Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে কোমায়, জটিল অস্ত্রোপচারে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন রোগী

করোনার ডেল্টা রূপে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬১ বছরের রোগী। এক বছর পর তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর আচমকাই জ্ঞান হারিয়ে কোমায় চলে যান তিনি।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন ৬১ বছরের তপন বিশ্বাস।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন ৬১ বছরের তপন বিশ্বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৩২
Share: Save:

ডেঙ্গির চিকিৎসার জন্য নিজে হেঁটে হাসপাতালে এসেছিলেন রোগী। অথচ চিকিৎসা শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পেরতেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে চলে গেলেন কোমায়। ডেঙ্গি রোগীর হঠাৎ এমন শারীরিক পরিবর্তন হতে পারে, ভাবতে পারেননি চিকিৎসকেরা। ৬১ বছরের তপন বিশ্বাস ডেঙ্গি ধরা পড়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হলেও শারীরিক জ্বালা যন্ত্রণা তেমন ছিল না তাঁর। ছিল না স্নায়ুর অস্বাভাবিকতাও। তবু হাসপাতালে একটি দিন কাটতে না কাটতেই প্রথমে অসহ্য মাথার যন্ত্রণা, তার পর প্রবল জ্বর এবং শেষে জ্ঞান হারিয়ে কোমায় চলে যান তিনি।

চিকিৎসকেরা ডেঙ্গির এমন প্রভাবের কথা জানতেন না তা নয়। পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে বাস্তবে ঘটতে দেখেননি কখনও। ফলে তাঁরা প্রথমে রোগীকে ভেন্টিলেশনে নিয়ে যান, তাঁর মাথার স্ক্যান করান, চলে আরও নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা। শেষে জানা যায়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে তাঁর।

ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন এবং ক্রিটিকাল কেয়ারে ভর্তি ছিলেন তপন। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ওই বিভাগেরই সিনিয়র কনসাল্ট্যান্ট চিকিৎসক মহুয়া ভট্টাচার্য। মহুয়া জানিয়েছেন, ডেঙ্গু হওয়ার বছর খানেক আগে যখন রাজ্যে করোনার ডেল্টা রূপের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল, তখনও করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তপন এবং তাঁর চিকিৎসা করেছিলেন মহুয়াই।

কোভিডের দৌলতে ডেঙ্গির প্রভাব বিপজ্জনক হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরে। তপনের ক্ষেত্রে অবশ্য করোনা কোনও প্রভাব ফেলেনি বলেই জানিয়েছেন মহুয়া। যদিও কোমায় চলে যাওয়া তপনকে সারিয়ে তুলতে একটি জটিল অস্ত্রোপচার করতে হয় তাঁদের।

সাতদিন কোমায় ছিলেন তপন। সেই অবস্থাতেই তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা। বেশ কয়েকটি জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খুলির একটি অংশ কেটে পেটের ভিতর রাখতে হয়েছিল তাঁদের। যাতে সেটি কোনও ভাবে নষ্ট না হয়ে যায়। পরে একে একে রোগীর মস্তিষ্কের সমস্ত জমাটবাঁধা রক্ত সরিয়ে খুলির কাটা অংশ পুনঃস্থাপন করেন তাঁরা। তপন অবশ্য তখনও কোমাতেই। তাঁকে ভেন্টিলেশনে পাঠানো হয় আবার।

কতটা মারাত্মক ছিল সেই কোমা? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সাধারণত কোমা মাপার একটি মানদণ্ড আছে। যাকে বলা হয় গ্লাসগো কোমা স্কেল। ৩ থেকে ১৫-র মানে বিচার করা হয় কোমার তীব্রতার। ৩ হলে খুব খারাপ। ১৫ হলে ভাল। তপনের কোমা ছিল এই স্কেলের ৪ নম্বরে। তবে অস্ত্রোপচারের পর সেই জায়গা থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তপন। সম্প্রতি তাঁর প্রথম চেক আপের জন্য কোনও সাহায্য ছাড়াই হেঁটে হাসপাতালে এসেছিলেন তপন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তপনের আর কোনও স্নায়ুজনিত সমস্যা দেখা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE