Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হ্যামিল্টনের বাংলোয় ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা

১০০ বছর আগে সুন্দরবনের জঙ্গলে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের স্যার ডানিয়েল হ্যামিল্টন। দু’দশকের চেষ্টায় ভোল বদলে দিয়েছিলেন মাতলা নদী লাগোয়া বেশ ক’টি গ্রামের চেহারা। তাঁর ভূমি সংস্কার ও পঞ্চায়েতরাজের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মতো ব্যক্তিত্ব। কী ভাবে জলা-জঙ্গলের মাঝে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ওই কর্মকাণ্ড চলছে, তা বুঝতে গাঁধী তাঁর আপ্ত সহায়ক মহাদেব দেশাইকে পাঠিয়েছিলেন গোসাবায় হ্যামিল্টনের আবাসে।

এই সেই বাংলো। নিজস্ব চিত্র।

এই সেই বাংলো। নিজস্ব চিত্র।

অশোক সেনগুপ্ত
সুন্দরবন  শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৪
Share: Save:

১০০ বছর আগে সুন্দরবনের জঙ্গলে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের স্যার ডানিয়েল হ্যামিল্টন। দু’দশকের চেষ্টায় ভোল বদলে দিয়েছিলেন মাতলা নদী লাগোয়া বেশ ক’টি গ্রামের চেহারা। তাঁর ভূমি সংস্কার ও পঞ্চায়েতরাজের ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মতো ব্যক্তিত্ব। কী ভাবে জলা-জঙ্গলের মাঝে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ওই কর্মকাণ্ড চলছে, তা বুঝতে গাঁধী তাঁর আপ্ত সহায়ক মহাদেব দেশাইকে পাঠিয়েছিলেন গোসাবায় হ্যামিল্টনের আবাসে। দীর্ঘকাল অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হ্যামিল্টনের সে-ই দু’টি বাংলোয় এখন আমজনতার ঢোকা নিষেধ। বাংলোগুলির সংরক্ষণ নিয়ে ঠিক কী করা হবে তা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হয়নি।

১৯০৩-এ সুন্দরবনের গোসাবায় প্রায় ৯ হাজার একর জমি কেনেন হ্যামিল্টন। সেখানে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ব্যাঙ্ক, চালকল, গ্রামীণ পুনর্গঠন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১ টাকার নোট চালু করেন গোসাবায়। পরে স্কটল্যান্ডে ফিরে যান। লেখক অমিতাভ ঘোষ তাঁর ‘হাংরি টাইড’ উপন্যাসে লিখেছেন হ্যামিল্টনের এই কীর্তি। প্রায় এক কিলোমিটার ব্যবধানে যে দুই বাংলোয় হ্যামিল্টন, তাঁর পরিবারের সদস্য ও অতিথিরা থাকতেন, সে দু’টির নাম‘বেকন বাংলো’, ‘হ্যামিল্টন বাংলো’। দু’টিতে তালা ঝুলছে। সাম্প্রতিক সুন্দরবন সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দুই বাংলো দেখতে যেতে পারেন এই সম্ভাবনা মাথায় রেখে আশপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে বাগান তৈরি করেছে প্রশাসন। উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকায় ‘বেকন বাংলো’-র চত্বরে বসানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথের বিরাট মূর্তি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য শেষমেশ যাননি এই দুই বাংলোয়। দু’টি বাংলোই মাটি থেকে ফুট চারেক উঁচুতে। মূল কাঠামো মায়ানমার থেকে আনা সেগুন কাঠের। দু’টিরই মূল দরজার সামনে বড় করে লেখা, রবীন্দ্রনাথ ১৯৩২-এর ডিসেম্বর মাসে এখানে কাটিয়েছেন। ‘বেকন বাংলো’-র ভিতরে কিছু নেই। আগাম বিশেষ অনুমতি নিয়ে হ্যামিল্টন বাংলোয় গিয়ে দেখা গেল, চারটি সমান মাপের ঘরে তিনটি বড় খাট, চেয়ার-টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, জলের ফিল্টার, পেল্লায় ট্রাঙ্ক ছাড়াও রয়েছে হ্যামিল্টনের আবক্ষ মূর্তি। নানা অবস্থায় তোলা তাঁর একাধিক বাঁধানো ফটোর পাশে রয়েছে স্ত্রী লেডি মেরি এলিজাবেথের ফটো। হ্যামিল্টন ভারত থেকে চলে যাওয়ার পরে ১৯৬৯ পর্যন্ত তাঁর ভাইপো জেমস ছিলেন তদারকির ও ট্রাস্টের প্রধান। কেয়ারটেকার সুধাংশু রায় জানান, জেমস ও তাঁর স্ত্রী-র নামেই সুন্দরবনে চিহ্ণিত হয়েছে জেমসপুর, অ্যানিপুরের মতো জায়গা। কিন্তু এখন পর্যটকেরা বাংলো দেখতে গিয়ে শুনছেন, ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই। সুধাংশুবাবুর কথায়, “বিডিও-র চিঠি না থাকলে আমার পক্ষে কাউকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।” অতএব বাইরে থেকে ছবি তুলেই ক্ষান্ত হতে হচ্ছে পর্যটকদের। ট্রাস্টের সচিব অশ্বিনী পাল জানিয়েছেন, উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো না থাকায় আপাতত ওই দু’টি বাংলো বন্ধ।

বাংলোগুলির মর্যাদা ও সংরক্ষণের ব্যাপারে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা গোপীনাথ বর্মন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক থাকার সময় এই বাংলোগুলি সংরক্ষণের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছিলেন বর্তমান পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আলাপনবাবু জানান, তিনি হ্যামিল্টন বাংলো দেখভালের ব্যাপারে যে ট্রাস্ট ছিল, সেটিকে সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলো মেরামতির কিছু কাজও করা হয়েছিল। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “ট্রাস্টের জমিজমার সবিস্তার জরিপ ও সংহতিকরণ এবং বাংলো দু’টির সংরক্ষণে সুষ্পষ্ট রূপরেখা তৈরি বাকি কাজ এই দুই স্তরে করা দরকার। পরে সংগ্রহশালা বা গবেষণাচর্চা কেন্দ্রের কথাও ভাবা যেতে পারে।”

হ্যামিল্টনের বাংলোগুলি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কি সে রকমই কোনও চিন্তাভাবনা রয়েছে? পদাধিকারবলে হ্যামিলটন ট্রাস্টের প্রধানের দায়িত্বে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক শান্তনু বসু। বহু বার ফোন করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। উত্তর দেননি এসএমএস-এরও। এসডিও প্রদীপ আচার্যের বক্তব্য, “দেখি, কী করা যায়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

hamilton sengupta ashok sengupta Sundarbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE