রাস্তার দু’পাশ এমন ঢালু হওয়ায় বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
রাস্তা এমনিতেই সঙ্কীর্ণ। সংস্কার হওয়ার পরে সেই রাস্তা মাটি থেকে উঁচু হয়ে গিয়েছে। তাতে বেড়ে গিয়েছে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি। যশোহর রোড বা ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক এখন যেন মরণফাঁদ!
দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে গাইঘাটা পর্যন্ত ওই রাস্তার ২০ কিলোমিটারে। সেখানে সংস্কারের কাজ চলছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সেই কাজ করতে গিয়ে দু’পাশের জমি থেকে রাস্তার উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে। বড় গাড়ি চলে এলে পথচারী বা সাইকেল-মোটরবাইক আরোহীরা পাশ কাটাতে গিয়ে রাস্তার ধারের জমিতে নামতে বাধ্য হন। আর তখনই বেসামাল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া, অধিকাংশ ফুটপাথ বেদখল হয়ে গিয়েছে। দু’পাশের পুরনো গাছগুলিও সড়কের জায়গা ছোট করে দিয়েছে।
পুলিশও মানছে, জমি থেকে সড়ক উঁচু হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। পুলিশের হিসেবই বলেছে, গত ১৫ দিনে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হন অন্তত ১০ জন। গত বুধবারই বনগাঁ শহরের নেতাজি মার্কেট এলাকায় যশোহর রোড ধরে সাইকেল চালাচ্ছিল পূজা দাস নামে এক স্কুলছাত্রী। একটি ট্রাক পিছন থেকে হর্ন দেওয়ায় তড়িঘড়ি সে পাশের জমিতে নামতে গিয়েছিল। কিন্তু জমিটি ফুট দেড়েক নিচু হওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে যায়। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার আগে গাইঘাটার বকচরা এলাকা হয়ে স্বামীর সঙ্গে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন ডুমা পঞ্চায়েতের এক সদস্যা। একটি পিচের গাড়িকে রাস্তা ছাড়তে গিয়ে একই ভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁরও। ফুলতলা কলোনি এলাকাতেও স্কুলে যাওয়ার পথে একই ভাবে যষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র সাইকেল নিয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে যায়। শহরের কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় জখম হন এক পথচারীও। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। ওই রাস্তার পাশের জমি কোথাও কোথাও তিন-চার ফুটেরও বেশি নিচু।
একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বুধবারের দুর্ঘটনার পর তাঁরা রাস্তা চওড়া এবং দু’পাশের জমির উচ্চতা সমান করার দাবি তোলেন। সে দিন দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে আসেন বনগাঁর পুরপ্রধান তৃণমূলের শঙ্কর আঢ্য। তাঁর অভিযোগ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বার বার বলা সত্ত্বেও তাঁরা জমির উচ্চতা সমান করছেন না। দ্রুত ওই কাজ না করা হলে পুর এলাকার মধ্যে রাস্তা সারাইয়ের কাজে বাধা দেওয়া হবে বলে তিনি হুমকিও দেন।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে মহকুমার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার জয়ন্ত চক্রবর্তীর দাবি, রাস্তার পাশের জমিতে মাটি ফেলে সমান করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে তিনি মানছেন, মাটির বদলে ঝামা দিয়ে কাজটি করা গেলে ভাল হতো। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মেলায় তা সম্ভব হয়নি বলে তাঁর দাবি।
জয়পুর এলাকায় কয়েক মাস আগে একটি বড় গাছ ঝড়ে ভেঙে রাস্তার উপর পড়ে। গাছটির গুঁড়ি এখনও সেখানেই পড়ে থাকায় রাস্তাটি সঙ্কীর্ণ হয়ে রয়েছে। কাছেই রয়েছে দু’টি স্কুল। ঠাকুর হরিদাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পম্পা বিশ্বাস বলে, ‘‘আমরাও সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসি। খুবই আতঙ্কে থাকি।’’ অনেক অভিভাবকই এই অবস্থায় পড়ুয়াদের সাইকেল নিয়ে স্কুলে যেতে বারণ করছেন। সঙ্কর্ষণ আচার্য নামে স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘যশোহর রোডে বাইক চালাতে আজকাল ভয় করছে। ভাবছি এ বার থেকে হেঁটেই যাতায়াত করব।’’
দুর্ঘটনা কবে বন্ধ হবে, সেই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে যাত্রীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy