জাগ্রত বলে খ্যাত এই দেবীর পুজোর দিনে, পরিবারের কল্যাণ কামনায় অনেকে হাজির হন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE