খালপাড় থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা ডিঙি বেয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন এক বাসিন্দা। দূর থেকে দেখে মনে হবে, মজে যাওয়া আগাছা ভরা পুকুরে কেউ বোধ হয় ডিঙি নিয়ে ঘুরছে। কিছু ক্ষণ পরেই দেখা গেল, ডিঙি থেকে নেমে বুক সমান জলে মাছ ধরার জন্য জাল পাতছেন ওই গ্রামবাসীটি। বোঝা গেল, এটি পুকুর নয়, আদপে কৃষি জমি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট ২ ব্লকের ধনপোতা ও উড়েলচাঁদপুর পঞ্চায়েতের সংলগ্ন কয়েক হাজার বিঘা জমি সারা বর্ষায় বুক সমান জল থাকে। বর্ষা চলে গেলেও আরও কয়েক মাস জল জমে থাকে কৃষিজমিতে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেও সেই জল সরে না। কেন?
মগরাহাট থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার লম্বা একটি খাল ধনপোতা গ্রাম হয়ে বয়ে গিয়েছে দাইজি, মল্লবপুর গ্রামের দিকে। খালটি অগভীর। বহু বছরের পুরনো ওই খাল কবে শেষ সংস্কার হয়েছে তা প্রবীণরাও মনে করে বলতে পারছেন না। খালের বাঁধ যেখানে সেখানে ভেঙে রয়েছে। এলাকাটি নিচু হওয়ায় মন্দিরবাজার, জয়নগর, উস্তি এলাকাগুলি থেকেও বর্ষার জল খাল বেয়ে নেমে ওই এলাকায় ঢোকে। এমনকী, ওই খাল সংলগ্ন ৮-১০টি স্লুইস গেট বহু দিন ধরেই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে মাঠের জল নিকাশের ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিচু এলাকা হওয়ায় প্রত্যেক বছরই বর্ষায় এমন দশা হয়। যে কারণে বর্ষায় ধানের চাষ করতে পারেন না বাসিন্দারা। বর্ষা চলে যাওয়ার পরে আরও কয়েক মাস জল জমে থাকে। তাতে শীতকালীন চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমস্ত বিষয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দারা।
খাল সংস্কার না হওয়ায় সমস্ত এলাকা থেকে আসা জল ঢুকে পড়ে এই এলাকার কৃষিজমিতে। ফলে ধনপোতা পঞ্চায়েত দাইজির মাঠ, হরির মাঠ, ঈশ্বরীপুরের মাঠ, বাঁকড়দাঁড় মাঠ ছাড়াও উড়েলচাঁদপুর পঞ্চায়েতের কিছু অংশে এতটাই জল জমে যে সেগুলি কার্যত পুকুরে পরিণত হয়। স্থানীয় দলপোতা গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ হালদার বলেন, “আমার দাইজি মাঠে ৩ বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু ওই জমির উপরে বুক পর্যন্ত জল। ফলে চাষ করা যাচ্ছে না। সমস্যায় পড়েছি বার বার।” অবশেষে সংসার চালানোর জন্য মাছ ধরার পেশাকে বেছে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। আমনের চাষ করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র বোরো চাষের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। এই আক্ষেপ এলাকার বাসিন্দা অমল কয়ালেরও। তিনি জানান, এটি যে নিচু এলাকা, তা তো প্রশাসনের অজানা নয়। অভিযোগ, তবুও আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবিলম্বে খালপাড় সারানো, খাল সংস্কার ও স্লুইস গেটগুলি মেরামত করা উচিত বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সব মিলিয়ে প্রায় কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমিতে বছরের একটা বড় সময়ে চাষ করা নিয়ে জেরবার নোনাতলা, কাঁটাপুকুর, কড়ামনুরাজ, পরানখালিগ্রাম-সহ ৮-১০টি গ্রামের মানুষ। অথচ এলাকায় বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী। এক সময়ে এই জমির ফসল বেচে সংসার চালাতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু জল জমে থাকায় এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। ধনপোতা পঞ্চায়েতের প্রধান দীনবন্ধু কয়াল সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “খাল ও স্লুইস গেটগুলি সংস্কারের জন্য একাধিকবার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” মগরাহাট ২ বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, “ওই খালটি সংস্কারের তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়েছিল সেচ দফতর। কিন্তু বর্ষা নেমে যাওয়ার পরেও ওই জমিতে জল জমে থাকায় কাজ শুরু করা যায়নি।”