Advertisement
E-Paper

প্লাবনে তলিয়েছে ঈদের খুশি

তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন রাকেয়া বিবি। আঁচল ধরে টানছিল সাত বছরের মেয়ে রুকসানা। ঈদের আগে নতুন জামার বায়না তাঁর। প্লাবনে সর্বস্ব হারানো নামখানার রুকসানার চোখে তখন শূন্যতা। দু’সপ্তাহ আগে ঘর ভেসে গিয়েছে ভরা কোটালে। অর্ধাহারে দিন কাটছে গোটা পরিবারের। এর মধ্যে নতুন জামা কিনবেন কী করে? দুঃখ রাগ হয়ে ফেটে পড়ে মেয়ের উপর, “বিরক্ত করিস না খেলা কর গিয়ে।”

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০২:১২
এই আস্তানায় কী ভাবে আসবে উৎসবের বার্তা? —নিজস্ব চিত্র।

এই আস্তানায় কী ভাবে আসবে উৎসবের বার্তা? —নিজস্ব চিত্র।

তাঁবুর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন রাকেয়া বিবি। আঁচল ধরে টানছিল সাত বছরের মেয়ে রুকসানা। ঈদের আগে নতুন জামার বায়না তাঁর। প্লাবনে সর্বস্ব হারানো নামখানার রুকসানার চোখে তখন শূন্যতা। দু’সপ্তাহ আগে ঘর ভেসে গিয়েছে ভরা কোটালে। অর্ধাহারে দিন কাটছে গোটা পরিবারের। এর মধ্যে নতুন জামা কিনবেন কী করে? দুঃখ রাগ হয়ে ফেটে পড়ে মেয়ের উপর, “বিরক্ত করিস না খেলা কর গিয়ে।”

শুধু রুকসানা নয়, তানিয়া, জাহেরাদের মতো কচি কচি মুখগুলোর একই চাহিদা। কিন্তু এ বছর আর তাদের সেই আবদার রাখতে পারবেন না নামখানা আর সাগরের মৌসুনি দ্বীপের ঘরভাসি মানুষগুলো।

ঈদের দিকে সারা বছর তাকিয়ে থাকেন ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো। স্থানীয় মসজিদ মাঠে ভোরের নমাজ পড়ে এই দিনটা শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু এ বার মসজিদ মাঠও জলের তলায়। ফলে তাঁবুতে বা ত্রাণ শিবিরেই সারতে হবে ভোরের নমাজ। প্রতি বছর ঈদের দিনে নতুন জামাকাপড় তো বটেই, তার সঙ্গে রান্নাবান্না, আনন্দ উচ্ছ্বাস সঙ্গী ছিল এই মানুষগুলোর। রঙিন কাগজ দিয়ে সাজাতে হত ঘরবাড়ি। এ বার আর সে উপায় নেই।

দু’সপ্তাহ আগে ভরা কোটালে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার পরে সব হারিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় দু’হাজার মানুষ। সাতশো পরিবারের বাড়ি ভেঙেছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রায় দু’শো। কেউ তাঁবু বেঁধেছেন অপেক্ষাকৃত উঁচু রাস্তায়। বাড়ির চাল ভেঙে পড়েছে। অনেকে সকালে বাড়িতে গিয়ে পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে এক পাশ ঢেকে বাড়িতে কাটাচ্ছেন। কিন্তু রাতে আর বাড়ি ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। রাতটুকু ত্রাণ শিবিরেই কাটাতে হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া মুড়ি, চিড়ে, গুড়ই আপাতত ভরসা। তাই ঈদের বিশেষ রান্না এখন দূর অস্ত।

ত্রাণ শিবিরের আশ্রয় নিয়েছেন নুর জাহান বিবি। বললেন, “প্লাবনে পরনের কাপড়টুকুও ভেসে গিয়েছে। আমরা বড়রা না হয় কোনও রকমে বেঁচে আছি। অর্ধাহারে দিন কাটছে। কিন্তু ছোটরা তা শুনবে কেন? সারা বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকে ওরা। এ বার ওদের কিছুই কিনে দিতে না পারলাম না।”

ত্রাণ শিবিরে থাকা একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী আরফানজান খাতুন বলেন, “প্রতি বছর হাতে মেহেন্দি করি এই দিনটায়। এ বছর আর হল না। আমার জামাকাপড় নাই বা হল। কিন্তু আমার ভাইবোনগুলোরও এ বার নতুন কিছু হয়নি। দেখে আমারই কান্না পাচ্ছে।”

এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, বাঁধ মেরামতির কাজ দ্রুত শেষ না হলে সামনের কোটালে ফের ভাসতে হতে পারে তাঁদের।

dilip naskar naamkhana eid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy