Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্যাকেজ ভেঙে পকেট কাটছে ডাক্তারের খাঁই

মুনাফা সর্বাধিক যতটা রাখা সম্ভব, তা রেখেই অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নির্দিষ্ট প্যাকেজ ঠিক করে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, তার বাইরেও মোটা অঙ্কের টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে রোগী বা তাঁর আত্মীয়দের পকেট থেকে। আর এই বাড়তি টাকার বেশিটাই দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পারিশ্রমিক হিসেবে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

মুনাফা সর্বাধিক যতটা রাখা সম্ভব, তা রেখেই অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নির্দিষ্ট প্যাকেজ ঠিক করে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা, তার বাইরেও মোটা অঙ্কের টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে রোগী বা তাঁর আত্মীয়দের পকেট থেকে। আর এই বাড়তি টাকার বেশিটাই দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পারিশ্রমিক হিসেবে।

কোনও রোগের চিকিৎসার জন্য যে-দর বাঁধা থাকে, সেই ‘প্রেফার্ড প্রোভাইডার নেটওয়ার্ক’ বা সংক্ষেপে ‘পিপিএন’ প্যাকেজের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিমা রয়েছে, এমন রোগীর নিখরচায় চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু বিমা সংস্থার কর্তা, হাসপাতাল-কর্তা, বিমার ‘থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ (টিপিএ)— প্রত্যেকেই স্বীকার করছেন, নানান ফাঁকফোকর গলে রোগীর পকেট থেকে অতিরিক্ত অনেক টাকাই বেরিয়ে যায়, যা বিমা সংস্থা পূরণ করে না।

অর্থাৎ মাসে মাসে স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের টাকা গুনলেও রোগী এই বাড়তি ব্যয়ের থাবা এড়াতে পারেন না। চিকিৎসাও আর ‘ক্যাশলেস’ থাকে না। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অতিরিক্ত টাকা খরচের কারণ হল চিকিৎসকের ফি। অভিযোগ, বহু চিকিৎসক পিপিএন প্যাকেজের বাইরে আলাদা টাকা চাইছেন রোগী-পক্ষের কাছে। চিকিৎসায় যাতে কোনও সমস্যা না-হয় এবং পছন্দের চিকিৎসক যাতে হাতছাড়া না-হয়, সেই জন্য রোগী-পক্ষও রাজি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই বাড়তি টাকা বিমা সংস্থা পরে ‘রিইমবার্স’ করছে না অর্থাৎ মিটিয়ে দিচ্ছে না।

বেসরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসার খরচ বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে এখন চিন্তাভাবনা করছে সরকার। চিকিৎসক থেকে শুরু করে টিপিএ এবং রোগীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত সংস্থা— প্রত্যেকেরই বক্তব্য, প্যাকেজ ঠিক করার সময়ে এই ধরনের সম্ভাব্য ফাঁকগুলি বন্ধ করার উপায় খুঁজতে হবে সরকারকে।

একটি টিপিএ সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান শমিতা পাল, টিপিএ সংস্থার কর্মী দেবমাল্য বসুরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক ডাক্তার রয়েছেন। মূলত তাঁদের নাম দেখেই রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসেন। পছন্দের চিকিৎসকের আওতায় কেউ হয়তো কোনও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেন এবং জানালেন, তাঁর মেডিক্যাল বিমা রয়েছে। তখন তাঁকে একটি প্যাকেজ দেওয়া হল। কিন্তু চিকিৎসক বেঁকে বসে জানালেন, এই প্যাকেজে হাসপাতাল তাঁর ফি ধরেছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। এত কম টাকায় তিনি অস্ত্রোপচার করতে পারবেন না। তাঁর লাগবে ২৫ হাজার টাকা। রোগী-পক্ষ আলাদা করে সেটা না-দিলে তিনি অস্ত্রোপচার করবেন না। ওই নির্দিষ্ট চিকিৎসককে দিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে মরিয়া হয়ে বেশির ভাগ লোক টাকা দিয়ে দেন।

টিপিএ-রা বিষয়টি অনেক বার পিপিএন কমিটিকে জানিয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি। পিপিএন কমিটির অন্যতম সদস্য সৌরভ কারিওয়ালার বক্তব্য, বিমা সংস্থাগুলির উপরে নজরদারির সংস্থা আছে। নজরদারি হয় হাসপাতালের উপরেও। কিন্তু ডাক্তারদের উপরে নজরদারি চালাবে কে? মেডিক্যাল কাউন্সিল তো দেখবে শুধু চিকিৎসায় গাফিলতি হলে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক ডাক্তার প্যাকেজের বাইরে টাকা নিয়ে রসিদ দেন না।
যাঁরা দেন, তাঁরাও বলেন, রোগী-পক্ষের সম্মতি নিয়েই টাকা নিয়েছেন। ফলে তাঁদের রাশ টানা যাচ্ছে না।’’

রঞ্জন কামিল্যা, রূপম শীল, জেমি দাশগুপ্তের মতো অনেক চিকিৎসকের বক্তব্য, প্যাকেজ ঠিক করার সময়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে না। এ ভাবে চললে বেশির ভাগ ডাক্তার পিপিএন প্যাকেজের কাজ করতে চাইবেন না। ‘‘রোগীর বাড়ির লোক রাজি হলে তবেই ডাক্তারেরা বাড়তি টাকা নেন। টাকা দেওয়ার পরে অনেক রোগী-পক্ষ ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে। এটা অন্যায়,’’ বলছেন ওই চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE