Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলের নাম পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন, ঘেরাও শিক্ষকদের

স্কুলের নাম পরিবর্তন কেন করা হল, তা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই গ্রামবাসীদের। এর আগে নানা ভাবে তার বহিঃপ্রকাশও কম হয়নি। তবে বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত যে ভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে রাখলেন তাঁরা, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিল।

আটকে পড়েছেন শিক্ষকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

আটকে পড়েছেন শিক্ষকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

স্কুলের নাম পরিবর্তন কেন করা হল, তা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই গ্রামবাসীদের। এর আগে নানা ভাবে তার বহিঃপ্রকাশও কম হয়নি। তবে বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত যে ভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে রাখলেন তাঁরা, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিল।

ঘটনাটি বাগদার দেয়ারা হাইস্কুলকে নিয়ে। কয়েক মাস আগে যার নাম পরিবর্তন করে ব্রজেন্দ্রনাথ হাইস্কুল করা হয়েছে। আরও কয়েক মাস আগেই নাম পরিবর্তনের কাজ সেরে ফেলা হলেও বিষয়টি জানাজানি হয় স্কুলে নতুন নামফলক বসানোর পরে। নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে এবং পুরনো নাম ফিরিয়ে আনার দাবিতে গ্রামের লোকজন ওই নামফলকের উপরে কাদা লেপে দেন। সেই কাদা এখনও ধরে আছে স্কুলে ঢোকার মুখেই নামফলকের গায়ে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের বক্তব্য, এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন এলাকার বেশির ভাগ মানুষ। স্কুলের নামের সঙ্গে তাঁদের আবেগ জড়িয়ে। কোনও ভাবেই নতুন নামকরণ করা চলবে না।

পরিস্থিতি নিয়ে সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করেছে প্রশাসনও। গত ১৬ জুন বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় নিজের দফতরে বিভিন্ন পক্ষকে ডেকে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়ে যেন মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু সেই মিটিং আজও পর্যন্ত করে উঠতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। গ্রামের লোকের আরও রাগ জমেছে সে কারণে। তাঁদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে বৈঠক ডাকার কথা ছিল প্রধান শিক্ষক সুব্রতকুমার পাহাড়ির। কিন্তু বৈঠক হয়নি। গত শনিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের একাংশ। কিন্তু ওই দিন স্কুলেই আসেননি তিনি। এ সবের জেরেই ক্রমশ উত্তেজনা দানা বাঁধছিল। নাম পরিবর্তনের পক্ষে নয় ছাত্রদের বড় অংশও। এ দিন বেলা ১টা নাগাদ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রেরা স্কুলের দু’টি গেটে তালা ঝুলিয়ে নিজেরা স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। এই খবর শুনে জমা হতে থাকে গ্রামের লোকজন। স্কুলের ভিতরে আটকে পড়েন ৪২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা।

কিন্তু ছাত্রেরা কেন এত বড় পদক্ষেপ করতে গেল?

তাদের অনেকেরই বক্তব্য, দেয়ারা হাইস্কুলের নাম পরিবর্তন তারাও চায় না। কিন্তু সে সব নিয়ে মুখ খোলায় শিক্ষকদের একাংশ দুর্ব্যবহার শুরু করেছেন। পরীক্ষায় নম্বর কম দেখানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও ভয় দেখানো হচ্ছে।

এ দিন প্রবল বৃষ্টি হয়েছে দিনভর। স্কুলের মাঠে ত্রিপল লাগিয়ে সেখানে জমায়েত করেন আন্দোলনকারীরা। স্কুলে মিড ডে মিল রান্না হয়েছিল। কিন্তু তা খায়নি কেউ।

স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ব্রজেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের নামে স্কুল করার কারণ, স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলেন তিনি। কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুলের নাম ব্রজেন্দ্রনাথের নামে করতে হবে, এই শর্তও নাকি আরোপ করা হয়েছিল জমিদানের সময়েই। কিন্তু গ্রামের মানুষের যুক্তি, জমি শুধু একা ব্রজেন্দ্রনাথই দান করেননি। আরও অনেকে দিয়েছিলেন। তা হলে একা তাঁর নামেই কেন স্কুল হবে। তা ছাড়া, এলাকার ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের সঙ্গে বহু মানুষের ভাবাবেগ জড়িয়ে। যাকে সম্মান দিয়ে পুরনো নাম ফিরিয়ে আনা হোক।

আন্দোলনকারীরা দাবি তোলেন, যত ক্ষণ না প্রধান শিক্ষক বা পরিচালন সমিতির কেউ আসবেন স্কুলে, তত ক্ষণ আটকে রাখা হবে শিক্ষকদের। মিটিং করে দ্রুত স্কুলকে আগের নামে ফেরানো হোক, সেই দাবি উঠেছে। পরিচালন সমিতির কাউকে অবশ্য রাত পর্যন্ত স্কুলে আসতে দেখা যায়নি। বিডিও মালবিকা খাঁটুয়া প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন স্কুলে। তাতে কাজ হয়নি। মহকুমাশাসক ফোনে কথা বলেছিলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। বরফ গলেনি তাতেও। ঘেরাও ওঠেনি রাত পর্যন্ত। বিডিও, মহকুমাশাসক ও পুলিশ কর্তারা রাতের দিকে ঘটনাস্থলে আসবেন বলে জানা গিয়েছে।

কিন্তু দিনভর এই আন্দোলনের জেরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কাহিল হয়ে পড়েছেন। তাঁদের খাবার-জলের সমস্যা হয়নি ঠিকই। কিন্তু ডানকুনি থেকে আসা সনিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, ধুবুলিয়ার রীতা সরকার, হাওড়ার গার্গী দাসরা বললেন, ‘‘এখন যদি রাতে ঘেরাও উঠেও যায়, তা হলে বাড়ি তো ফিরতে পারব না। কী ভাবে যে রাতটা কাটবে!’’ আন্দোলনের বিরোধী শিক্ষকেরা নন। কিন্তু তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ ভাবে দাবি পেশ করতেই পারতেন অভিভাবক, পড়ুয়া ও গ্রামের মানুষ। কিন্তু এ ভাবে শিক্ষকদের আটকে রাখা কোনও মতেই যুক্তিযুক্ত নয়।

প্রধান শিক্ষক টেলিফোনে বলেন, ‘‘আমি দূর থেকে চাকরি করতে যাই। এ দিন আন্দোলনের খবর পেয়ে খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছি। নাম পরিবর্তন করা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত তো স্বার্থ নেই।’’ তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। বৃহস্পতিবার কী ভাবে স্কুলে আসবেন, তা নিয়েও চিন্তিত তিনি।’’ প্রধান শিক্ষক জানান, এ দিন স্কুলেরই কাজে বিকাশ ভবনে গিয়েছিলেন। আন্দোলনের আঁচ আগে থেকে পেলে নিশ্চয়ই স্কুলে সহকর্মীদের পাশে হাজির থাকতেন। কেন গত বৃহস্পতিবার মিটিং ডাকা হয়নি, তার যুক্তি হিসাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘পরিচালন কমিটির সম্পাদক অসুস্থ আছেন। কেন মিটিং ডাকা যাচ্ছে না, তা সকলকেই জানানো হয়েছিল বলে তাঁর দাবি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE