Advertisement
E-Paper

থমথমে ব্রাহ্মণবাড়ে পুলিশ ক্যাম্প

বিস্ফোরণের তিন দিন পরেও ছন্দে ফেরেনি ব্রাহ্মণবাড়। রবিবারও পিংলার জামনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে ছিল শ্মশানের স্তব্ধতা। বুধবার রাতে বিস্ফোরণে ১২ জনের পর থেকে ঘটনাস্থল দেখতে দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসেছিলেন। শনিবার থেকে তাই গোটা গ্রাম ঘিরে রেখেছে পুলিশ। রবিবার বিস্ফোরণস্থলের কাছে তাঁবু টাঙিয়ে পুলিশ ক্যাম্পও করা হয়েছে।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:৪২
মুণ্ডমারিতে বিজেপির মিছিল আটকাল পুলিশ। রবিবার।- নিজস্ব চিত্র।

মুণ্ডমারিতে বিজেপির মিছিল আটকাল পুলিশ। রবিবার।- নিজস্ব চিত্র।

বিস্ফোরণের তিন দিন পরেও ছন্দে ফেরেনি ব্রাহ্মণবাড়। রবিবারও পিংলার জামনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে ছিল শ্মশানের স্তব্ধতা।

বুধবার রাতে বিস্ফোরণে ১২ জনের পর থেকে ঘটনাস্থল দেখতে দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসেছিলেন। শনিবার থেকে তাই গোটা গ্রাম ঘিরে রেখেছে পুলিশ। রবিবার বিস্ফোরণস্থলের কাছে তাঁবু টাঙিয়ে পুলিশ ক্যাম্পও করা হয়েছে। এখন ঘটনাস্থল থেকে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ। ফলে, আরও দেহাংশ থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ বা সিআইডি নতুন করে কোনও দেহ খুঁজে পায়নি।

পিংলা বিস্ফোরণ কাণ্ডে ইতিমধ্যে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের কাছ থেকে সিআইডি তদন্তভার গ্রহণও করেছে। বিরোধীরা অবশ্য সিআইডি তদন্তে আস্থা রাখছে না। পিংলা বিস্ফোরণে এনআইএ তদন্ত-সহ তিন দফা দাবিতে রবিবার পিংলায় মিছিল করার কথা ছিল বিজেপি। তবে মুণ্ডমারি মোড়ে জমায়েতের পর মিছিল কিছুটা এগোতেই তা আটকে দেয় পুলিশ। মুণ্ডমারি থেকে মণ্ডলবাড় হয়ে পিংলা থানা পর্যন্ত মিছিল করার কথা ছিল বিজেপির। কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাবলু বরম, জেলা কমিটির সদস্য তথা পিংলার নেতা গৌর ঘোড়ই, অন্তরা ভট্টাচার্য প্রমুখ। পুলিশ জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সে জন্যই মিছিল করতে দেওয়া হয়নি। পরে বিজেপির প্রতিনিধি দল এনআইএ তদন্ত, সাসপেন্ড হওয়া ওসি পঙ্কজ মিস্ত্রির গ্রেফতার ও ঘটনায় জড়িত তৃণমূলে নেতাদের গ্রেফতারের দাবিতে পিংলা থানায় স্মারকলিপি দেয়। বিজেপি নেতা গৌরবাবু বলেন, “পিংলায় মানুষ মারার কারবার চালিয়েছে তৃণমূল। আর সেটা ধামাচাপা দিতে পুলিশ দিয়ে মিছিল আটকে দিল। তবে আমাদের আন্দোলন আটকাতে পারবে না।”

বিস্ফোরণের পরে রাতারাতি বদলে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়ের ছবিটা। অল্পবয়সীদের চলাফেরায় আগের স্বতঃস্ফূর্ততা আর নেই। গ্রামের মাঠে কেউ খেলছে না। বিশেষ কাজ না থাকলে সন্ধের মধ্যে বাড়ি ঢুকে পড়ছেন প্রাপ্তবয়স্করাও। ঘটনার পর থেকেই গ্রামে পুলিশের আনাগোনা ছিল। রবিবার আবার ভস্মীভূত কারখানার উত্তর দিকে পুলিশ ক্যাম্প চালু হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থলও ঘিরে রাখা হয়েছে। স্থানীয় তরুণী মালতি হেমব্রম বলছিলেন, “গ্রামের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলো করছে না, সাইকেল নিয়ে ঘোরাফেরা করছে না। আমরা বিশেষ প্রয়োজনে গ্রামের বাইরে গেলেও সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে ঢুকে পড়ছি।”

গ্রামে ঢোকার মোরাম রাস্তার শুরুতেই মণ্ডলবাড়ে রয়েছে পুলিশ পিকেট। গ্রামের পথে ঢুকতে গেলে পুলিশের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। গ্রামের মধ্যেও ঝোপের আড়াল থেকে পুলিশি নজরদারি চলছে। গত কালীপুজোর সময় ক্লাবের জন্য রাম-রঞ্জনের কারখানা থেকে বাজি নিয়ে যাওয়ার সময় গাছবোমা ফেটে ডান হাতের বুড়ো আঙুল বাদ গিয়েছিল গ্রামের যুবক অরিন্দম মাইতির। তাঁর ক্ষোভ, “পুলিশি ঘেরাটোপে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বেরোতে পারছে না। গ্রামে ঢুকতে-বেরোতে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে।” এর পরেই অরিন্দমের আক্ষেপ, “আমার দুর্ঘটনার পর গ্রামবাসীরা যদি একজোট হয়ে বাজি কারখানা উঠিয়ে দিত তা হলে আর এ দিন দেখতে হত না।’’

পিংলা বিস্ফোরণের পরে বেআইনি বাজির কারবার রুখতে শুরু হয়েছে পুলিশি অভিযান। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতিটি থানাকে বেআইনি বাজি কারবারে জড়িতদের ধরপাক়ড়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে বেলদার গুড়দলা ও বড়মোহনপুরে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ওই এলাকাতেই ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লোচন দাস অধিকারীর কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল স্থানীয় দুই শ্রমিকের। ধৃত লোচন অবশ্য কিছুদিন পরেই জামিন পেয়ে যান। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কালীপুজোর সময় থেকেই পের শুরু হয় তাঁর শব্দবাজির কারবার। এত দিন পুলিশ কিছু না করলেও শনিবার লোচন দাস অধিকারী, দেবব্রত দাস অধিকারী, লক্ষ্মীকান্ত দাস অধিকারীর বাড়িতে হানা দিয়ে প্রচুর শব্দবাজি ও বাজির মশলা বাজেয়াপ্ত করা হয়। তবে কারখানার মালিকদের পাওয়া যায়নি বলে দাবি বেলদা থানার পুলিশের। নারায়ণগড়ের কোতাইগড় ও সোনামুইয়ে বাজি কারখানায় হানা দিয়ে বাজি উদ্ধারের পাশাপাশি সুশান্ত বেরা নামে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ডেবরা থানার মলিঘাটির বাসুদেবপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় বেআইনি বাজির কারবারে যুক্ত সুশান্ত দোলুই, মহাদেব দোলুই ও শুকদেব দোলুইকে। ৩৩কেজি শব্দবাজি উদ্ধার করা হয়। অভিযান চলেছে পিংলার পাশের ব্লক সবংয়েও। ভেমুয়া বাজারের দু’টি দোকান থেকে শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। দোকান দু’টির মালিক গৌরী পাল ও অজিত মাইতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Debmalya Bagchi pingla blast police cid mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy