Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আরাবুলের চাপেই সাদা কাগজে সই, মানছেন সেই বাপনের মা-ও

সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ভাঙড়ে নিহত বাপন মণ্ডলের মা চৈতালিদেবী সোমবার নিজের মুখেই স্বীকার করলেন কথাটা। খোলাখুলি বললেন, আরাবুল ইসলামের নির্দেশেই পুলিশ তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়েছে। শনিবার ভাইফোঁটার সকালে ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামের অনুগামীরা তৃণমূলেরই আর একটি গোষ্ঠীর উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। রমেশ ঘোষাল নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করার পরে আততায়ীরা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান পাঁচু মণ্ডলের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল।

বাপন মণ্ডলের মা চৈতালিদেবী।  বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

বাপন মণ্ডলের মা চৈতালিদেবী। বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। ভাঙড়ে নিহত বাপন মণ্ডলের মা চৈতালিদেবী সোমবার নিজের মুখেই স্বীকার করলেন কথাটা। খোলাখুলি বললেন, আরাবুল ইসলামের নির্দেশেই পুলিশ তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়েছে।

শনিবার ভাইফোঁটার সকালে ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামের অনুগামীরা তৃণমূলেরই আর একটি গোষ্ঠীর উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। রমেশ ঘোষাল নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করার পরে আততায়ীরা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান পাঁচু মণ্ডলের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল। পাঁচু পালিয়ে যান। তাঁকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলি গায়ে লেগে আক্রমণকারীদের দলেরই একটি যুবক, বাপন মণ্ডল মারা যান বলে এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন। পাঁচুবাবুর নিজেরও তা-ই অভিযোগ। কিন্তু কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ বাপনের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে পাঁচু মণ্ডল এবং তাঁর দুই ছেলেকেই।

প্রশ্ন উঠেছে যে উলটপুরাণে আক্রান্তই পাকড়াও হয়ে গেলেন, বাপনের মা চৈতালিদেবী কি নিজে থেকে তেমন অভিযোগ এনেছিলেন? পুলিশের একটি সূত্রে খবর মিলেছিল, শনিবার বিকেলে আরাবুলের লোকজনই চৈতালিদেবীকে থানায় নিয়ে এসে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয়। পরে ওই কাগজে পাঁচুবাবুদের নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ লিখে দেন বামনঘাটা এলাকার এক যুব তৃণমূল নেতা। এ দিন চৈতালিদেবী নিজেও একই কথা বললেন। স্পষ্ট জানালেন, আরাবুল থানায় বসে পুলিশের সামনেই সবটা হাতেকলমে করিয়েছেন।

চৈতালিদেবী সোমবার বলেন পাঁচু মণ্ডল ও তাঁর ছেলেদের বিরুদ্ধে তিনি কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। আরাবুল ও লোকজনেরা পুলিশের সামনেই তাঁকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিজেদের মতো করে অভিযোগ লিখেছে। শোকার্ত মায়ের কথায়, “আমি শুধু কাগজে সই করেছি। আরাবুলের অনুগামীরাই ওই অভিযোগপত্র লিখেছিলেন। অভিযোগপত্রে পাঁচু মণ্ডল ও তাঁর দুই ছেলে বাপনকে গুলি করে খুন করেছে বলে লেখা হয়েছে। এটা আমরা জানতাম না।”

ঠিক একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে নিহত রমেশ ঘোষালের পরিবারের মুখেও। রমেশবাবুর স্ত্রী আশাদেবীর অভিযোগ, শনিবার তাঁরা যখন থানায় যান, পুলিশের সঙ্গে বসেছিলেন আরাবুল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবার কোনও সুযোগই দেয়নি পুলিশ। তাঁদের একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। রমেশের সম্পর্কিত ভাই রঞ্জিতবাবুর অভিযোগ, পাঁচু মণ্ডলের নামে অভিযোগ লেখার জন্য তাঁদের উপরেও চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা রাজি না হয়ে আরাবুলের নাম লিখতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সাদা কাগজে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির গুলিতে রমেশবাবুর মৃত্যু হয়েছে বলে লিখেছে পুলিশ। এর পরেই প্রাণের ভয়ে ভাঙড় ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন আশাদেবী ও তাঁর মেয়ে।

শনিবার ভাঙড়ে খুনোখুনির পরেই এলাকাবাসীর বড় অংশের অভিযোগ ছিল, ঘটনার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কারণ ভাঙড়ে এখনও আরাবুল ইসলামকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হয়নি পুলিশের। ঘটনার পরে আরাবুল থানায় বসে চা-বিস্কুট খেতে খেতে পুলিশের উপরে খবরদারি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ দিন আরাবুলেরই অনুগামী, নিহত বাপনের মায়ের কথায় তাতেই সিলমোহর পড়ল। বিরোধীদের বক্তব্য, বারবারই প্রমাণিত হচ্ছে, আরাবুল যেমন চেয়েছেন, ঠিক তেমনই করেছে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা বলে তিনি অবশ্য দাবি করেন, “আমার কাছে কেউ এ রকম অভিযোগ করেননি।”

আরাবুল নিজে? তিনি আছেন খোশ মেজাজেই। এ দিন পঞ্চায়েত সমিতির অফিসেও যান। আরাবুলের ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতা বলেন, “দাদা রবিবার বিকেল পর্যন্ত খুব বিচলিত ছিলেন। খবর এসেছিল, শনিবারের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নাকি রুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু গত কাল (রবিবার) রাত থেকে স্বাভাবিক তিনি।” চৈতালিদেবীর বক্তব্য নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া? আরাবুল বলেন, “সব মিথ্যে অভিযোগ। বাপন আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। তাই ওর পরিবারকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম। এখন বাপনের মা-ও আমার বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE