Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছি না, ক্ষোভ বাড়ছে দুর্গতদের

পর্যাপ্ত খাবার কবে পাব বলতে পারেন? ​প্রশ্নটা ধেয়ে এল পান্ডুয়ার তিন্না উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তিন্না গ্রাম এখন চলে গিয়েছে জলের তলায়।জেগে রয়েছে শুধু ওই স্কুল। সেখানেই ত্রাণ শিবির করেছে প্রশাসন। আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৪০০ জন দুর্গত। শুক্রবার দুপুরে সেই স্কুলে গিয়েই শোনা গেল ওই প্রশ্ন আর প্রশাসনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ। ওই শিবিরেই আশ্রয় নেওয়া বাণীকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘জলের তোড়ে বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। এখানে খুব কষ্টে আছি। ঠিকমতো খাবার পাচ্ছি না। পানীয় জলেরও অভাব রয়েছে।’’

পান্ডুয়ার তিন্না গ্রামে দুর্গতদের অভিযোগ শুনছেন মহকুমাশাসক। ছবি: সুশান্ত সরকার।

পান্ডুয়ার তিন্না গ্রামে দুর্গতদের অভিযোগ শুনছেন মহকুমাশাসক। ছবি: সুশান্ত সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

পর্যাপ্ত খাবার কবে পাব বলতে পারেন?
প্রশ্নটা ধেয়ে এল পান্ডুয়ার তিন্না উচ্চ বিদ্যালয় থেকে।
তিন্না গ্রাম এখন চলে গিয়েছে জলের তলায়।জেগে রয়েছে শুধু ওই স্কুল। সেখানেই ত্রাণ শিবির করেছে প্রশাসন। আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৪০০ জন দুর্গত। শুক্রবার দুপুরে সেই স্কুলে গিয়েই শোনা গেল ওই প্রশ্ন আর প্রশাসনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ।
ওই শিবিরেই আশ্রয় নেওয়া বাণীকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘জলের তোড়ে বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। এখানে খুব কষ্টে আছি। ঠিকমতো খাবার পাচ্ছি না। পানীয় জলেরও অভাব রয়েছে।’’ অনিতা বারুইয়ের ক্ষোভ, ‘‘গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। শৌচাগারের অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার কবে পাব?’’
একটানা বৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলে কয়েক দিন ধরেই হুগলির আরামবাগ, খানাকুল, পুড়শুড়া, তারকেশ্বর, হরিপাল, জাঙ্গিপা়ড়া, ধনেখালি, বলাগড়, পোলবা-দাদপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। শতাধিক ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। তাঁদের অভিযোগ, যে টুকু ত্রাণ আসছে, তা অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ ত্রাণ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। জাঙ্গিপাড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই ব্লকে ৪৫টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। প্রায় সাত হাজার মানুষকে এই সকল ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। হরিপালে খোলা হয়েছে ৪০টি ত্রাণ শিবির। সেখানেও কয়েক হাজার মানুষ মাথা গুঁজে রয়েছেন। একই পরিস্থিতি তারকেশ্বরেও।

কিন্তু সর্বত্রই শোনা গিয়েছে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ। বিজেপির পক্ষ থেকে এ দিন জেলাশাসকের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ, ত্রাণ বিলিতে দলবাজি বন্ধ করা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশাসনিক তৎপরতার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, ‘‘পরিস্থিতির দিকে প্রশাসন নজর রয়েছে। সবর্ত্রই ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে।’’

দুর্গতদের দাবি, প্রশাসনিক আধিকারিকরা যেন দাঁড়িয়ে থেকে সমান ভাবে ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা করেন। মহাকুমাশাসক (সদর) সুদীপ সরকার এবং পান্ডুয়ার বিডিও নবনীপা সেনগুপ্ত এ দিন জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। ত্রাণ শিবিরে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। শিবিরে আশ্রয় নেওয়া লোকজন তাঁদের কাছেও ক্ষোভের কথা জানান। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। ত্রিপল এবং খাবার সরবাহ করা হচ্ছে। সবাই যাতে ত্রাণ পান, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। কোনও রকম রোগ যাতে না ছড়ায় সে দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।’’

জাঙ্গিপাড়ার অযোধ্যা গ্রামের বেশ কিছু মানুষ এলাকারই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঠাঁই নিয়েছেন। ইয়াসিন খান নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘এইটুকু স্কুলে এত মানুষ একসঙ্গে থাকা দুষ্কর। তার উপর খাবারদাপার পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে না।’’ শেখ মাসুদ নামে আর এক গ্রামবাসীর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনের লোক এসে ঘুরে গিয়েছেন। কিন্তু ত্রাণ যতটা দরকার, দেওয়া হচ্ছে না। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা তো করতে হবে!’’

জাঙ্গিপাড়ার বিডিও সুদীপ্তনারায়ণ ওঝা অবশ্য বলেন, ‘‘সব মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি। সর্বত্র ত্রাণও বিলি করা হয়েছে। আরও ত্রাণের জন্য বলা হয়েছে। তা এলে প্রয়োজন অনুযায়ী বিলি করা হবে।’’

ত্রাণের জন্য একই রকম হাহাকার শোনা গিয়েছে জেলার অন্যত্রও।

হাওড়াতেও এ দিন প্লাবিত এলাকাগুলি থেকে জল নামেনি। ফলে, মানুষের দুর্ভোগ কমেনি এতটুকুও। আমতা-২ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এককমাত্র ‘দ্বীপাঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত ভাটোরা এবং ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান পঞ্চায়েত এলাকায় বৃষ্টির জলের পাশাপাশি ডিভিসি-র ছাড়া জলও ঢুকেছে। ফলে্, গোটা দ্বীপাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে বর্তমানে নৌকা এবং ডোঙাই ভরসা। ফলে, সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ত্রিপল ছাড়া এখনও কোনও ত্রাণ মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE