Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্যার চলে যাবেন না, অনুরোধ ফেরাতে পারলেন না শিক্ষক

ছাত্রছাত্রীদের চোখের জল আর ভালবাসার টানে স্কুল ছেড়ে যেতে পারলেন না প্রধান শিক্ষক। অভিভাবকেরাও পড়ুয়াদের দাবির পাশে ছিলেন। তাঁকে ঘিরে সকলের আবেগ দেখে অভিভূত হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাধন ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৫ ০১:৫২
Share: Save:

ছাত্রছাত্রীদের চোখের জল আর ভালবাসার টানে স্কুল ছেড়ে যেতে পারলেন না প্রধান শিক্ষক। অভিভাবকেরাও পড়ুয়াদের দাবির পাশে ছিলেন। তাঁকে ঘিরে সকলের আবেগ দেখে অভিভূত হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাধন ঘোষ।

আজ, বৃহস্পতিবারই ছিল স্কুলে তাঁর শেষ দিন। তা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে পড়ুয়ারা। স্কুলের গেট আটকে স্কুল চত্বরে মাটিতে বসে তাঁদের প্রিয় মাস্টারমশাইকে অনুনয়-বিনয় করতে থাকে তারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবক ও গ্রামবাসীরাও। অবশেষে ছাত্রছাত্রীদের ভালবাসার কাছে হার মানলেন শিক্ষক। এ সবের পর বেলার দিকে ফের শুরু হয় ক্লাস।

স্কুলে ইংরেজি পড়ান সাধনবাবু। ২০১০ সালে হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ক্লাসের টানে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল কামাই পর্যন্ত করতে চায় না বলে জানালেন অনেক অভিভাবক। বারাসাত থেকে এই স্কুলে তাঁকে আসতে হয়। ভোরে বাড়ির থেকে বেরিয়ে ট্রেনে পৌঁছতে হয় হাসনাবাদে। সেখান থেকে কিছুটা হেঁটে এসে নৌকোয় পেরোতে হয় ইছামতী নদী। এরপর আবার অটো ধরে স্কুলে আসতে হয়। রোজকার এই হ্যাপা আর সামলাতে পারছিলেন না সাধনবাবু, জানালেন এমনটাই। হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের অভিভাবক পরিচালন কমিটির কাছে ‘নো অবজেকশন’ চান তিনি। কিন্তু এ কথা ছাত্রছাত্রীদের কানে পৌঁছয়। এরপরই তারা মাস্টারমশাইয়ের পথ আটকায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে। তাদের সকলেরই দাবি, কোনও অবস্থাতেই তাদের প্রিয় মাস্টার মহাশয়কে স্কুল ছেড়ে যেতে দেওয়া হবে না। তা দেখে সাধনবাবুও এ দিন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক টানাপোড়েনের পরে সাধনবাবু এখানে থাকতে রাজি হন। স্কুলের ছাত্র দেবজ্যোতি নাথ, আকাশ মণ্ডল বলে, ‘‘মাস্টারমশাই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে স্কুলের পঠন-পাঠনের উন্নতি হয়েছে। তা ছাড়া, তিনি আমাদের খুব স্নেহ করেন। তাঁকে ছেড়ে আমরা থাকতে পারব না।’’

নাগরিক সমিতির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ এবং অভিভাবক নমিতা সরকারের কথায়, ‘‘সুন্দরবন এলাকা বলে বরাবরই এখানকার মানুষ অবহেলিত। এই শিক্ষক তাঁর ভাল পড়ানোর কারণে শুধু ছাত্রছাত্রীদের কাছেই নয়, এলাকার মানুষের কাছেও জনপ্রিয়।’’

কী বলছেন সাধনবাবু?

বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত কারণে আমি অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ভালবাসার জন্য থেকে গেলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE