Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে বৌয়ের গঞ্জনা, বসিরহাটে এটিএম ভাঙতে গিয়ে ধৃত বেকার যুবক

মাস দেড়েক আগে বাড়ির লোকজন ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের কোনও রোজগার নেই। শুরু হয় বৌয়ের গঞ্জনা, মুখ ঝামটা। কেউ এক জন বুদ্ধি দিয়েছিল, এটিএম ভাঙতে পারলে লক্ষ লক্ষ টাকা মিলবে। সেই মতো বছর বাইশের ছেলেটি এক সঙ্গীকে জুটিয়ে অপারেশনে নেমে পড়ে। রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বসিরহাট শহরের তিন তিনটি এটিএম হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেছিল আদিত্য দাস ও তার ওই সঙ্গী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৪
Share: Save:

মাস দেড়েক আগে বাড়ির লোকজন ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলের কোনও রোজগার নেই। শুরু হয় বৌয়ের গঞ্জনা, মুখ ঝামটা। কেউ এক জন বুদ্ধি দিয়েছিল, এটিএম ভাঙতে পারলে লক্ষ লক্ষ টাকা মিলবে। সেই মতো বছর বাইশের ছেলেটি এক সঙ্গীকে জুটিয়ে অপারেশনে নেমে পড়ে।

রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বসিরহাট শহরের তিন তিনটি এটিএম হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করেছিল আদিত্য দাস ও তার ওই সঙ্গী। শীতের নিস্তব্ধ রাতে হাতুড়ি পেটার শব্দ শুনে পুলিশকে ফোন করেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। পুলিশ আসছে বুঝতে পেরে পালায় দু’জন। পরের বার এটিএম ভাঙার শব্দে থানায় ফোন আসে। পুলিশ এসে ধরেও ফেলেছিল দু’জনকে। কিন্তু শেষমেশ দুই পুলিশ কর্মীর হাত ছাড়িয়ে পালায় আদিত্য ও তার সঙ্গী। তাতেও দমানো যায়নি দু’জনকে। আরও একটি এটিএম ভাঙার চেষ্টা চালায় দু’জন। কিন্তু তত ক্ষণে ভোর হয়েছে। ঘন কুয়াশার মধ্যেও আলো ফুটতে শুরু করেছে। বিপদ বুঝে চম্পট দেয় আদিত্যর সঙ্গী যুবক। কিন্তু জনতার হাতে ধরা পড়ে যায় বসিরহাটের ৩ নম্বর কলোনির বাসিন্দা আদিত্য। গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। বসিরহাটের নবনিযুক্ত আইসি গৌতম মিত্র বলেন, “এক রাতে পর পর তিনটি এটিএম ভেঙে টাকা হাতানোর মরিয়া চেষ্টা দেখে এটা পরিষ্কার যে দুষ্কৃতীদের অনেক টাকার দরকার ছিল। তবে কোনও এটিএম মেশিন থেকেই শেষ পর্যন্ত দুষ্কৃতীরা টাকা বের করতে পারেনি।” এ দিন আদিত্যকে বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তার সঙ্গীর খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কী হয়েছিল রবিবার রাতে?

রাত তখন প্রায় ৩টে। থানায় কম্বল জড়িয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে ঝিমোচ্ছিলেন এক পুলিশ অফিসার। পাশে রাইফেল হাতে ঢুলু ঢুলু চোখে টুলের উপর বসে এক কনস্টেবল। হঠাত্‌ ফোনে খবর আসে, “কী দাদা, ঘুমালে কি চোর ধরা পড়বে? টাকা লুঠের চেষ্টা হচ্ছে থানার কাছে বৌবাজারে। হাতুড়ি দিয়ে এটিএম ভাঙছে দুষ্কৃতীরা।” চোখ ডলতে ডলতেই শীতের রাতে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়েন ওই অফিসার। সঙ্গীকে রাইফেল নিয়ে আসতে বলেন। থানা থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ে, একটি এটিএম ভাঙার চেষ্টা করছে দুই দুষ্কৃতী। দৌড়ে গিয়ে একজনকে জাপটে ধরেন অফিসার। অন্য জনকে ধরে ফেলেন কনস্টবল। পুলিশকর্মীদের চিত্‌কারের পাশাপাশি চিত্‌কার জুড়ে দেয় দুই দুষ্কৃতীও। ধস্তাধস্তির মধ্যে পুলিশের হাত ছাড়িয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশের হাতে পড়ে থাকে ফেলে যাওয়া একখানা দস্তানা। থানায় ফেরেন ব্যর্থ মনোরথ দুই পুলিশ কর্মী।

রাত ১২টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা প্রথম অপারেশন চালায় বসিরহাটের চৌমাথায় টাকি রাস্তার ধারে একটি এটিএম কাউন্টারে। হাতুড়ি দিয়ে এটিএম ভাঙার সময়ে শব্দ শুনে ওই এলাকার একজন থানায় ফোন করেন। পুলিশ আসছে বুঝতে পেরে দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে পালায়। এরপর তারা যায় থানার পাশের ওই এটিএম কাউন্টারে যায়। পরে ঢোকে কলেজের পাশের এটিএমে। পুলিশ জানায়, কলেজের পাশে এটিএম কাউন্টারের মধ্যে ঢুকে যখন হাতুড়ির বাড়ি মেরে ভাঙার চেষ্টা হচ্ছিল, সেই শব্দ কানে যেতেই স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা বেরিয়ে পড়েন। তত ক্ষণে আকাশে আলো ফুটছে। ঘন কুয়াশার মধ্যে যে দিকে অবশ্য হুঁশই হয়নি দুষ্কৃতীদের।

পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, এটিএমের বাইরে পাহারায় থাকা এক দুষ্কৃতী ভিতরের জনকে সতর্ক করেছিল। বলেছিল, সকাল হয়ে আসছে। এ বার পালানোই ভাল। কিন্তু সেই পরামর্শে কর্ণপাত করেনি ভিতরে থাকা আদিত্য দাস। সঙ্গীকে ধৈর্য ধরতে বলে সে। কিন্তু লোক জমতে শুরু করেছে দেখে আদিত্যর সঙ্গী আর দেরি করেনি। মোটর বাইক নিয়ে পালায় সে। তত ক্ষণে সকাল ৭টা বেজে গিয়েছে। ধরা পড়ে যায় আদিত্য। বসিরহাটের ৩ নম্বর কলোনির বাসিন্দা বছর বাইশের আদিত্যের কথায়, “অভাবের সংসারে মাধ্যমিকের বেশি পড়া হয়নি। কাজের খোঁজে উত্তরপ্রদেশে যাই। কিন্তু সেখানেও কাজ না মেলায় বাড়ি ফিরেছিলাম। মাস দেড়েক আগে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। দু’চারটে দিন ভালয় ভালয় কাটলেও কাজকর্ম না থাকায় বৌয়ের গঞ্জনা আর সহ্য করা যাচ্ছিল না। এক জন বুদ্ধি দেয়, এটিএম মেশিন ভাঙতে পারলে অনেক টাকা।” অর্ধেক অর্ধেক বাঁটোয়ারার শর্তে এক জন সঙ্গীও জুটিয়ে নিয়েছিল আদিত্য। কিন্তু শেষমেশ কাজ হাসিল হল না। আদিত্যর দাবি কতটা ঠিক, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

পুলিশ যখন এসে গ্রেফতার করল আদিত্যকে, তখনও তার হাতে একপাটি দস্তানা পরা। ফেলে যাওয়া অন্য পাটিটি ছিল পুলিশের কাছেই। একই দল যে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছে, তা আর বুঝতে দেরি হয়নি পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE