Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লাভের জন্য ঝুঁকি, আবার অপমৃত্যু ঠিকা চাষির

গত দু’সপ্তাহে তিন ঠিকা-চাষির অপমৃত্যুর সাক্ষী হল পূর্ব বর্ধমান। ২৩ এপ্রিল শিলাবৃষ্টি-ঝড় এবং পরে কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে জেলায় বড়সড় ক্ষতির মুখে বোরো ধান চাষ। আর এই ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে না পেরেই ভাতারে দু’জন চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি পরিবারের।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

গত দু’সপ্তাহে তিন ঠিকা-চাষির অপমৃত্যুর সাক্ষী হল পূর্ব বর্ধমান। ২৩ এপ্রিল শিলাবৃষ্টি-ঝড় এবং পরে কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতে জেলায় বড়সড় ক্ষতির মুখে বোরো ধান চাষ। আর এই ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে না পেরেই ভাতারে দু’জন চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি পরিবারের। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন: বর্ধমান ২ ব্লকের করুরি গ্রামের কার্তিক মণ্ডল (৭০)। গত মঙ্গলবার বাড়ির কাছেই গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন তিনি। উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও শুক্রবার রাতে মারা যান বৃদ্ধ।

প্রশাসন বা পুলিশের কর্তারা তিনটি আত্মহত্যাকেই সরাসরি চাষে ক্ষতির জের বলে মানতে নারাজ। তবে প্রশাসনের অন্দরে আলোচনা হচ্ছে বোরো মরসুমে ঠিকা-চাষিদের ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা নিয়ে। কর্তাদের একাংশের দাবি, বোরো মরসুমে (‌ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস) ঝড়-জলে চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা মাথায় রেখেও বেশি লাভের আশায় ফাটকা খেলেন অনেক চাষি, যার ফল ভাল হয় না। কার্তিকবাবুর আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে বিডিও-র কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব।

কার্তিক মণ্ডলের নিজস্ব জমি দেড় বিঘা। সাড়ে আঠারো বিঘা জমি ঠিকা নেন। তাঁর ছেলে সোনা মণ্ডল জানাচ্ছেন, জমির মালিকদের বিঘা প্রতি ১,৭০০ টাকা ও ২২০ কেজি ধান দেওয়ার মৌখিক চুক্তি হয়। মহাজনের কাছে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন কার্তিকবাবু। তাঁর জমিতে ধান পেকেও উঠেছিল। সোনাবাবুর আক্ষেপ, ‘‘যেটুকু ধান জমিতে পড়ে রয়েছে, তা তুলতে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু টাকা হাতে না থাকায় বাবা ভেঙে পড়েন!’’

প্রশাসনের হিসেবে দুর্যোগে জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কার্তিকবাবুর মতো বহু ঠিকা-চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অথচ, ঠিকা-চাষিরা সরকারি ঋণ নিতে বা ফসলের বিমা করাতে পারেন না। ক্ষতিপূরণও পান না। তা হলে কেন ঝুঁকি নেওয়া?

ঠিকা-চাষিরা জানাচ্ছেন, আমন মরসুমে ২০ বিঘা জমি চষে আয় হয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। বোরো মরসুমে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ হয় বলে একই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকার ধানের আশা থাকে। ঝড়-বৃষ্টিতে ফলনের ৫০ শতাংশ ক্ষতি হলেও ততটা সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় ক্ষতির মাত্রা বাড়লে। ভাতারে এ বার তা ৯২ শতাংশ, বর্ধমান ২ ব্লকে ৯০ শতাংশের বেশি।

এই পরিস্থিতিতে জেলার মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের দাওয়াই, ‘‘কৃষি সমবায়গুলি ভূমিহীন চাষিদের জন্য ‘জয়েন্ট লায়াবিলিটি গ্রুপ’ তৈরি করে নাবার্ডের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে।” তবে কৃষি সমবায়গুলি জানাচ্ছে, ‘মৌখিক ঠিকা-চাষি’দের (ওরাল লেসি) ঋণ পেতে হলে যে ফর্ম পূরণ করতে হয়, সেখানে জমি মালিকদের একাংশ ঠিকা-চাষির নাম লেখায় আপত্তি জানান। তাঁদের অনেকের ধারণা, ঋণপত্রে নাম উঠলে সংশ্লিষ্ট চাষির পরবর্তী কালে ওই জমির বর্গাদার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ফলে, সরকারি সহায়তার বৃত্তে ঠাঁই পান না ঠিকা-চাষিরা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের আশ্বাস, ‘‘ভূমিহীন চাষিদের কী ভাবে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Loss
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE