Advertisement
E-Paper

রাস্তা-খাল একাকার, যাতায়াত চলে কোমরসমান জল ভেঙে

মাস কয়েক আগে রায়দিঘির বাহির কাঞ্চলি গ্রামে বিয়ে হয়েছে মথুরাপুর গ্রামের নন্দন পুরকাইতের এক মাত্র মেয়ের। মেয়ের বাড়ি যাবেন বলে কাশীনগর বাজার পোল মোড়ে নেমে চক্ষু ছানাবড়া তাঁর। জানা ছিল না, মেয়ের বাড়ি যাওয়ার মাটির রাস্তা বর্ষার জলে কবেই ভেঙে গিয়ে খালের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে। কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে রয়েছে রাস্তার উপরে।

দিলীপ নস্কর

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০০
তলিয়ে গিয়েছে পায়ে চলার পথটুকুই। নিজস্ব চিত্র।

তলিয়ে গিয়েছে পায়ে চলার পথটুকুই। নিজস্ব চিত্র।

মাস কয়েক আগে রায়দিঘির বাহির কাঞ্চলি গ্রামে বিয়ে হয়েছে মথুরাপুর গ্রামের নন্দন পুরকাইতের এক মাত্র মেয়ের। মেয়ের বাড়ি যাবেন বলে কাশীনগর বাজার পোল মোড়ে নেমে চক্ষু ছানাবড়া তাঁর। জানা ছিল না, মেয়ের বাড়ি যাওয়ার মাটির রাস্তা বর্ষার জলে কবেই ভেঙে গিয়ে খালের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছে। কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে রয়েছে রাস্তার উপরে। বাধ্য হয়ে ঘুর পথে পৌঁছতে হল গন্তব্যে। বছরের পর বছর গোটা বর্ষার মরসুম ধরে বাধ্য হয়ে ওই কোমর সমান জল ভেঙে যাতায়াত করেন এলাকার বাসিন্দারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-২ ব্লকের খাড়ি পঞ্চায়েতে কাশীনগর বাজার পোল (তাঁতির পোল) মোড় থেকে বাহির কাঞ্চলি গ্রামের যাতায়াতের রাস্তার এমনি বেহাল দশা। অথচ সংস্কারের কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

কাশীনগর পাকাপোল মোড় থেকে বাহির কাঞ্চলি গ্রামের যাতায়াতের রাস্তার পাশেই রয়েছে সোনাতলা বড় খাল। ওই মোড় থেকে গ্রামে যাতায়াতের রাস্তার পরিমাণ প্রায় চার কিলোমিটার। বছর কুড়ি আগে পাকাপোলের কাছে নামার মুখেই প্রায় ৫০ মিটার মাটির রাস্তা বর্ষার জলে ধুয়ে একাকার হয়ে যায়। সে সময় স্থানীয় বাসিন্দা ও পঞ্চায়েতের উদ্যোগে কোমর সমান জল জমে যাওয়া রাস্তা পারাপারের জন্য বাঁশের মাচা করে দেওয়া হয়েছিল। ওই মাচার উপর দিয়ে কয়েক বছর পারাপারের পর মাচা ভেঙে খালে তলিয়ে যায়। তার পর থেকে কোনও মাচা না করায় বা ওই জলে ডোবা রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় ওই বেহাল রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে চলেছেন বাসিন্দারা।

ওই এলাকার বাসিন্দাদের বড় বাজার বলতে কাশীনগর বাজার। রবিবার ও বৃহস্পতিবার সারা দিন ধরে ও অন্য দিনেও সকালে বাজার বসে সেখানে। রয়েছে একটি প্রাথমিক স্কুল, দু’টি হাইস্কুল, কয়েকটি ব্যাঙ্ক এবং পুলিশ ফাঁড়ি। বাহির কাঞ্চলি, উত্তর ও দক্ষিণ মহামায়াতলার বাসিন্দাদের নিত্য প্রয়োজনে ওই বাজারে যেতে গেলেই কোমর সমান জল ঠেলে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্কুল ছাত্রছাত্রী ছাড়াও কচিকাঁচাদের নিয়ে ভয় বেশি। কারণ ভরা বর্ষায় তিন মানুষ সমান জল। একটু অসাবধান হলেই খালের জলে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। রাস্তায় কোনও আলোর ব্যবস্থা নেই। রাস্তার পাশের জঙ্গলে রয়েছে বিষধর সাপের উৎপাত। ফলে সন্ধের পরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে জলে ডোবা রাস্তা পার হতে গেলে জীবন-মরণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তা ছাড়া, কোনও মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে রাস্তা চলতে গেলে বিপদের শেষ নেই। তাই দিনে কোনও ভাবে পারাপার চলে। কিন্তু সন্ধের পরে লোকে সাধ্যমতো চেষ্টা করে, ওই রাস্তায় পা না দিতে। আর ওই রাস্তা দিয়ে যেতে না পারলে এক মাত্র উপায়, প্রায় এক ঘণ্টা ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছনো।

স্থানীয় বাসিন্দাদারা বলছেন, “ওই রাস্তায় মাটি ফেলে সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত থেকে বহু বার প্রশাসনকে বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে চার থেকে পাঁচ মাস ধরে ফি বর্ষায় আমাদের জলে ডোবা রাস্তা ধরেই পারাপার চলছে।” স্থানীয় বাহির কাঞ্চলি গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী পুরকাইত, অমলা হালদারদের মন্তব্য, “এই বেহাল রাস্তাটুকুর জন্য ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই। কিন্তু সারা ক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি।” বাসিন্দারা জানান, ওই রাস্তায় গরু-ছাগল নিয়ে যেতেও সমস্যায় পড়তে হয়।

খাড়ি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রজতকান্তি বেরা বলেন, “রাস্তা সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্ষা নেমে যাওয়ায় কাজ করা যায়নি। ওই রাস্তার জল নেমে গেলে ১০০ দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার শুরু হবে।” এ বিষয়ে মথুরাপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের পীযূষ বারিকের বক্তব্য, “বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি শীঘ্রই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”

dilip naskar raidighi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy