Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ক্ষমা চাইতে পারেন আরাবুল

দলনেত্রীর কাছে ক্ষমা চাইবার কথা ভাবছেন তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা আরাবুল ইসলাম, অন্তত তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের একটি সূত্র জানাচ্ছে এমনটাই। ভাঙড়ে জোড়া খুনের তদন্ত যে পথে এগোচ্ছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে যা ইঙ্গিত মিলছে, সর্বোপরি দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে এখন কিছুটা হলেও ‘ব্যাকফুটে’ ভাঙড়ের এক সময়ে তৃণমূলের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এক রাজ্য নেতার পরামর্শ মতোই ‘দাদা’ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এ বারের মতো ক্ষমা চাইতে পারেন বলে আরাবুলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে।

আরাবুল ইসলামের সমর্থনে মিছিল। বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের নতুনহাট থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত। রয়েছেন আরাবুলের ভাই খুদেও (কালো জামা)। সামসুল হুদার তোলা ছবি।

আরাবুল ইসলামের সমর্থনে মিছিল। বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের নতুনহাট থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত। রয়েছেন আরাবুলের ভাই খুদেও (কালো জামা)। সামসুল হুদার তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩৪
Share: Save:

দলনেত্রীর কাছে ক্ষমা চাইবার কথা ভাবছেন তৃণমূল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতা আরাবুল ইসলাম, অন্তত তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের একটি সূত্র জানাচ্ছে এমনটাই।

ভাঙড়ে জোড়া খুনের তদন্ত যে পথে এগোচ্ছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে যা ইঙ্গিত মিলছে, সর্বোপরি দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে এখন কিছুটা হলেও ‘ব্যাকফুটে’ ভাঙড়ের এক সময়ে তৃণমূলের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এক রাজ্য নেতার পরামর্শ মতোই ‘দাদা’ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এ বারের মতো ক্ষমা চাইতে পারেন বলে আরাবুলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে।

মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ছ’বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হল আরাবুল ও তাঁর এক অনুগামী, ভাঙড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গির খান চৌধুরীকে। ওই রাত থেকেই কার্যত নিজেকে ঘরবন্দি রেখেছেন আরাবুল। বৃহস্পতিবারও বাড়ির বাইরে বেরোননি। খুব কাছের লোক ছাড়া কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও ধারেকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছে না।

আরাবুল ঘনিষ্ঠেরা এর আগে জানিয়েছিলেন, ‘দাদা’র নির্দেশ, সব সময় যেন বাড়ির বাইরে দলের ছেলেরা ভিড় করে থাকে। বুধবার লোকজন চোখে পড়লেও ভিড় কিছুটা হলেও ফিকে হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙড়ের নতুনহাট থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত মৌনী মিছিল করেন আরাবুল অনুগামীরা। তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে পোস্টার ছিল তাঁদের হাতে। শ’পাঁচেক লোক হয়েছিল। তবে তৃণমূলের পতাকা ছিল না। মিছিলে স্থানীয় কোনও বড় নেতাকেও চোখে পড়েনি। মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন আরাবুলের ভাই আজিজুল ইসলাম ওরফে খুদে। বৈদিক ভিলেজ কাণ্ডে যাঁর বিরুদ্ধে কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে জমি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

সদ্য বহিষ্কৃত নেতার অনুগামীদের কয়েক জনের থেকে এ দিন জানা গেল, ঘরবন্দি থেকে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন আরাবুল। তাঁরই এক অনুগামীর কথায়, “দাদা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখবেন বলে স্থির করেছেন। এ বারের মতো ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি এক অনুগামীর মাধ্যমে ওই চিঠি পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।” এক রাজ্যনেতার কথায় আরাবুল এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানালেন ওই অনুগামী।

তাঁর কথায়, “ওই নেতা বুঝিয়েছেন, দাদার উপরে মুখ্যমন্ত্রীর কিছুটা দুর্বলতা ছিল। যদি চিঠি পাওয়ার পরে বরফ গলে, এই আর কী! তা ছাড়া, এখনও পর্যন্ত বহিষ্কারের কোনও চিঠি দলের তরফে দাদার কাছে পাঠানো হয়নি। সে কারণে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক।” ওই অনুগামী আরও জানান, একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত রদ করতে পারেন, অন্য কেউ নন তা আরাবুলকে বুঝিয়েছেন ওই রাজ্য নেতা। বুধবার রাতে কয়েক জন অনুগামী তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ভোরে সটান কালীঘাটে গিয়ে দিদির পায়ে পড়ে যেতে। কিন্তু ওই রাজ্যনেতাই দাদাকে বোঝান, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী আরও রুষ্ট হতে পারেন। কারণ, বৃহস্পতিবার সকালেই তিনি সাগরে যাচ্ছেন। কয়েক দিন সরকারি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকবেন। চিঠি পাঠানোটাই এখন সঠিক পদক্ষেপ হবে।

আরাবুল-ঘনিষ্ঠ একটি মহল থেকে জানা গেল, বৃহস্পতিবার সকালে কয়েক জন অনুগামীর উপরে বেশ চটেছেন ‘দাদা’। তাঁর সব পরিকল্পনা, অন্দরমহলের সব ছক বাইরে চলে যাচ্ছে কী ভাবে, তা নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তাঁর ভাবনা-চিন্তা দলেরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কানে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন সকালে সাক্ষাৎ প্রার্থী অতি ঘনিষ্ঠ কয়েক জন অনুগামীর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আরাবুল। রেগেমেগে কয়েক জনকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেও বলেন। এক অনুগামীর কথায়, “দাদা এখন আরও সর্তক। সংবাদমাধ্যমের লোকজন তাঁর অনুগামীদের মাধ্যমে মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা করছেন উনি। সে কারণে দাদার ঘরে ঢোকার আগে বারান্দায় মোবাইল ফোন জমা রাখতে হচ্ছে। দাদার সঙ্গে কথা বলার সময়ে মোবাইল ব্যবহার করাই যাচ্ছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE