Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চার জেলায় জলের প্রকল্পে ১২০০ কোটি দেবে এডিবি

মাত্র ক’দিন আগেই প্রশাসনিক বৈঠক করে কাজের গতিমুখ বাতলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুত্ব দিয়েছেন জনমুখী প্রকল্প রূপায়ণে। তার ক’দিনের মধ্যেই রাজ্যে জলপ্রকল্প নিয়ে কথা বলতে কলকাতায় আসছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)-র এক প্রতিনিধি দল। উদ্দেশ্য, রাজ্যের চারটি জেলায় পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা।

শঙ্খদীপ দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

মাত্র ক’দিন আগেই প্রশাসনিক বৈঠক করে কাজের গতিমুখ বাতলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুত্ব দিয়েছেন জনমুখী প্রকল্প রূপায়ণে। তার ক’দিনের মধ্যেই রাজ্যে জলপ্রকল্প নিয়ে কথা বলতে কলকাতায় আসছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (এডিবি)-র এক প্রতিনিধি দল। উদ্দেশ্য, রাজ্যের চারটি জেলায় পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা।

প্রকল্পটি অবশ্য নতুন নয়। মাস পাঁচেক আগে এডিবি কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই এই প্রকল্পে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনাও করেছিল তারা। প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের চারটি অঞ্চলে জলপ্রকল্প শুরু করার জন্য রাজ্যকে ১২০০ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে তারা। ওই চারটি অঞ্চল হল উত্তর চব্বিশ পরগনা , বাঁকুড়া, শিলিগুড়ি পুর এলাকা এবং জলপাইগুড়ি জেলার একাংশ।

সূত্রের খবর, আগামী বুধবার প্রকল্পটি নিয়ে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এডিবি কর্তাদের বৈঠক হবে। তাতে চার জেলায় জল প্রকল্পের খসড়া প্রস্তাব যেমন চূড়ান্ত হবে, তেমনই ভবিষ্যতে এই প্রকল্পকে রাজ্যের অন্যত্র সম্প্রসারণের জন্য রূপরেখাও তৈরি হবে ওই বৈঠকে। বুধবারের বৈঠকের পর সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ও এডিবি-র মধ্যে ঋণ চুক্তিতে ছাড়পত্রের জন্য অনুমোদন চাওয়া হবে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে। প্রসঙ্গত, রাজ্যে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতে দ্রুত কেন্দ্রের অনুমোদনের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে কথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।

নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, প্রকল্পের মৌলিক উদ্দেশ্য হল গ্রাম ও শহরের মানুষকে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা। তবে গভীর নলকূপ বসিয়ে নয়, নদী ও জলাশয়ের জল পরিশোধন করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আমলার কথায়, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক ও ফ্লুওরাইডের মাত্রা বিপজ্জনক ভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ ভূগর্ভস্থ জলস্তর দ্রুত হারে কমে যাওয়া। তাই গভীর নলকূপের বদলে নদী থেকে জল তুলে তা শোধন করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার উপরেই জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞেরা।’’ আর্সেনিক মোকবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং বিশ্বব্যাঙ্ক সুপারিশ করেছিল, আর্সেনিক পীড়িত সবক’টি এলাকাতেই নদী থেকে জল তুলে তা শোধন করে বাড়ি বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন কলকাতা পুরসভা এলাকায় রয়েছে। কিন্তু মালদহে একটি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ ধরনের একটি প্রকল্প ছাড়া বাকি সব জায়গায় গভীর নলকূপই এখন ভরসা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্ষুদ্র সেচে অগভীর নলকূপের রমরমা। ফলে জলস্তর নামছে হু হু করে। বাড়ছে আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড দূষণ বৃদ্ধির আশঙ্কাও।

এডিবি-র সহায়তায় এ বার ধীরে ধীরে গভীর নলকূপ তুলে দিয়ে বহু জায়গাতেই কলকাতার মতো জল সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে বলে জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আমলারা। তাঁরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ জলস্তরে ভারসাম্য আনতে প্রথম পাঁচ বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জল ভরো জল ধরো’ প্রকল্প শুরু করেছিলেন। তাতে জলস্তর ধরে রাখার একটা ব্যবস্থা হয়তো হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হল, দুই চব্বিশ পরগনা থেকে উত্তরবঙ্গ— বহু জায়গাতেই জলে আর্সেনিক ও ফ্লুওরাইডের বিষ রয়েছে। মানুষকে সেই দূষণ থেকে মুক্তি দেওয়া জরুরি। আপাতত যে চার জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, সেখানে প্রকল্প রূপায়ণের পর চল্লিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ উপকৃত হবেন। উত্তর চব্বিশ পরগনার রাজারহাট ও হাড়োয়া এলাকায় এই প্রকল্পের কাজ অগ্রাধিকারের সঙ্গে শেষ করার কথা ভাবা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রেও বলা হচ্ছে, এই প্রকল্পে আপাতত চারটি জেলা বিবেচনা করা হয়েছে ঠিকই। তবে রাজ্যের ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা বিবেচনা করে ঋণের অঙ্ক ভবিষ্যতে বাড়ানো অসম্ভব নয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও নীতিগত ভাবে তাতে আগ্রহী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

water project District
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE